গত বছর জলের তোড়ে কিষানগঞ্জে রেল লাইনে বিপত্তি হয়েছিল। সেই সময় উত্তরবঙ্গ ও উত্তর পূর্বাঞ্চেলর সঙ্গে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন পরিবহণ দফতরের অধীন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম ও রাজ্য পরিবহণ নিগম কী দক্ষতার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রেখেছিল, নিজের দফতরের এই জয়গাথা গেয়ে নবান্নে স্বল্প দৈর্ঘ্যের বক্তব্য রাখা সবে শেষ করেছেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধকারী। কিন্তু তারপরেই মাননীয়ার মঞ্চে অবতরণ। এবং পরিবহণ দফতরের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ।
দফতরের কাজে যে তিনি অসন্তুষ্ট তা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নবান্নে বাংলাশ্রী প্রকল্পের অন্তর্গত কলকাতা থেকে জেলা সদর শহরে যাতায়াতকারী ২০টি এসি ভলভো নন স্টপ বাস, যেগুলির মাথাপিছু খরচ পড়েছে দেড় কোটি টাকা, ও ২২টি ট্রমা অ্যাম্বুলেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল। পরিবহণ মন্ত্রী এবং দফতরের প্রধান সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্যান্য আধিকারিকরা তখন মঞ্চে। ছিলেন বেশ কয়েকজন বিধায়কও।
তাঁদের সামনেই মুখ্যমন্ত্রী গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন পরিবহণ দফতরকে। রাস্তায় চলা গাড়ির অনেক ক্ষেত্রেই যে যথাযথ সার্টিফিকটে থাকে না, তা স্পষ্ট জানিয়ে দেন ক্ষুব্ধ মমতা। এবং পথ দুর্ঘটনার জন্য গাড়ির 'আনফিট' অবস্থাকেই দায়ী করেন। গাড়ি বেহাল হয়ে পড়লে যে সাধারন মানুষ রাস্তায় নিদারুন অসুবিধায় পড়েন, তাও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট। তিনি বলেন, "অনেক গাড়ি ফিটনেস না নিয়ে রাস্তায় নেমে যাচ্ছে। রাস্তার মাঝে গিয়ে গাড়ি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মা উড়ালপুলেও এই সমস্যা দেখা যায়। সেখান থেকে গাড়ি উদ্ধার করার অনেক প্রতিবন্ধক থাকে।"
এই সমস্যার সমাধানের কথা ভাবতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, "গাড়ি রাস্তায় পাংচার হয়ে গেলে মানুষের সময় নষ্ট হয়। মাঝে মাঝে চেক করে দেখা উচিত গাড়িটা রাস্তায় নামার উপযুক্ত কী না। অনেক ক্ষেত্রেই এই ফিটনেস দেখা হয় না। এর ফলে দুর্ঘটনাও হয়ে থাকে।" রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের এই তিরস্কার মঞ্চে উপস্থিত সকলেই নিরুপায় চিত্তে হজম করলেন।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ ফিটনেস সার্টিফিকেটে সীমাবদ্ধ ছিল না। বাসে বাসে সাঁটা 'সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ' স্টিকারের ছোট আয়তন নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি, এবং বাস বা ট্রাকে বড় স্টিকার লাগানোর পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, "অনেক বাসে স্টিকারের লেখা বোঝা যাচ্ছে না, তা বদলে বড় করে লিখতে হবে। ট্রাক, লরির ক্ষেত্রে বড় বড় অক্ষরে বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজীতে স্টিকার লাগালে চোখে পড়বে।"
আগামী সাত দিনের মধ্যে পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের প্রতিটি গাড়ির সামনে এবং পিছনে 'সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ' স্টিকার লাগানোর নির্দেশ দেন মমতা। তিনি আরও বলেন, পথেঘাটে বাচ্চাদের হাত দিয়ে এই স্টিকার বিলি করা উচিত। তিনি জানিয়ে দেন, তিনি নিজের গাড়ির স্টিয়ারিংয়ের সামনে 'সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ' স্টিকার লাগাবেন। গাড়ির পিছনেও লাগাতে হবে ওই স্টিকার।
মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, "স্টিয়ারিংয়ের সামনে স্টিকার থাকলে যিনি গাড়ি চালাবেন তাঁর চোখে পড়বে। এক প্রকার কাউন্সেলিং হয়ে যাবে। তিনি চেষ্টা করবেন ভালভাবে গাড়ি চালাতে। তাড়াহুড়ো না করতে। গাড়ির পিছনে স্টিকার থাকলে অন্য গাড়ির চালক দেখতে পাবেন।" তাঁর মতে, একটা স্টিকারে অনেক কাজ হবে। অনেক প্রাণ বাঁচতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, "পুজোর আগে কলকাতা ও বৃহত্তর কলকাতায় ৮০ টা ই-বাস নামানো হবে।" তিনি জানান, পরিবহণ দফতরের সাড়ে তিন হাজার বাসের মধ্যে পাঁচশো এসি বাস রয়েছে।