/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/05/cats-210.jpg)
৯ বছরে দেশের সমৃদ্ধির খতিয়ান পেশ বিজেপির, ২৪-এর লোকসভাকে সামনে রেখে প্রচারে জোর
নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের নয় বছর পূর্তি উপলক্ষে, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব শুক্রবার গত ৯ বছরে দেশের সমৃদ্ধির এক খতিয়ান তুলে ধরেছেন। কোভিড ভ্যাকসিন থেকে সেমি হাই স্পিড বন্দে ভারত, এমনকী উজ্জ্বলা যোজনার মধ্যে স্কিমের কথা ও তাতে উল্লেখ রয়েছে। সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক তিন দেশ সফরে বিশ্বনেতৃত্বের সামনে ভারতের ভাবমূর্তির কথাও উঠে এসেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের গলায়।
গত ৯ বছরে মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য মোদী সরকার একাধিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে রয়েছে ‘উজ্জ্বলা যোজনা’। ৯ বছরে ১৭ কোটি গ্যাস সংযোগ।
মহিলাদের কথা মাথায় রেখে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা (PMUY) চালু করা হয়। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে দেশের ৮ কোটি পরিবারকে গ্যাস সংযোগ প্রদান করা। সুযোগ বাড়ানোর জন্য, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা 2.0 শুরু হয়।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ৯ বছরে, এই প্রকল্পের অধীনে ১৭ কোটি এলপিজি গ্রাহক নতুন এলপিজি সংযোগ নিয়েছেন। ২০১৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সক্রিয় এলপিজি গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১৪.৫২ কোটি, যা গত ৯ বছরে বেড়ে হয়েছে ৩১.২৬কোটি।
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা: মেয়েদের শিক্ষা ও বিবাহের জন্য তহবিল
সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, ২০১৪ সালে শুরু হয়। এটি একটি সঞ্চয় প্রকল্প। এর জন্য অভিভাবকরা ১০ বছরের কম বয়সী শিশু কন্যার জন্য একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। ৯ বছর আগে যখন এই স্কিমটি শুরু হয়েছিল, তখ্ন সুদের হার ছিল ৯.১%, কিন্তু ২০১৫ সালে তা বাড়িয়ে ৯.২% করা হয়। বর্তমানে সুদের হার ৮%। স্কিম চালু করার সময় এর অনেক সুবিধার কথা বলা হয়েছিল। যেমন গ্যারান্টিযুক্ত রিটার্ন, ট্যাক্স সুবিধা এবং উচ্চ সুদের হার।
বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও: ভ্রূণহত্যা বন্ধ এবং শিশুকন্যাকে শিক্ষিত করার লক্ষ্য
হরিয়ানায় মেয়েদের জন্মের হার কমতে দেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৫ সালে বেটি বাঁচাও-বেটি পড়াও প্রকল্প শুরু করেন। এর লক্ষ্য হল ভ্রূণহত্যা নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি শিশুকন্যাকে শিক্ষিত করার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। পাশাপাশি তাদের বিয়ের জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে এই প্রকল্পে। দ্য হিন্দু-এর রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৬-২০১৯-এর মধ্যে, কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের তহবিলের ৮০ শতাংশ বিজ্ঞাপনে ব্যয় করেছে এই প্রকল্পটিকে দেশের প্রতিটি প্রান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য ।
বিনামূল্যে সেলাই মেশিন স্কিম: প্রতি রাজ্যে ৫০ হাজার মহিলাকে বিনামূল্যে মেশিন দেওয়ার পরিকল্পনা
মহিলাদের আর্থিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য, মোদী সরকার একটি বিনামূল্যের সেলাই মেশিন প্রকল্প নিয়ে আসে । এই প্রকল্পের অধীনে দেশের প্রতিটি রাজ্যে ৫০ হাজারের-এরও বেশি মহিলাকে বিনামূল্যে সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে যাতে শহর ও গ্রামীণ উভয় এলাকার মহিলারা এর সুবিধা নিতে পারেন। এর জন্য আবেদনের বয়স রাখা হয়েছে ২০ থেকে ৪০ বছর।
মাতৃত্বকালীন ছুটি:
কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কর্মরত মহিলাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। প্রকল্পের অধীনে কর্মরত মহিলারা মৃত সন্তান প্রসব অথবা জন্মের পরে সন্তানের মৃত্যু হলে ৬০ দিনের বিশেষ মাতৃত্বকালীন ছুটির ঘোষণা করে। এই আদেশে বলা হয়, জন্মের পরপরই শিশুর মৃত্যুর কারণে মহিলাদের মানসিক যে ক্ষত, তার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে ৬০ দিনের ছুটির বিধান রাখা হয়েছে।
মোদী সরকারের ৯ বছরের যাত্রাকে স্মরণীয় করে রাখতে বিজেপির মেগা পরিকল্পনা, রাজস্থানের আজমির থেকে প্রচার শুরু করবেন প্রধানমন্ত্রী। ২৬ মে মোদি সরকারের ৯ বছর পূর্ণ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের যাত্রাকে স্মরণীয় করে রাখতে বিজেপি একটি মেগা পরিকল্পনা করেছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে প্রচারের প্রস্তুতি। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ৯ বছরের পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, মোদীর সাম্প্রতিক তিন দেশ সফর বিশ্বের সামনে ভারতের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করার পাশাপাশি, ভারত আগামী দিনে কী ভাবছে তা জানতে বিশ্ব উৎসুক হয়ে রয়েছে। মোদী সরকারের আমলে বিশ্বমঞ্চে ভারত যে শক্তি ও সম্মান অর্জন করেছে তারও উল্লেখ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, নির্মলা সীতারামন, অশ্বিনী বৈষ্ণব, অনুরাগ ঠাকুর, স্মৃতি ইরানি এবং রাজীব চন্দ্রশেখর সহ বিজেপির সিনিয়র নেতা এবং একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
নরেন্দ্র মোদী ২৬ মে ২০১৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এই ৯ বছরের যাত্রাকে স্মরণীয় করে রাখতে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একটি মেগা প্রচারের পরিকল্পনা করেছে। এতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের খতিয়ান জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে। ৩১ মে রাজস্থানের আজমিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভার মাধ্যমে এই অনুষ্ঠান শুরু হবে। এর পাশাপাশি ‘কন্টাক্ট টু সাপোর্ট’ কর্মসূচিও চালু করা হবে।
৩১ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত চলা এই বিশেষ অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫১টি বড় জনসভা করার পরিকল্পনা তৈরি করেছে দল। যেখানে প্রায় ৮টি সভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। মোদী ছাড়াও অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা, যোগী আদিত্যনাথ, স্মৃতি ইরানি, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সহ অন্যান্য নেতারাও সমাবেশে ভাষণ দেবেন। বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া টিমও এই অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারের পরিকল্পনা করেছে।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের ৯ বছরের কাজের প্রচারের জন্য, বিজেপি হিন্দি, ইংরেজি ছাড়াও রাজ্যগুলির জন্য আঞ্চলিক ভাষায় প্রচারের পরিকল্পনা করেছে। বিজেপি সূত্র বলছে যে এই ৩০দিনের মধ্যে, প্রতিদিনের নতুন বিষয়বস্তু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৩১ মে আজমিরে একটি বড় সমাবেশের মাধ্যমে এক মাসব্যাপী প্রচারপর্বের প্রথম ধাপের শুভারম্ভ করবেন। পরিকল্পনা অনুসারে, ৩১ মে আজমিরে প্রধানমন্ত্রীর একটি বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন অনুষ্ঠানের একটি সংগীত পরিবেশন করা হবে। এই সঙ্গীতটি হবে পুরো মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের থিম সং। এই দিন, বিভিন্ন ভিডিও এবং বিষয়বস্তুর মাধ্যমে মোদী সরকারের সমস্ত বড় কাজের উপর বিভিন্ন প্রচার চালানো হবে।
এই প্রচারের সময় একটি বিশেষ ভিডিও সিরিজ চালানোর প্রস্তুতিও নিয়েছে বিজেপি। এর জন্য ৪টি ভিডিও সিরিজ চালানো হবে যাতে মোদী সরকারের ৯ বছরের সাফল্যকে তুলে ধরা হবে। তার মধ্যে যেমন রয়েছে ‘উজ্জ্বলা যোজনা’, তেমনই রয়েছে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বন্দে ভারত ট্রেনের যাত্রা। সেই সঙ্গে কোভিড ভ্যাকসিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে মোদীর নেতৃত্বে ভারত যে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে সেই সাফল্যের খতিয়ানও তুলে ধরা হবে।
একই সঙ্গে কোভিড কালে ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন বিতরণ, আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম জনস্বাস্থ্য পরিচর্যা কর্মসূচির খতিয়ানও এই সময়ের মধ্যে সাধারণের সামনে পেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে দলের। বিজেপি সরকারের গত ৯ বছরে দেশে ৭৪টি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণ করা হয়েছে।
৫৪হাজার কিমি জাতীয় সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি ১১১ টি জলপথ এবং ১৫টি শহরে মেট্রো রেল চালু করা হয়েছে সেই সঙ্গে ১৭টি বন্দে ভারত ট্রেন চালু করেছে মোদী সরকার। আগামী দিনে দেশের সব বড় শহরকে বন্দে ভারতের মাধ্যমে জোড়ার পরিকল্পনা রয়েছে মোদী সরকারের। ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে সম্মান দিয়ে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ, রাণসীতে কাশী বিশ্বনাথ করিডোর, উজ্জয়িনে মহাকাল লোক প্রকল্প-এর মত সাফল্যও দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি।