উত্তরাখণ্ড শীঘ্রই ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) কার্যকর করতে পারে। সূত্রের খবর, উত্তরাখণ্ডে রঞ্জনা দেশাইয়ের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি আগামী এক থেকে দুই দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির কাছে রিপোর্ট জমা দিতে পারে। দীপাবলির পরে উত্তরাখণ্ড বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন আয়োজনের সম্ভাবনা রয়েছে। ইউনিফর্ম সিভিল কোড বিল বিধানসভা অধিবেশনে পেশ করা হবে এবং একটি আইনের রূপ দেওয়া হবে।
বিজেপি বরাবরই দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আনার পক্ষে। গত বছর অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনের সময়, পুষ্কর সিং ধামি ঘোষণা করেছিলেন যে যদি বিজেপি সরকার আবার রাজ্যে ক্ষমতায় আসে, তবে তিনি রাজ্যে অভিন্ন দেওয়ালি নাগরিক বিধি প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনে জয়লাভের পর, ধামি সরকার ২৭ মে ২০২২-এ বিচারপতি রঞ্জনা প্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন। এ পর্যন্ত তিনবার এই কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে, বিজেপি আবারও ইউনিফর্ম সিভিল কোডের ইস্যুকে পুনরুজ্জীবিত করতে চায়। উত্তরাখণ্ডে এই আইন প্রয়োগ করা হলে কেন্দ্র এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বিজেপি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বাস্তবায়নকে বিজেপির কৃতিত্ব হিসাবে নির্বাচনে জাহির করতে পারবে। ইউসিসির রিপোর্ট পাওয়ার পর, ধামী সরকার হাউসে ইউসিসি উপস্থাপনের আগে আইন বিশেষজ্ঞদের মতামতও নিতে পারেন যাতে এটি বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা না হয়।
আরও পড়ুন : < নীতীশের মাস্টারস্ট্রোক…! গোলকধাঁধায় আটকে বিজেপি, বাড়তি অক্সিজেন ‘ইণ্ডিয়া’ জোটে >
কমিটি সাধারণ মানুষের মতামত চেয়েছিল
মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধমি বিধানসভা নির্বাচনের সময় রাজ্যে ইউসিসি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি একটি কমিটি গঠন করেছিলেন। কমিটি একটি অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে এই বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছিল। এরপর কমিটিতে প্রায় ২০ লাখ মানুষ তাদের পরামর্শ পাঠিয়েছিলেন। ইতোমধ্যে ইউসিসির খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
ধামি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন
উল্লেখ্য, পুষ্কর সিং ধামি গত মাসে ইউসিসি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে এক বৈঠক করেছিলেন। এই বৈঠকে উত্তরাখণ্ড ইউসিসি কমিটির চেয়ারপার্সন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিচারপতি রঞ্জনা দেশাই এবং অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
উত্তরাখণ্ডের মতো গুজরাটও ইউসিসি কার্যকর করার পথে এগিয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে যে গুজরাট সরকার লোকসভা নির্বাচনের আগে তার রাজ্যে ইউসিসি সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়ন করতে পারে।
UCC কি?
ইউনিফর্ম সিভিল কোড অর্থাৎ ইউসিসি মানে এক দেশ, এক আইন। দেশে ধর্মের মধ্যে বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তান দত্তক নেওয়ার নিয়ম, উত্তরাধিকার ও সম্পত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন রয়েছে। UCC বাস্তবায়িত হলে নাগরিক যে বর্ণ বা ধর্মেরই হোক না কেন সবার জন্য একটি আইন থাকবে।
রিপোর্টে অনুসারে জানা গিয়েছে কমিটি পৈতৃক সম্পত্তিতে লিঙ্গ সমতা এবং কন্যা সন্তানদের সমান অধিকারের ওপর জোর দিয়েছে। তবে মহিলাদের বিয়ের বয়স ২১ করার পক্ষে কোন পরামর্শ দেওয়া হয়নি ৷ কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে যে মহিলাদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর রাখা উচিত৷
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি আগেই বলেছিলেন যে কমিটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউসিসি বাস্তবায়িত হবে। "কমিটি যত তাড়াতাড়ি তার রিপোর্ট আমাদের কাছে জমা দেবে, আমরা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাব এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করব,"।
বিচারপতি দেশাই ছাড়াও কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন দিল্লি হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি প্রমোদ কোহলি, সমাজকর্মী মনু গৌর, প্রাক্তন মুখ্য সচিব ও আইএএস অফিসার শত্রুঘ্ন সিং এবং দুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরেখা দাঙ্গওয়াল।