এথিক্স কমিটির প্রধান তাঁকে ব্যক্তিগত ও অনৈতিক প্রশ্ন করেছে। এই অভিযোগে বুধবার লোকসভার এথিক্স কমিটিতে জবাবদিহির মাঝেই ওয়াকআউট করলেন তৃণমূলের কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। একা মহুয়াই নন, তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে এসেছেন এথিক্স কমিটির বিজেপি বিরোধী দলের অন্য সদস্যরাও।
লোকসভায় ঘুষের বদলে প্রশ্নকাণ্ডে বৃহস্পতিবার এথিক্স কমিটির জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মহুয়া মৈত্র। ঘন্টা তিনেক বৈঠকের পরই হঠাৎই দেখা যায় অ্যানেক্স ভবনের দোতলার সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত বেগে নামছেন তৃণমূল সাংসদ। খুবই উত্তেজিত তিনি। তাঁর একটু পরেই দেখা যায় লোকসভায় বহুজন সমাজ পার্টির সাংসদ দানিশ আলি, কংগ্রেসের সাংসদ এন উত্তম কুমার রেড্ডিদের।
মহুয়ারা কেন কমিটির বৈঠক ছাড়লেন? রাগে গজ গজ করতে করতে কৃষ্ণনগরের সাংসদ বলতে থাকেন 'এটা কী ধরনের বৈঠক? ওঁরা নোংরা প্রশ্ন করছেন। বলছেন আমার চোখে জল, আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন আমার চোখে জল রয়েছে?'
এরপরই কংগ্রেস সাংসদ এবং এথিক্স কমিটির সদস্য এন উত্তম কুমার রেড্ডি জানান, কমিটির প্রধান যেসব প্রশ্ন মহুয়া মৈত্রকে করছিলেন তা 'অসম্মানজনক এবং অনৈতিক' বলে মনে করে কমিটির বিজেপি বিরোধী সদস্যরা।
কী এমন ব্যক্তিগত প্রশ্ন সাংসদকে করা হয়েছিল? সূত্রের খবর, মহুয়া মৈত্র রাতে কোন হোটেলে ছিলেন, কার সঙ্গে কথা বলেছেন, এ ধরণের ‘ব্যক্তিগত ও অনৈতিক’ প্রশ্নও করেছিলেন এথিক্স কমিটির প্রধান বিনোদ সোনকর।
পাল্টা বিনোদ সোনকার বলেন, 'জিজ্ঞাসাবাদের সময় আচমকা রেগে গিয়ে অসংসদীয় শব্দ প্রয়োগ করেছিলেন মহুয়া মৈত্র। এরপরই তিনি উত্তেজিত হয়ে বেরিয়ে যান। ওঁকে সাথ দিয়েছেন কমিটির বিরোধী সদস্যরা। পুরোটা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ হবে।'
মহুয়া সহ কমিটির বিরোধী সদস্যদের এদিনের ওয়াকআউটকে 'নাটক' বলে দাবি করেছে শাসক দল বিজেপি।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে অভিযোগ, দুবাইয়ের ব্যবসায়ী হিরানন্দানীর থেকে টাকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করেছেন তিনি। আগাগোড়া সেই সব প্রশ্নের নিশানায় ছিলেন শিল্পপতি গৌতম আদানি। সেসব প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীকেও বেশ কয়েকবার আক্রমণ করা হয়েছিল। সোকসভার স্পিকারকে পুজোর আগে চিঠি লিখে এই অভিযোগ করেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। জয় আনন্দ দেহাদ্রাইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান নিশিকান্ত। এরপরই পুরো ঘটনা এথিক্স কমিটিকে যাচাইয়ের জন্য নির্দেশ দেন স্পিকার ওম বিড়লা। সেই মত কাজ শুরু করে এথিক্স কমিটি। গত ২৬ অক্টোবর বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত এবং আইনজীবী দেহাদ্রাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এথিক্স কমিটি। এরমধ্যেই ব্যবসায়ী হিরানন্দানীও দাবি করেন যে, তাঁরে লোকসভার পোর্টালের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন মহুয়া। বদলে অর্থ ও প্রচুর সুবিধা নিয়েছেন। যা অস্বীকার করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ।
এদিন ডাকা হয়েছিল মহুয়াকে। তার আগেই অবশ্য, এই অভিযোগের তদন্তে এথিক্স কমিটির এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল সাংসদ। গোটাটাই ফৌজদারি বিষয় বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর মুখ বন্ধ করতেই বিজেপির এহেন পদক্ষেপ বলে অভিযোগ তোলেন মহুয়া মৈত্র। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে মৈত্র বলেছিলেন, 'কোনও সাংসদ নিজের প্রশ্ন টাইপ করেন না। আমি তাঁকে (দর্শন) পাসওয়ার্ড দিয়েছি কারণ তাঁর অফিসের কেউ যাতে প্রশ্নটি লিখে আপলোড করতে পারে। এটা অপরাধ নয়।'