রাজ্যের উপনির্বাচনের ফলে যে বিজেপির কতটা ধাক্কা খেয়েছে তা মঙ্গলবার বিজেপির রাজ্য দফতরে সাংবাদিক বৈঠকই প্রমাণ করল। সম্প্রতি তিন কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ফল প্রকাশের পর উত্তর ২৪ পরগনার তিন তৃণমূল ত্যাগী বিধায়ক বিজেপি ছেড়ে ফের পুরানো ঘরে ফিরতে চলেছেন, এমন জল্পনার জল গড়ায়। তবে এই জল যে কতটা গড়িয়েছে তা টের পাওয়া যায় মঙ্গলবার বিকালে। জল্পনার কেন্দ্রে থাকা তিন বিধায়ক অর্থাৎ মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়, মুকুল-ঘনিষ্ঠ সব্যসাচী দত্ত এবং বিশ্বজিৎ দাস যে পদ্ম শিবিরেই আছেন সে কথা জানান দিতে রীতিমতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন বিজেপির সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন, কার্যত বিবৃতি দেওয়ার ঢঙে ওই বিধায়করা সর্বসমক্ষে ঘোষণা করেন যে তাঁরা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন না।
আরও পড়ুন: সরে গেলেন বৈশাখী, চরম সিদ্ধান্ত শোভন-বান্ধবীর
মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার অনেক পরে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান শুভ্রাংশু। ছেলে-বাবা ভিন্ন দলে থাকাকালীন মুকুল রায় বলতেন, শুভ্রাংশু নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেবে। তবে 'প্রত্যাশামতোই' কয়েক মাসের মধ্যে দিল্লি গিয়ে সদলবলে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন কাঁচরাপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক। শুভ্রাংশু এদিন বলেন, "এই সব রটিয়ে আমাকে যত না টার্গেট করা হচ্ছে, তার থেকে আমার বাবাকে বেশি টার্গেট করা হচ্ছে। কারণ, বাবার একটা সঙ্কল্প আছে। তা হল, ২০২১-এ তৃণমূল কংগ্রেসকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উৎখাত করা। সেই জন্য আমাকে টার্গেট করে ফোকাস করছে।"
আরও পড়ুন- পশ্চিমবঙ্গে নজির বিহীন ঘটনা, সাংবিধানিক সংকটের পথে রাজ্য
উল্লেখ্য, একদা মুকুলের হাত ধরে উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া অধিকাংশ কাউন্সিলরই ফের তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। ভাটপাড়া ছাড়া সমস্ত পুরসভারও দখলও নিয়েছে তৃণমূল। এরপরই রাজ্যের তিন বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে তৃণমূলের ১০০ শতাংশ জয়ের পর উত্তর ২৪ পরগনার তিন বিধায়কও বিজেপি থেকে পুরনো দলে ফিরতে চলেছেন বলে গত দু'দিন ধরে চর্চা শুরু হয়েছিল। এ বিষয়ে শুভ্রাংশুর বক্তব্য, "আমরা কাদের বলেছি যে তৃণমূলে যোগ দেব? আমরা নিজের ইচ্ছাতে বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। এই রাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করে থামব না। পুরসভাগুলি ফের হাতছাড়া হওয়া প্রসঙ্গে মুকুল-পুত্র বলেন, পুলিশ ও পেশি শক্তি দিয়ে দুরমুশ করা হচ্ছে।"
আরও পড়ুন- তৃণমূল রিগিং করেছে, আমাদের এজেন্টরা ভয়ে কথা বলেননি, আসল লড়াই একুশে: দিলীপ ঘোষ
অন্যদিকে, দীর্ঘ দিন জল্পনার পর বিজেপিতে যোগ দেওয়া সব্যসাচী দত্ত এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। দলবদল নিয়ে সব্যসাচীর বক্তব্য়, "আমরা যা করেছি। সজ্ঞানে করেছি এবং কোনও চাপ থেকে করিনি। আমি তখন বলেছিলাম যা করব লোকের সামনে করব। লুকিয়ে কিছু করব না। মাথা নিচু করে পিছনের দরজা দিয়ে কিছু করব না।" সব্যসাচীর মতোই বনগাঁর বিধায়ক বিশ্বজিত বলেন, "গত কয়েকদিন ধরেই বিজেপি থেকে আবার কিছু বিধায়ক তৃণমূলে ফিরছে এমন রটনা হচ্ছে। নীতি-আদর্শে বিচ্যুতি ঘটেছে তৃণমূলের। দলে আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতাম। ৩৪ বছরে বামেদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম। কিন্তু বামাদের সেই কাণ্ড আমরা মাত্র ