প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের আন্দোলনে পুলিশি তাণ্ডব! বুধবার (৩রা মে) রাত ১১টা নাগাদ দিল্লির যন্তর মন্তরে প্রতিবাদী কুস্তিগীর এবং দিল্লি পুলিশের বচসা তুঙ্গে পৌঁছায়। জানা গিয়েছে গতকাল মধ্য রাতে যন্তর মন্তরে আন্দোলনরত কুস্তিগীরদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় দিল্লি পুলিশের।
কুস্তিগীরদের অভিযোগ, বুধবার মধ্য রাতে হঠাৎ চড়াও হয় পুলিশ। তাদের সঙ্গে বচসা শুরু হয়, ধাক্কাধাক্কি করে পুলিশ। মহিলা কুস্তিগীরদের কটু ভাষায় আক্রমণ, এমনকী মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। বেশ কয়েকজন কুস্তিগীরের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয় বলেও দাবি কুস্তিগীরদের। ঘটনার জেরে একজন সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দুজনের চোট গুরুতর বলেও জানা গিয়েছে।
পরে পুলিশ যন্তর মন্তরে প্রবেশ ও বেরোনোর পথ ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর আম আদমি পার্টির নেতা সৌরভ ভরদ্বাজ এবং দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল কুস্তিগীরদের সঙ্গে দেখা করতে যান।
প্রথমে পুলিশ তাদের কুস্তিগীরদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। পরে স্বাতী মালিওয়াল মহিলা কুস্তিগীরদের সঙ্গে দেখা করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের যন্তর মন্তরের কাছে যে ব্যারিকেড করা হয়েছে তা পেরিয়ে আন্দোলনরত কুস্তিগীরদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। পরে আজ সকালে ধীরে ধীরে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
বিক্ষোভকারী কুস্তীগীরদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের ওপর হামলা করে এবং অশালীন ভাষা ব্যবহার করে। কুস্তিগীররা অভিযোগ করেছে যে বৃষ্টির কারণে তারা বিছানা পাততে গেলে পুলিশ তাদের বাঁধা দেয়। এরপর বিক্ষোভকারী কুস্তিগীর ও পুলিশের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এদিকে, প্রতিবাদী কুস্তিগীর বজরং পুনিয়া তার চারটি দাবি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন।
কুস্তিগীরদের অভিযোগ করেন যে পুলিশকর্মীরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন, যার ভিত্তিতে ডিসিপি দিল্লি পুলিশের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে গতকাল রাতে কর্তব্যরত সকলের মেডিকেল পরীক্ষা করা হবে। এদিকে গতকাল রাতে কুস্তিগীরদের ওপর পুলিশি নির্যাতন প্রসঙ্গে বিরোধী দলের নেতারা একে 'দুঃখজনক এবং লজ্জার ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন।
বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক নেতারা এই ঘটনায় বিজেপিকে একহাত নিয়েছেন। বিরোধী নেতারা ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের তীব্র নিন্দা করেছেন। ভিনেশ ফোগাট অভিযোগ করেছেন যে মদ্যপ অবস্থায় এক পুলিশকর্মী তার ভাইকে লাঞ্ছিত করেছে এবং দাবি করেছে যে অন্য এক পুলিশ আধিকারিক তাকে এবং সঙ্গীতা ফোগাটকে ধাক্কা দিয়েছে।
ঘটনার পর কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ দীপেন্দর সিং হুডা এবং দিল্লি কমিশন ফর উইমেন (ডিসিডব্লিউ) প্রধান স্বাতী মালিওয়াল কুস্তিগীরদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদেরও বচসা হয়। দীপেন্দর সিং হুডা এক ট্যুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘কুস্তিগীরদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও পুলিশ আমাদের পথ আটকায়, আমাকে পরে বসন্ত বিহার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়’।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী যন্তর মন্তরের ঘটনার জেরে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, 'বেটি বাঁচাও' শুধুই ভন্ডামি", কেন্দ্র সরকারের 'বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও' প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আসলে, বিজেপির শাসনকালে দেশের মহিলাদের নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পান নি’।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং আম আদমি পার্টির জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়ালও গতকালের ঘটনায় বিজেপি নিশানা করে বলেন, ‘দেশের চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়দের সঙ্গে এমন দুর্ব্যবহার? এটা খুবই দুঃখজনক এবং লজ্জার’। তিনি যোগ করেন, “দেশের সকল মানুষের কাছে আমার আবেদন- বিজেপির গুন্ডামি আর সহ্য করবেন না। বিজেপিকে উৎখাত করার পাশাপাশি এখন তাদের তাড়ানোরও সময় এসেছে,”।
ভারত রাষ্ট্র সমিতি (BRS) নেতা এবং তেলেঙ্গানার মন্ত্রী ওয়াই সতীশ রেড্ডি গতকাল রাতে প্রতিবাদস্থলের থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলেছেন, “আমরা 'মন কি বাত'-এর ১০ তম পর্বে আপনার ৮৩০ কোটি মূল্যের কথা শুনেছি। দয়া করে আমাদের চ্যাম্পিয়ন অ্যাথলেটদের মন কি বাত শুনুন।”