Advertisment

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ: নীরব কংগ্রেস, তবে হাত শিবিরের নেতাদের বিতর্ক জারি

রাশিয়ার আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে নানা মত। এই ইস্যুতে ভারতের অবস্থান নিয়েও মুখ খুলেছেন কংগ্রেস নেতারা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Arif Masood Congress mla madhyapradesh who is taking on his party again

নেতৃত্বের প্রশ্নে কংগ্রেসে বিতর্ক।

গত বৃহস্পতিবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কথা 'অবিলম্বে হিংসা বন্ধ' করার আবেদনও করেন। তবে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারসাম্যের নীতি বজায় রেখে রাষ্ট্রসংঘের ভোটাভুটিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত থেকেছে নয়াদিল্লি। রাশিয়ার এই আগ্রাসী নীতি ও ভারতের অবস্থান নিয়ে কংগ্রেস এখনও মুখ খোলেনি। তবে, শতাব্দীপার্চীন রাজনৈতিক দলটির নেতারা বিতর্ক করছেন। উঠে এসেছে পরস্পর বিরোধী মতামতও।

Advertisment

কংগ্রেস নেতৃত্বের একটি অংশ বিশ্বাস করে যে, নেহেরুযুগের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রকে ভারসাম্যমূলক অবস্থান নিতে হবে, এক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিবেচিত। অনেক নেতার যুক্তি যে, মস্কোর পদক্ষেপকে কোনও অনিশ্চিত শর্তে নিন্দা করা উচিত নয়। আবার হাত শিবিরের একাংশ মনে করেন যে, ভারত একটি বাঁধনে আটকে গিয়েছে। একদিকে নীতি এবং বাস্তববাদ, অন্যদিকে তার স্বার্থ বজায় রাখা। আপাতত সূক্ষ্ম দড়ির উপর দিয়ে হাঁটতে হবে দিল্লিকে।

আরও পড়ুন- Live: রুশ আক্রমণ জারি, প্রাণপণে প্রতিরোধ গড়ছে ইউক্রেনের সেনা ও জনগণ

প্রাক্তন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এবং কংগ্রেসের বৈদেশিক বিভাগের প্রধান আনন্দ শর্মা মূলত সরকারের নেওয়া অবস্থানের প্রতিধ্বনি করেছেন। তাঁর দলীয় সতীর্থ মণীশ তেওয়ারি অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন যে, সরকারের উচিত একটি স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া এবং রাশিয়াকে বলা যে ইউক্রেন আক্রমণে ভুল রয়েছে। তাঁর কথায় 'যখন বন্ধুরা ভুল করে, তখন সেটা তুলে ধরার দায়িত্ব বন্ধুদেরই।'

প্রাক্তন কূটনীতিক এবং লোকসভা সাংসদ শশী থারুরের যুক্তি, ভারতকে রাশিয়ার পদক্ষেপের নিন্দা করা উচিত, কারণ এটি আন্তর্জাতিক আইন এবং রাষ্ট্রসংঘের সনদ লঙ্ঘন করে।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আনন্দ শর্মা বলেছেন যে, 'আমরা শুধুমাত্র আমাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারি এবং অবিলম্বে হিংসা বন্ধ করার জন্য আবেদন জানাতে পারি। নাগরিকদের জীবন বাঁচাতে এবং মানবিক দুর্ভোগ কমাতে শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের কূটনৈতিক প্রক্রিয়া সক্রিয় করাপ্রয়োজন। তাঁর সংযোজন, 'রাশিয়া এবং ইউক্রেন উচিত আলোচনার টেবিলে বসা। অতীতের চুক্তির মেনে ও উদ্ভূত পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে সমস্যাগুলির সমাধান আলোচনার মাধ্যমে করা উচিত।'

আরও পড়ুন- ‘আগে থেকে যোগাযোগ ছাড়া ইউক্রেন সীমান্তে যাবেন না’, নোটিশ জারি ভারতীয় দূতাবাসের

তবে, রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে নয়াদিল্লির অবস্থান নিয়ে সরাসরি কিছু বলতে চাননি আনন্দ শর্মা। তাঁর কথায়, 'আমরা আর কী করতে পারি। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। রাশিয়া-ন্যাটো-র চুক্তি আছে, মিনস্ক চুক্তি আছে… চারটি চুক্তি রয়েছে। ন্যাটো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ও কয়েকটি লঙ্ঘন করছে।'

মণীশ তিওয়ারির কথায়, 'রাশিয়া প্রকৃতপক্ষে সময়ের সম্মানিত বন্ধু।তবে, কখনও এমন সময় আসে যখন আপনাকে বন্ধুদের হয় যে তারা ভুল করছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ আন্তর্জাতিক নীতির বিরুদ্ধাচারণ। এটি মিনস্ক চুক্তি, নরম্যান্ডি প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করেছে। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে স্থিতাবস্থা বা পরিবর্তনের প্রচেষ্টা, বা অন্য একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশকে দখল করার চেষ্টা সম্পূর্ণ ভুল এবং ভারতকে এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে।'

তিওয়ারি আরও বলেন যে, 'ঈশ্বর না করুন, যদি আমরা একই অবস্থানে থাকতাম এবং বিশ্ব থেকে সহায়তা চাইতাম, তাহলে যে বৈধ প্রশ্নটি উঠবেতা হল- ভারত কেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়ালো না? মনে রাখতে হবে একানে ইউক্রেন একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যারা চরম অত্যাচার, হিংসার শিকার হচ্ছে। উল্লেখ্য, কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি আটলান্টিক কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া কেন্দ্রের একজন বিশিষ্ট সিনিয়র ফেলো।

আরও পড়ুন- Explained: ইউক্রেন কি হতে পারবে ‘আগুনপাখি’, আন্দোলনের ভস্ম থেকে বারবার সে দেশের জেগে ওঠার কাহিনি, জানেন কি?

রাষ্ট্রসংঘের ভোটাভুটিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত থেকেছে নয়াদিল্লি। এরপরই তেওয়ারি বলেছেন যে, 'সরকার মাথা নোয়াচ্ছে। গত কয়েকবছরে আমেরিকান ঝুলিতে সব ডিম ঢেলে দিয়েছে ভারত, সেইসব মৌলিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হয়েছে যাতে আগে ইউপিএ সরকার স্বাক্ষর করেনি। কারণ তৎকালীন সময়ে লক্ষ্য ছিল কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের। কঠিন পরিস্থিতিতে সহজে আলোচনাচালাতেই সেদিকে নজর রাখা হয়েছিল।'

তিওয়ারির কথায়, 'সত্যি হল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর, মার্কিনিরা বিশ্বজুড়ে কীভাবে সেসব চুক্তির ব্যবস্থা করেছে তা ভালভাবে জেনেও… এই পরিস্থিতে মাথানত করা সত্যিই ভারতের সুবিধাজনক অবস্থানের নজির হিসাবে থেকে গেল।'

শশী থারুর বলেন, 'ভারত সার্বভৌম দেশের সীমান্তে লঙ্ঘন, বলপ্রয়োগ ও হিংসার নীতিকে ধারাবাহিকভাবে বিরোধিতা করেছে এবং আক্রমণকারী দেশগুলির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে। রাশিয়া ভারতের বন্ধু এবং তাৎক্ষণিক সীমান্তে মস্কোর নিরাপত্তা উদ্বেগ বোধগম্য, তবে এসব বিবেচনা করেও নয়াদিল্লির সব গুরুত্বপূর্ণ নীতিগুলি অনুসরণ করে নীরব থাকতে পারে না।'

যদিওরাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ নিয়ে কংগ্রেস অবস্থান প্রকাশ করেনি। সূত্র জানিয়েছে, 'আগ্রাসন এবং আক্রমণ এই প্রকৃতির বিরোধ সমাধানের উত্তর নয়' নীতিতেই হাত শিবির সর্বদা বিশ্বাসী।

Read in English

Russia-Ukraine Conflict CONGRESS Russia-Ukraine Row russia Ukraine Crisis
Advertisment