Cabinet Reshuffle: বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে দল ভাল ফল করেছে বিজেপি সেখানকার সাংসদদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছে। এবারেও বাংলা থেকে কেউ পূর্ণ মন্ত্রিত্ব পেলেন না। চারজনই প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন। কার্যত মূল দক্ষিণবঙ্গ শূন্য। উত্তরবঙ্গের ২ জন সাংসদ জন বার্লা ও নিশীথ প্রামাণিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান পেলেন। এবারে রাজ্যে বিজেপিকে চূড়ান্ত ভরাডুবি থেকে রক্ষা করেছে উত্তরবঙ্গ। অপরদিকে জঙ্গলমহলে সামগ্রিক ফল খারাপ হলেও বাঁকুড়া কিছুটা মান রেখেছে গেরুয়া শিবিরের। মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক বজায় রাখতে শান্তনু ঠাকুরকে মন্ত্রী করা ছাড়া বিজেপির উপায় ছিল না বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে মতুয়াদের নাগরিকত্ব প্রদান নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন খোদ বণগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। তাঁকে আশ্বস্ত করতে ঠাকুরবাড়িতে ছুটে গিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। শেষমেশ বিধানসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোট অনেকটাই অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হয়েছিল পদ্মশিবির। তার ফলে উত্তর ২৪ পরগনার একাংশ ও নদিয়ায় ভাল ফল করে বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের মতে, একদিকে মতুয়া সেন্টিমেন্ট অন্যদিকে ভোটের ফলের পুরস্কার। সেই কারণেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্থান মিলেছে শান্তনু ঠাকুরের। তাছাড়া মতুয়াদের দাবি অনুযায়ী এখনও নাগরিকত্ব প্রদানের কাজ শুরু হয়নি এরাজ্যে। আদিবাসী ও দলিত ভোট ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপি।
বণগাঁ ও বাঁকুড়ার সাংসদ মন্ত্রিসভায় স্থান পেলেও ব্রাত্য থেকে গিয়েছে মূল দক্ষিণবঙ্গ। গত বিধানসভা নির্বাচনে এখানে সব থেকে খারাপ ফল করেছে বিজেপি। কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব বর্ধমানে বিজেপির একজন প্রার্থীও জয় পায়নি। টালিগঞ্জে বড় ব্যবধানে হেরেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চলেও ফল আশানুরূপ হয়নি গেরুয়া শিবিরের। হুগলিতে সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় পরাজিত হয়েছেন। এই জেলাতেও ফল খারাপ হয়েছে বিজেপির। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, এসব কারণেই কি দক্ষিণবঙ্গের কোনও সাংসদ মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি? বাদ গেলেন বাবুল!
জঙ্গলমহলে লোকসভা নির্বাচনে সব আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভরসা ছিল বিধানসভা ভোটে সেখানে ভাল ফল করবে। কিন্তু মোটের ওপর বাঁকুড়া জেলা কিছুটা সম্মান রেখেছে। এখানকার সাংসদ সুভাষ সরকার মন্ত্রীত্ব পেয়েছেন।
কেন্দ্রীয় মন্রিত্বে এবারও বৃহত্তর অর্থে ব্যালান্স রেখেছে বিজেপি। উত্তরবঙ্গের দুজন ও দক্ষিণবঙ্গের দুজন। তার মধ্যে পৃথক রাজ্যের দাবিকে উসকে দেওয়া আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লাও আছেন। আবার দিনহাটা কেন্দ্র থেকে বিধানসভায় জয়ী কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকও মন্ত্রী হয়েছেন। উত্তরবঙ্গে ভাল ফল করলেও দক্ষিণ দিনাজপুরের জনগণ বিজেপিকে না-পসন্দ করার কথা ইভিএমে জানিয়ে দিয়েছে। রায়গঞ্জ থেকে সাংসদ হয়েছিলেন দেবশ্রী চৌধুরী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেন দুই মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরী। মন্ত্রী হলেন চারজন।
২০১৯-এ এরাজ্য থেকে ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১৮ টিতে জয় পেয়েছিল বিজেেপি। বাংলায় ওই প্রথম বিজেপি ভাল ফল করলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় মাত্র ২ জন স্থান পেয়েছিলেন। তা-ও আধা-মন্ত্রী। যা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বারে বারেই কটাক্ষ করত। অভিজ্ঞ মহলের মতে, বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের ভাবনায় ছিল অন্তত বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বাংলার সাংসদদের গুরুত্ব বাড়বে। হয় সংখ্যায় বাড়বে বা পূর্ণ মন্ত্রী হবেন কেউ। কোনটাই হয়নি। ২০২৪ লোকসভা ভোটকে লক্ষ্য রেখেই শেষমেশ সম্প্রসারণে এরাজ্যে মন্ত্রীত্বের সংখ্যা বাড়ল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন