Advertisment

বন্দে মাতরমের ব্যবহারই দেশভাগের জন্য দায়ী: অমিত শাহ

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির মতে, খিলাফত আন্দোলন, দ্বিজাতি তত্ত্ব বা ইংরেজ নীতি, এসব কিছুই দেশভাগের জন্য দায়ী নয়। অমিত শাহ্ সভায় জানালেন, তাঁর বদ্ধমূল ধারণা, দেশভাগের জন্য দায়ী বঙ্কিমরচিত বন্দেমাতরম ও তার ব্যবহার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Amit Shah at Intellectual meet in kolkata

এলেন বটে, তবে দলে ভিড়লেন না বুদ্ধদেব গুহ (ফোটো- জয়প্রকাশ দাস)

বাংলাভাষার সমসাময়িক এক সাহিত্যিক মঞ্চে বসে থাকলেন। বক্তব্য রাখার সুযোগ পেলেন না। আর বাংলাভাষার সম্ভাব্য প্রথম ঔপন্যাসিকের সাহিত্য নিয়ে চর্চা করে গেলেন এক গুজরাটি, সাহিত্য সমঝদার হিসেবে যাঁর যোগ্যতার কথা এখনও পর্যন্ত অবিদিত। বাংলার বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে ডাকা বিজেপির বালিগঞ্জের সভার  চুম্বক বলতে এটুকুই।

Advertisment

তবে বুধসন্ধ্যায় অমিত শাহের মুখে জানা গেল চমৎকৃত হওয়ার মত বিশ্লেষণ। দেশভাগের জন্য যে  বঙ্কিমরচিত বন্দেমাতরম ও তার ব্যবহার দায়ী, এ কথা সভায় জানালেন অমিত শাহ্। তাঁর অভিযোগ, বঙ্কিমের এই রচনাকে খণ্ডভাবে ব্যবহার করে তার ধর্মীয়করণ করেছে কংগ্রেস। অমিত শাহর মতে, খিলাফত আন্দোলন, দ্বিজাতি তত্ত্ব বা ইংরেজ নীতি, এসব কিছুই দেশভাগের জন্য দায়ী নয়।

অমিত শাহ বলেন, ১৯৩৭ সালে দেশে কংগ্রেসের প্রান্তীয় সরকার হয়। পৃথক পৃথক জায়গায় কংগ্রেস শাসন করছিল। তখন কংগ্রেস বন্দেমাতরমকে স্বীকার করে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদাও দেয়। কিন্তু পুরো গানটিকে সে সময়ে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। কংগ্রেস নেতারা ওই ভুল না করলে দেশ ভাগ হত না।

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির দাবি, তিনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম খুব ভাল ভাবে পড়েছেন। সবদিক খতিয়ে দেখে তাঁর মনে হয়েছে, ঐতিহাসিকরা দেশ ভাগের জন্য় কখনও খিলাফত আন্দেোলনকে দোষ দিয়েছেন, কখনও ইংরেজদের ডিভাইড ও রুল পলিসিকে। বাদ যায়নি মুসলীম লীগের দ্বিজাতি তত্বও। কিন্তু এসব কিছু নয়, অমিতের মতে, আমার বদ্ধমূল ধারণা বন্দেমাতরম সঙ্গীত দু টুকরো হওয়ার জন্য়ই দেশ ভাগ হয়েছে। যা করেছিল কংগ্রেস। বন্দেমাতরম কোন বিশেষ ধর্মের গান ছিল না, আজও নয়। কিন্তু ওই সঙ্গীতকে ধর্মের রূপ দিয়েছিল কংগ্রেস। কংগ্রেসের সেই ভুলের জন্য়ই দেশ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে।’’

অমিত শাহের এদিনের বক্তব্যে রামকৃষ্ণ বা বিবেকানন্দও উঠে এসেছেন। তিনি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অগ্রণী ভূমিকার কথাও। এসেছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায়ের নামও।

