'কুকুরের মাংস' সংক্রান্ত মন্তব্যের জন্য দিলীপ ঘোষকে বিঁধলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা সিপিআই(এম) নেতা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য ও কবি-অধ্যাপক সুবোধ সরকার। এই দু'জন একদা কলকাতায় বাংলা আকাদেমির সামনে রাস্তায় গরুর মাংস খেয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। সম্প্রতি দিলীপের কুকুরের মাংস খাওয়ার 'পরামর্শে'র প্রেক্ষিতে তাঁরা দু'জনেই জানালেন, ধর্মের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক। বিকাশবাবুর স্পষ্ট দাবি, ‘‘দিলীপ ঘোষ হিন্দু শাস্ত্র জানেন না।’’ দিলীপের বক্তব্যের কোনও গুরুত্ব নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরা।
সোমবার বর্ধমানের এক সভায় বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেই মন্তব্যে তোলপাড় বাংলার রাজনীতি থেকে সমস্ত মহল। গরুর কুঁজের ‘স্বর্ণ নাড়ি’র ফলেই দুধের রঙ হলদে বা হাল্কা সোনালী রঙের হয়, বলেছেন দিলীপ। একই সঙ্গে বুদ্ধিজীবীদের গরুর সঙ্গে কুকুরের মাংস খেতেও পরামর্শ দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
আরও পড়ুন: কুকুরের মাংস খান, শ্লেষ দিলীপ ঘোষের
বাংলা আকাদেমির সামনে সেদিনের আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন কবি সুবোধ সরকার। মঙ্গলবার সুবোধবাবু বলেন, ‘‘আমি দিলীপবাবুর কথার মাথা-মুন্ডু কিছু খুঁজে পাই না। যিনি বলেন, গরুর দুধে সোনা আছে, তাঁকে আর কিছুই বলার নেই। উনি একাই যথেষ্ট বাংলার বিজেপিকে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য।’’
আরও পড়ুন: ‘পুলিশের পেনশন কেড়ে নেব’, হুঙ্কার দিলীপ ঘোষের
কুকুরের মাংস খাওয়া প্রসঙ্গে সুবোধ বলেন, ‘‘নাগাল্যান্ডের মানুষ কুকুর খায়। পৃথিবীর বহু জায়াগয় বহু রকমের উপজাতিদের মধ্যে নানা ধরেনর মাংস খাওয়ার প্রথা রয়েছে। কেউ ইঁদুর খায়, কেউ পিঁপড়ে খায়। এগুলো নিয়ে কেউ কথা বলে! কোনও মানুষের খাবার নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়। খাবারের সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। চিনারা আরশোলা খায়। আমরা কি খেতে পারব? বার্মিজরা নাপতি খায়। একটা পোকা পচিয়ে এই খাবার তৈরি হয়। এক একটা দেশে এক এক রকম খাওয়ার রীতি।’’ তিনি স্পষ্ট বলনে, ‘‘দিলীপবাবুর যেটা ভাল লাগে না, সেটা খাবেন না। অন্যদের যা ভাল লাগে সেটা খাবে।’’
কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য চাছাছোলা ভাষায় দিলীপ ঘোষের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষের না আছে শিক্ষা, না আছে রুচিবোধ। তাঁর কথায় মন্তব্য করা মানে নিজেকে অপমানিত করা। দিলীপ হিন্দু শাস্ত্র জানেন না। যদি হিন্দু শাস্ত্র পড়তেন, পুরান উপাখ্যান পড়তেন, তাহলে জানতেন যে গরু খাওয়াটা হিন্দুদের মধ্য়ে বহু প্রচলিত ছিল এবং ব্রাহ্মণরাই খেতেন। সেটা উনি জানেন না।’’বিকাশবাবুর কটাক্ষ, ‘‘যিনি বলেন গরুর ঘাড় দিয়ে সোনা বেরোয়, তাঁর কথার কোনও গুরুত্বই দিই না।’’