সব সংঘাতকে দূরে সরিয়ে কালীপুজোয় তাঁরা এক হয়েছিলেন। সেই তাঁরাই আবার সংঘাতে জড়ালেন! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের সংঘাত এবার নয়া মোড় নিল বলেই মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার অধ্যাপকদের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে একহাত নিয়ে মমতাকে ট্যাগ করে টুইটারে এবার সরব হলেন রাজ্যপাল। নেতাজি ইন্ডোরে অধ্যাপকদের সভায় মমতা বলেছেন, ‘‘নিশ্চিন্তে কাজ করুন। কিছু হলে আমায় বলবেন। কে কী ডেকে বলল, চিন্তা করার কিছু নেই’’। মমতার এই বক্তব্য ঘিরে জোর জল্পনা তৈরি হয় বঙ্গ রাজনীতিতে। রাজ্যপালের উদ্দেশেই কি এহেন মন্তব্য করলেন মমতা? এ প্রশ্নই ঘুরপাক খেতে থাকে। এর মধ্যে মমতার এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে টুইট করে রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের নিহিত অর্থ বোঝার চেষ্টা করছি। সংবিধান মেনেই আমি রাজ্যপাল ও আচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি’’। রাজ্যপালের এই টুইট ঘিরে এই সংঘাত নয়া চেহারা নিল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: ‘পুলিশের পেনশন কেড়ে নেব’, হুঙ্কার দিলীপ ঘোষের
প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবুল সুপ্রিয়র উপর ‘নিগ্রহে’র ঘটনার পর থেকেই রাজ্য সরকার বনাম রাজ্যপাল সংঘাতের সূত্রপাত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিভিপি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে ‘চরম হেনস্থা’র শিকার হন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তবে পরিস্থিতি বেগতিক হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ডাকার ব্যাপারে নারাজ হন উপাচার্য। এ নিয়ে রীতিমতো বাবুলের সঙ্গে তাঁর তর্কাতর্কিও বাধে। সূত্রের খবর, উপাচার্যকে এও বলতে শোনা যায় যে তিনি পদত্যাগ করবেন কিন্তু পুলিশ ডাকবেন না। উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেন খোদ রাজ্যপালও। এদিকে, এ ঘটনায় কার্যত পরোক্ষে যাদবপুরের উপাচার্যের পাশে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীরা। বরং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপালের যাওয়া নিয়ে সুর চড়াতে থাকে শাসক শিবির। এ ঘটনার পর থেকেই নানা ইস্যুতে রাজ্যপালের সঙ্গে সংঘাত বাধে রাজ্য সরকারের।
আরও পড়ুন: গরুর দুধে সোনা আছে, বিজ্ঞান না বুঝেই সমালোচনা হচ্ছে: দিলীপ
আরও পড়ুন: মমতার ঘরে ঢুকে হতবাক রাজ্যপাল! কী বললেন তিনি?
এদিকে, সংঘাতের আঁচে জল ঢেলে সম্প্রতি কালীপুজোয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান সস্ত্রীক রাজ্যপাল। তবে শুধু মমতাই নয়। মমতার মন্ত্রিসভার হেভিওয়েট সদস্য তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে আলিঙ্গন করে রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘‘আপনি আমার বন্ধু’’। এমনকি, পার্থর দক্ষতা নিয়েও মমতার কাছে ভূয়সী প্রশংসা করতে দেখা যায় রাজ্যপালকে। অন্যদিকে, মমতার ভাইপো তথা তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যে ‘বডি ল্যাঙ্গোয়েজে’ কথা বলতে দেখা গিয়েছে ধনখড়কে তাও নজর কাড়ার মতো। সেই ‘বিরল’ ছবির পর এদিন আবারও যেভাবে সরব হতে দেখা গেল রাজ্যপালকে, তা এই সংঘাতের আবহকে নয়া মোড় দিল বলেই মনে করছেন রাজনীতিক কারবারিদের একাংশ।