দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পর রবীন্দ্রনাথের হাতে গড়া বিশ্বভারতীতেও এবার আক্রান্ত পড়ুয়া। লাঠি-রডের আঘাতে রক্তাক্ত হল শান্তিনিকেতন। এ ক্ষেত্রেও রাতের অন্ধকারে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ুয়া নিগ্রহের ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠল এবিভিপির বিরুদ্ধে। বুধবারের অতর্কিত হানায় আহত হয়েছেন বিশ্বভারতীর দুই পড়ুয়া স্বপ্ননীল মুখোপাধ্যায় এবং ফাল্গুনী পান। সোশাল মিডিয়ায় বুধবার রাত থেকেই ছড়িয়ে পড়ে এই মারধরের ছবি ও ভিডিও। ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ।
ঠিক কী ঘটেছে বিশ্বভারতীতে?
অভিযোগ, বুধবার রাতে লাঠি রড হাতে গুন্ডা বাহিনী পূর্বপল্লী সিনিয়র বয়েজ হস্টেলে পড়ুয়াদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া শুরু করে। চলতি মাসের ৮ তারিখ বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্তকে ঘেরাও করার দিন তাঁরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল কি না তা জানতে চেয়ে হস্টেলের ছাত্রদের হুমকি দেওয়াও হয়। এরপরই শুরু হয় মারধর। ক্রমশ জটিল হতে শুরু করে পরিস্থিতি। আহত হয়েছেন অনেকে। এই আক্রমণের মুখেই গুরুতর আহত হন স্বপ্ননীল এবং ফাল্গুনী, এমনটাই অভিযোগ। বুধবার রাতের এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ছাত্র বিক্ষোভ চলছে বিশ্বভারতীতে।
আরও পড়ুন: টিএমসিপির ধর্নায় উপাচার্যরা
এই ঘটনায় এবিভিপি-র দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "রাতে এই দুটি ছেলে ক্যাম্পাসে ছিল। হঠাৎই একদল দুষ্কৃতী এসে ওঁদের মারধর শুরু করে। এদের নেতৃত্ব দেন অচিন্ত্য বাগদি ও সাবির আলি। এরা দু'জন আগে তৃণমূল করত এখন বিজেপি করে। আমি নিশ্চিত নই, তবে শুনেছি যে অচিন্ত্য দশ বছর ধরে বিশ্বভারতীতে এম.এ করে যাচ্ছে আর সাবির বহিরাগত। ওঁর সঙ্গে পড়াশোনার কোনও সম্পর্কই নেই। এরাই মারধর করেছে। হস্টেলে ঢুকেই মেরেছে এঁদের। এঁরা (আক্রান্ত দুই ছাত্র) কিন্তু এসএফআই করেন না। অন্য বাম সংগঠন করে। তবে আমরা এখন এটা দেখছি না যে কে এসএফআই করে, আর কে করে না।" সৃজন ভট্টাচার্যের স্পষ্ট বক্তব্য, "এরা (আক্রমণকারীরা) তৃণমূল করত, এখন বিজেপি করে। এই ঘটনায় আবার প্রমাণিত হল যে তৃণমূলের সব জঞ্জালগুলোর স্থায়ী ঠিকানা এখন বিজেপি। তবে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতী এই ঘটনা মেনে নেবে না। পাল্টা আন্দোলনে নামবে ছাত্ররা।"
উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরেই নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল বিশ্বভারতীতে। সেই আবহেই বিজেপি সংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বিশ্বভারতীতে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে একটি আলোচনা সভায় যোগ দিতে গেলে তাঁকে ক্যাম্পাসেই ঘেরাও করে রেখে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই। সেই ঘটনারই "পাল্টা" এই আক্রমণ, এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
এদিকে গোটা ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে এবিভিপি। দলের নেতা সুবীর হালদার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "এটা বামপন্থীদের একটা কালচার। ওঁরা নিজেরাই মারধর করে অন্যদের উপর দায় চাপানো। এক্ষেত্রে তৃণমূল এবং বামপন্থী এদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। কিন্তু দায় চাপানো হয়েছে বিদ্যার্থী পরিষদের উপর। দায় চাপানো অনেক সহজ কিন্তু প্রমাণ করা কঠিন। বামপন্থীরা যে কাজ করতে চাইছেন তাতে তাঁরা সফল হতে পারবেন না।"
এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যর বক্তব্য উদ্ধৃত করে 'দলবদলের' প্রশ্নটি করতেই এবিভিপি নেতার বক্তব্য, " এই নামে বিদ্যার্থী পরিষদের সঙ্গে কেউ নেই। আমরা দাবি করছি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হোক। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক।"