বুধবার বিড়লা সভাঘরে দিল্লির শ্য়ামাপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায় রিসার্চ ফাউন্ডেশন প্রথম বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায় স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করেছিল। তার প্রথম বক্তা ছিলেন অমিত শাহ। তিনি এদিন বলেন, শুধু বাংলা নয়, দেশের যে কোনও প্রান্তে গেলে বন্দেমাতরমের সঙ্গে এমনি বঙ্কিমবাবুর নাম জুড়ে যায়। আনন্দমঠে বন্দেমাতরম রচনা না করলে দেশ ভক্তির রাস্তা প্রশস্ত হত না। ভাষা, জাত, সম্প্রদায় যারই স্বাধীনতা আন্দোলনে ফাঁসি হয়েছে বা গুলি লেগেছে তার মুখ দিয়ে বন্দেমাতরম ধ্বনি বেরিয়ে এসেছে। আনন্দমঠ দেশভক্তি ও আন্দোলনের গতি দিয়েছিল।’’

রামনবমী, হনুমান জয়ন্তীসহ নানা কর্মসূচির পরেও বাংলার মাটিতে তেমন জায়গা করে উঠতে পারেনি বিজেপি। আগামী লোকসভা ভোটের আগে বাংলার মণীষীদের স্মরণ করে রাজনীতির ময়দানে মাটি পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবির। বুধবার বিড়লা সভাঘরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির গলায় তা দিনের আলোর মত একেবারে স্পষ্ট।

আরও পড়ুন, পড়ুয়াদের দাবি মেনে পিছু হটল বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুরে বহাল প্রবেশিকা

তবে গেরুয়া শিবিরের বুদ্ধিজীবীদের এই সভা সুপার ফ্লপ তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এবার তারা মঞ্চে হাজির করিয়েছিল সাহিত্য়িক বুদ্ধদেব গুহকে। কিন্তু তাঁকে কিছু বলতে শোনা গেল না এদিন। বরং বার বার ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে তাঁর মুখেও ছিল চরম অস্বস্তির ছাপ। সভায় অন্য় যাঁরা হাজির হয়েছিলেন, তাঁরা সবাই ছিলেন গেরুয়া শিবিরের। কলকাতার যে সব বুদ্ধিজীবীদের বিজেপি আমন্ত্রণ জানিয়েছিল তাঁরা কেউই সাড়া দেননি গেরুয়া শিবিরের আবেদনে।

বুদ্ধিজীবীদের দলে টানতে চেষ্টার কসুর করেনি গেরুয়া বাহিনী। অমিত শাহ কলকাতায় আসার আগে টানা বেশ কয়েকদিন ধরে বিজেপির নেতারা শহরে ‘সম্পর্ক অভিযান’ চালান। অনেক বিশিষ্টদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রাহুল সিনহা, মুকুল রায়রা। কিন্তু তাঁদের সে প্রচেষ্টা যে পুরোটাই বিফলে গিয়েছে, এদিনের সভায় বুদ্ধিজীবীদের গরহাজিরাই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। জানা গিয়েছে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায়, মনোজ মিত্র, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তসহ অনেক বিশিষ্ট ব্য়ক্তিকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল গেরুয়া তরফ থেকে। একমাত্র বুদ্ধদেব গুহ ছাড়া আর কেউই বিজেপি-র মুখরক্ষা করেননি। বাকি যাঁরা এই সভায় এসেছিলেন তাঁর সবাই বিজেপি বা তার শাখা সংগঠনের সদস্য বা দলের শুভান্য়ুধায়ী।

এদিন পোর্ট ট্রাস্টের গেস্ট হাউসে রাজ্য বিজেপি-র নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকেও যোগ দিয়েছিলেন অমিত শাহ্। সেখানে তিনি নির্দেশ দেন, রাজ্যের ৪২ টি লোকসভা আসনের মধ্যে অর্ধেক আসনে জিততে হবে। এ ব্যাপারে কোনও অজুহাত শোনা হবে না বলেও জানিয়ে দেন তিনি। এ জন্য শাসক দলের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলনের পথে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এর আগেও এ রাজ্যে ৪২টির মধ্যে ২২টি আসনে জেতার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিয়েছিলেন অমিত।

bjp amit shah bankim chandra chatterjee
Advertisment