'গতকালই তৃণমূল সরকারের বর্ষপূর্তি। পরের দিনই বাংলায় খুন।' কাশীপুরে দলের যুবনেতার রহস্যমৃত্যুতে রাজ্যের শাসকদলকে বেনজির আক্রমণ মোদীর প্রধান সেনাপতি অমিত শাহের। 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এই হত্যাকাণ্ড। সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করানো উচিত।' খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই দাবি ঘিরে চর্চা তুঙ্গে। 'মিথ্যা রাজনীতিতে নিজেকে জড়াচ্ছেন অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এটা ওঁকে মানায় না।' পাল্টা সরব তৃণমূলও।
অমিত শাহের রাজ্য সফরের মাঝেই কাশীপুরে বিজেপি যুবমোর্চার রহস্যমৃত্যু ঘিরে তুলকালাম পরিস্থিতি তৈরি হয়। শুক্রবার সকালেই কাশীপুরে রেল কলোনির পরিত্যক্ত ঘর থেকে বিজেপি যুব মোর্চার নেতা অর্জুন চৌরাসিয়ার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। অর্জুনকে খুন করে দেহ ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ বিজেপির। তৃণমূলকেই নিশানা করেছে পদ্ম শিবির। যদিও গোটা ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে পাল্টা তোপ দেগেছে তৃণমূল।
দলের যুবনেতার মৃত্যুর খবর পেয়ে এদিন দুপুরেই কাশীপুরে যান অমিত শাহ। শুভেন্দু অধিকারীকে সঙ্গে নিয়েই দুপুরে কাশীপুরে পৌঁছোন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে ছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে শুরু করে কল্যাণ চৌবে, সুভাষ সরকার, রীতেশ তিওয়ারি সহ বিজেপির অন্য নেতারা।
কাশীপুরে পৌঁছে এদিন প্রথমেই অমিত শাহ যান পরিত্যক্ত সেই ঘরটিতে। সকালে এই ঘর থেকে বিজেপি যুব মোর্চার নেতা অর্জুন চৌরাসিয়ার দেহ উদ্ধার হয়। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে তুলোধনা করেছেন শাহ। তিনি এদিন বলেন, ''রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এই খুন। অর্জুন চৌরাসিয়া খুনের কড়া নিন্দা করছে বিজেপি। বিজেপি হিংসার রাজনীতিকে ভয় পায় না। আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি।''
বাংলায় বিরোধী দলগুলির উপর উপর্যুপরি অত্যাচার চলছে বলে তোপ দেগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ''বাংলায় বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। বামেদের চেয়েও ভয়ঙ্কর অবস্থা এখন।'' গতকালই তৃতীয় তৃণমূল সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। তার পরের দিনই বিজেপি নেতার রহস্যমৃত্যু বাংলায়। কাকতালীয় ঘটনা হলেও এই বিষয়টিকেই এদিন হাতিয়ার করেছেন শাহ।
এপ্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তোপ, ''গতকালই তৃণমূল সরকারের বর্ষপূর্তি। পরের দিনেই বাংলায় খুন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এই খুন। সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানো উচিত। গোটা দেশের মধ্যে বাংলাই একমাত্র রাজ্য যেখানে সম্প্রতি একসঙ্গে এতগুলি মামলার ভার সিবিআইকে দেওয়া হয়েছে। এটা প্রমাণিত যে বাংলায় আইনের রক্ষকদের প্রতি ভরসা নেই আদালতের।'' বিজেপি যুবনেতার রহস্যমৃত্যু নিয়ে রাজ্যের কাছে তাঁর মন্ত্রক রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে বলেও এদিন জানিয়েছেন অমিত শাহ।
অন্যদিকে, বিজেপি যুব নেতার রহস্যমৃত্যুতে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তোলায় গেরুয়া দলের পাল্টা সমালোচনায় সরব রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এদিন বলেন, ''পরিকল্পিত চিত্রনাট্য নয় তো? বিজেপির একটি মৃতদেহ দরকার ছিল। জোর করে এটিকে ইস্যু করছে বিজেপি। কারা মারল, কে মারল তদন্ত হওয়া দরকার। এই ঘটনার সহ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। মিথ্যা রাজনীতিতে নিজেকে জড়াচ্ছেন অমিত শাহ। সংকীর্ণ রাজনীতি করছেন উনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এটা ওঁকে মানায় না।''
এদিন বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে শুভেন্দু অধিকারীকে সঙ্গে নিয়ে কাশীপুরে গিয়েছিলেন অমিত শাহ। পরে সাংবাদিক বৈঠকের সময়েও শাহের পাশেই দেখা গিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে। শাহের পাশে শুভেন্দুর থাকা নিয়েও কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন কুণাল। এপ্রসঙ্গে তাঁর টিপ্পনি, '''নারদ মামলায় এফআইআরে শুভেন্দুর নাম রয়েছে। ওই লোকটাই ওনার পাশে। ওকে তো আগে গ্রেফতার করা উচিত। তাই অমিত শাহের মুখে সিবিআই তদন্তের কথা মানায় না। এই মৃত্যুর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নেই। বিজেপি ও অমিত শাহ নাটক করছেন।'