রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের কি সত্যিই সংঘাত? নাকি সবটাই ‘লোকদেখানো ঝগড়া?’ রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের সম্পর্কের নতুন আঙ্গিক সামনে এনে এমন প্রশ্নই বাংলা রাজনীতির অলিন্দে উস্কে দিল বাম-কংগ্রেস। শুক্রবার বঙ্গ বিধানসভায় রাজ্যপালের বাজেট বক্তৃতায় কেন্দ্র বিরোধী কোনও কথারই উল্লেখ নেই। মমতা সরকারের লেখা বাজেট বক্তৃতায় মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ‘টুঁ’ শব্দটি নেই! তাহলে কি রাজ্যপালের চাপেই বাধ্য হয়ে কেন্দ্র বিরোধী কথা বাজেট বক্তৃতা থেকে বাদ দিয়েছে মমতা সরকার? এমন প্রশ্নই তুললেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী। এ ঘটনাকে সামনে রেখে আবারও রাজ্য-কেন্দ্র গট-আপের অভিযোগ তুলল বাংলার বাম-কংগ্রেস। পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে মান্নানের খোঁচা, ‘‘উনি কার ভয়ে এত ভীত?’
ঠিক কী বলেছেন মান্নান ও সুজন?
এদিন বিধানসভায় সাংবাদিক বৈঠকে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী তো রোজই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তাহলে রাজ্যপালর ভাষণে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কোনও কথা নেই কেন? কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একটা কথাও উল্লেখ করতে পারলেন না? উত্তরবঙ্গের চা বাগান নিয়ে কোনও কথা নেই। কারণ বললেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কথা বলা হত। রাজ্যপালের চাপেই কি এ কাজ করল রাজ্য? তাহলে কি পুরোটাই গট-আপ চলছে? কেউ কেউ বলছেন, রাজ্যপালের চাপেই বাজেট বক্তৃতা বদলেছে রাজ্য সরকার। সিএএ-এনআরসি নিয়ে যা বলা হয়েছে, তা তো নরেন্দ্র মোদী বলেন। ভাববাচ্যে বলা হয়েছে, বলতে দ্বিধা কোথায়? সিএএ এনে দেশকে টুকরো করার চক্রান্ত করা হয়েছে, একথা তো বলা হল না। সমালোচনা হল, সমালোচনার ধার রইল না। সাপ মরুক লাঠি না ভাঙে’’।
লালবাজারে মুকুল-কৈলাশ, দেখুন ছবি
এরপরই মমতাকে নিশানা করে মান্নান বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভয় পাবেন না। উনি কার ভয়ে এত ভীত? একথা বললে আবার রেগে যাবেন। বলবেন, ভয় পাই না কাউকে। আসলে যিনি ভয় পান, তিনিই এমন বলে থাকেন। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যদি উনি কথা বলতেন, তাহলে আমরা প্রশংসাই করতাম, পাশে থাকতাম। আসলে উনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে গিয়েছেন। আপনি কেন্দ্রের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলেন। একটা টুঁ শব্দটিও করলেন না’’।
আরও পড়ুন: মুকুলেই ভরসা রাখছেন মমতা
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা বলেছিলাম, লিখিত ভাষণের বাইরে কোনও কথা বললে আমরা প্রতিবাদ করব। সৌজন্য ও অসৌজন্যের লোকদেখানো খেলা চলছে। দুর্নীতিগ্রস্তরা কোনও দিনই কোনও লড়াই ঠিকমতো করতে পারে না। সামনে-পিছনে-মাঝে ভয় লুকিয়ে থাকে। লোকদেখানো ঝগড়া হচ্ছে যেন। ভিতরে ভিতরে ওঁদের সম্পর্ক এমন, ভাইফোঁটায় নিমন্ত্রণ নেই অথচ কালীপুজোয় সপরিবারে নিমন্ত্রণ রয়েছে’’। প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতের আবহেই গত কালীপুজোয় মমতার বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন সস্ত্রীক রাজ্যপাল। যদিও ভাইফোঁটায় মমতার বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন ধনকড়।
উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের লেখা বাজেট বক্তৃতায় নিজের বক্তব্য সংযোজন করা নিয়ে গত ক’দিন ধরে চর্চায় ছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। এদিকে, তাদের খসড়া বক্তব্যই রাজ্যপালকে পাঠ করতে হবে, কোনও সংযোজন-বিয়োজন চলবে না, এই অবস্থানেই অনড় ছিল মমতা সরকার। এই আবহে রাজ্যপাল বনাম রাজ্য সরকার সংঘাতের আশঙ্কায় যখন প্রহর গুনছিল বঙ্গ বিধানসভা, ঠিক তখনই সকলকে কার্যত চমকে দিয়ে রাজ্যের লেখা ভাষণই হুবহু পড়ে বাজেট অধিবেশনের সূচনা করলেন ধনকড়। এতেই শেষ নয়, বাজেট বক্তৃতার পর বিধানসভায় অধ্যক্ষের ঘরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও সারলেন রাজ্যপাল। শেষে সৌজন্য বিনিময় করে হাসিমুখে বিধানসভা ছাড়লেন রাজ্যপাল। বাজেট বক্তৃতার পর টুইটারে রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘সংবিধানের পরম্পরা মেনেই ভাষণ পাঠ করেছি’। এই প্রেক্ষিতে বাম-কংগ্রেসের এহেন অভিযোগ নয়া মাত্রা পেল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।