বৃহস্পতিবার বায়ুসেনার বিমানে কোচবিহারে পৌঁছে প্রথমে মাথাভাঙার ছাটখাটের বাড়ি এলাকা পরিদর্শন করেন ধনখড়। তারপর শীতলকুচির ছোট শালবাড়ি এলাকাও পরিদর্শন করেন তিনি। এর পরেই সাংবাদিকদের উদ্দেশে রাজ্য সরকারের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, ‘যখন এখানে আসার কথা ভাবছিলাম, তখন ভয়ঙ্কর সব তথ্য পেয়েছিলাম। এসে বুঝলাম, এই তাণ্ডব নৃত্য দেখা যায় না। আমাকে দেখে এক তরুণী বললেন, আপনি এসে গিয়েছেন। ওরা আবার আসবে। লোকে জঙ্গলে রাত কাটাচ্ছে। এক জন বৃদ্ধা চোখের জল ফেলতে ফেলতে বললেন, নাতনির বিয়ের জন্য যা ছিল সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সব সম্পত্তি লুঠ হয়ে গিয়েছে।’
যদিও রাজ্যপালের এদিন কোচবিহার সফর এবং সংবাদমাধ্যমের সামনে সরব হওয়াকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ‘দিলীপ ঘোষের বদলি’ বলেও খোঁচা দিয়েছে শাসক শিবির।
তাঁর অভিযোগ, ‘সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। মানুষ বলছেন, তাঁরা গণতন্ত্রে শ্বাস নিতে চান।‘ কোচবিহারের মাথাভাঙা এবং শীতলখুচি পরিদর্শন করে এভাবেই সংবাদমাধ্যমে মুখ খলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘এখানে একটাই কথা শোনা যাচ্ছে, আমরা ঝান্ডাও লাগিয়েছি তাও বাঁচতে পারছি না কেন? আমাদের খুব ভুল হয়ে গিয়েছে। আমরা গণতন্ত্রে শ্বাস নিতে চাই। ওরা বলছে প্রশাসনের কেউ আসেনি। পুলিশে গেলে বরবাদ হয়ে যাব।‘
তাঁর মন্তব্য, ‘আমার মনে হচ্ছে, এখানে পুলিশ এবং প্রশাসনের হৃদয় নেই। আইনের শাসন নেই। ঘরে-বাইরে আতঙ্ক, সন্ত্রাসের বাতাবরণ। আমার নিজের উপর লজ্জা হচ্ছে। দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলি কী করছে! ওরা কি দেখতে পায় না?’
রাজ্যপালের কোচবিহার সফরে আগাগোড়া তাঁর সঙ্গী ছিলেন, স্থানীয় বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক, মাথাভাঙার বিজেপি বিধায়ক সুশীল বর্মণ এবং তুফানগঞ্জের বিজেপি বিধায়ক তথা বিজেপি-র জেলা সভাপতি মালতী রাভা রায়। ঘটনাচক্রে বৃহস্পতিবার রাজ্যপাল পা রেখেছেন মাথাভাঙা এবং শীতলখুচি, দুই বিধানসভা কেন্দ্রে। ওই দু’টি কেন্দ্রই বিজেপি দখল করেছে এ বার।
ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্যপাল সংবাদমাধ্যমের সামনে অভিযোগ করার পরেই, পাল্টা তোপ দেগেছে তৃণমূল। দলের কোচবিহার জেলার সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় গোটা বিষয়টিকেই ‘সাজানো’ বলে অভিযোগ করেছেন। ফেসবুকে কটাক্ষের সুরেই পার্থ লিখেছেন, ‘মাননীয় রাজ্যপাল মহাশয়ের কাছে অনুরোধ করব, সাজানো, গোছানো, শেখানো কয়েক জন আক্রান্ত বিজেপি কর্মীর বাড়িতে যান অসুবিধে নেই। পাশাপাশি চিলাখানার বিজেপি হার্মাদদের দ্বারা আহত প্রসেনজিৎ সাহা (মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে), নিহত সাহিনুর রহমান, গুরুতর আহত ঘোকসাডাহার পরেশ বর্মণ, দিনহাটার প্রাক্তন বিধায়ক উদয়ন গুহ , নিহত মানিক মিত্রের পরিবার-সহ আরও অসংখ্য পরিবারের সাথে দেখা করুন। দেখা করুন ১০ এপ্রিল ভোটের দিন নিহত পরিবারগুলোর সাথে।‘
সুর চড়িয়ে তাঁর আরও মন্তব্য, ‘কিন্তু যা শুনলাম, আপনি তা করছেন না। আসলে আপনার মূল উদ্দেশ্যই হল, বিজেপিকে অক্সিজেন যোগানো। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ যে কাজটা প্রায়শই করেন। আজ কোচবিহারে আপনি সেই বিজেপি রাজ্য সভাপতির গুরুদায়িত্ব পালন করতে এসেছেন - সাংবিধানিক পদমর্যাদা, রীতিনীতিকে ভূ-লুণ্ঠিত করে।‘