রাজ্য সরকার বনাম রাজ্যপাল সংঘাতের আঁচ এবার পড়ল কালীপুজোতেও। রাজ্যপাল পুজোর উদ্বোধন করবেন বলে এবার পুজো কমিটির প্রধান উপদেষ্টা পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন তৃণমূল নেতা তথা বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায়, এমনটাই খবর। এ ঘটনায় রাজ্যপালের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের নেতাদের 'বিরূপ মনোভাব' যে কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা প্রকাশ্যে এল বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, এদিকে আবার মুখ্যমন্ত্রী ভাইফোঁটা দেবেন বলে রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ করেছেন বলেও খবর।
বারাসতের ওই পুজো কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর তরুছায়া ক্লাবের কালিপুজো কমিটির প্রধান উপদেষ্টা পদে রয়েছেন পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায়। এ বছরও পুজো কমিটির প্রাধন উপদেষ্টা পদে ছিলেন সুনীলবাবুই। এ বছর তাঁদের পুজো পঞ্চশ বছরে পা দিচ্ছে। আর তাই সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে এবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের হাতেই উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেয় পুজো কমিটি। শনিবার সকাল ১০টায় পুজো উদ্বোধন করার কথা রাজ্যপালের। পুজো কমিটির এই সিদ্ধান্ত জানার পরই প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়ান পুরপ্রধান তথা এলাকার তৃণমূল নেতা সুনীল মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: মমতা ভাইফোঁটায় তাঁকে কেন আমন্ত্রণ করলেন? এবার কি ঝামেলা মেটাতে চান মুখ্যমন্ত্রী?
এ প্রসঙ্গে সুনীলবাবু বলেন, ‘‘পুজো কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক আমি, আর আমিই জানবো না যে কী হচ্ছে বা না হচ্ছে! সে কারণেই আমি সদস্য পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। রাজ্যপালের কর্মকাণ্ড আমার ভাল লাগে না। রাজ্যপাল এখানে এসে যা করছেন সেটা একটা দলীয় স্বার্থে করছেন। উনি নিরপেক্ষ নন। সেই কারণেই ওঁর অনুষ্ঠানে আমি যাব না বলে ঠিক করেছি’’।
পুজো কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, "উনি ( সুনীল মুখোপাধ্যায় ) জানিয়েছেন, উনি সবরকমভাবে আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তবে লিখিত আকারে ওঁর নামটা রাখা যাবে না’’। বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি শংকর দাস বলেন, "সুনীলবাবু বারাসত পুরসভার প্রধান তথা বারাসত শহরের প্রধান, আর রাজ্যপাল সাংবিধানিক প্রধান। পুজো উদ্বোধনে আসছেন এটা নিয়ে উনি ( সুনীল মুখোপাধ্যায়) অযথা রাজনীতি করছেন। রাজ্যপাল যেটা বলছেন সেটার সঙ্গে পুজোর কোনও সম্পর্ক নেই’’।
আরও পড়ুন: সরকার-রাজভবন সংঘাত তুঙ্গে, প্রশাসনিক বৈঠক ফের ভেস্তে যাওয়ায় ‘চরম ক্ষুব্ধ’ রাজ্যপাল
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবুল সুপ্রিয়র উপর 'নিগ্রহে'র ঘটনার পর থেকেই রাজ্য সরকার বনাম রাজ্যপাল সংঘাতের সূত্রপাত। এরপর সম্প্রতি জিয়াগঞ্জে সপরিবারে শিক্ষক খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সরব হন রাজ্যপাল। এ ঘটনাতেও রাজ্যপালের ভূমিকার সমালোচনা করতে মাঠে নামেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা। কিছুদিন আগে রেড রোডে পুজো কার্নিভালে তাঁকে অপমান করা হয়েছে বলে সরব হন রাজ্যপাল। এ নিয়েও শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। অন্যদিকে, শিলিগুড়ির পর উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রাজ্যপালের ডাকা প্রশাসনিক বৈঠক রীতিমতো ‘বয়কট’ করেন জনপ্রতিনিধি ও জেলার শীর্ষ সরকারি কর্তারা। এরপরই চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যপাল। এই প্রেক্ষাপটে কালীপুজোর উদ্বোধনে রাজ্যপালের উপস্থিতির জন্য যে পদক্ষেপ করলেন বারাসতের তৃণমূল নেতা, তা এই সংঘাতে নয়া মোড় দিল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।