জোড়াফুল ছেড়ে পদ্ম ফুলে গিয়েছেন প্রায় বছর চারেক। তাঁর সঙ্গে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র ঘনিষ্ঠতা সকলেরই জানা। রাজ্য নেতৃত্বে তিনি যে থাকতে চান না তা একাধিকবার বলেছেন ঘনিষ্ঠ মহলে। এর মধ্যে হয়েছেন দিল্লির ভোটারও। তবু এত দিনেও কেবল দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য হয়েই থাকতে হয়েছে তাঁকে। তবে এবার বোধ হয় চাণক্যর 'ভাগ্যের চাকা' ঘুরতে পারে। সূত্রের খবর, জাতীয় স্তরে বিজেপির কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদ অথবা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় একটি আসন পেতে পারেন মুকুল রায়। আপাতত এই চর্চাতেই মশগুল ৬, মুরলী ধর সেন লেন।
মুকুল ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, এবার তাঁর পদ বা মন্ত্রিত্ব কিছু একটা প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরেই দলে চর্চা চলছিল, সর্বভারতীয় স্তরে মুকুল রায় ভাল পদ পাবেন, তাঁর দায়িত্বও বাড়বে। কিন্তু চর্চা যাই হোক, বাস্তবে তা থমকে থেকেছে। বরং সারদা এবং নারদাকাণ্ড নিয়ে সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে তৃণমূলের একদা 'দু নম্বর'কে। তখনও অবশ্য পদ্মশিবিরের একাংশ মুচকি হেসেছে। তবে আমল দেননি রাজনীতিতে পোড় খাওয়া প্রাক্তন রেলমন্ত্রী। মুকুল যে নিজে রাজ্য-রাজ্যনীতির পদ নিয়ে ভাবছেন না তা তিনি নানা সময়ে স্পষ্ট ব্যক্ত করেছেন। তবে তাঁর একমাত্র লক্ষ্য, বাংলার রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করা। আর এ জন্য তাঁকে দল গুরুত্বপূর্ণ পদ বা মন্ত্রীত্ব না দিলেও কুছ পরোয়া নেহি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করাই তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য় একথা প্রায়শই বলে থাকেন মুকুল রায়।
ইদানীং বঙ্গ বিজেপিতে আলাচনার বিষয়, এ রাজ্য থেকে কে কে হতে পারেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্য থেকে ১৮টি আসন পেয়েছে পদ্মশিবির। কিন্তু কেবল শিকে ছেঁড়ে আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় ও রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরীর কপালে। তাও আবার এই দুজনকে প্রতিমন্ত্রী হয়েই সন্তুষ্ট হতে হয়েছে। রাজ্য এখনও পায়নি একটিও পূর্ণমন্ত্রী। অথচ বঙ্গ বিজেপি আশা করেছিল অন্তত একজন পূর্ণমন্ত্রী হবেনই। তবে এবার ফের এই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কারণ, বছর ঘুরলেই বাংলার নির্বাচন। তবে রাজ্যের জয়ী সাংসদ ছাড়া অন্য নেতাকেও মন্ত্রী করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচন। রাজনীতির কারবারিরা মনে করছে, রাজ্যে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে হলে এ রাজ্য থেকে এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সংখ্যা অবশ্যই বাড়ানো প্রয়োজন। রাজ্য বিজেপিও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে মন্ত্রী করার জন্য আবেদন জানিয়েছে। তবে রাজ্য সভাপতির পদে পুনর্বহাল মেদিনীপুরের সাংসদ তথা দিলীপ ঘোষ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি মন্ত্রিত্ব চান না। বরং তিনি দলীয় সংগঠনের দায়িত্বেই থাকতে চান। এরপরই মন্ত্রীর পদে মুকুলকে নিয়ে আলোচনা বিশেষ গতি পেয়েছে?
রাজ্যের শাসকদলকে চাপে ফেলতে বিজেপির ঘোষিত কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঝাঁপিয়ে পড়েছে এ রাজ্যে। রাজ্যে আসতে শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। বঙ্গ বিজেপি মনে করছে, কেন্দ্রে রাজ্যের কাউকে পূর্ণমন্ত্রী করলে সেই কাজটা আরও সুফল দেবে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ রাজ্যবাসীও মনে করবে, বাংলাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি। সূত্রের খবর, রাজ্যসভা থেকে সাংসদ করে মুকুলকে কেন্দ্রের পূর্ণ মন্ত্রী করার পথে হাঁটতে পারে পদ্ম পার্টি। এর আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বের অভিজ্ঞতা রয়েছে মুকুল রায়ের। তবে মুকুল ঘনিষ্ঠদের দাবি, মন্ত্রী না হলেও এবার অন্তত দল তাঁকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে পারে। সব মিলিয়ে চাণক্যর 'পোর্ট ফোলিও' বাড়বে বলেই মত গেরুয়া রাজনীতির কুশীলবদের।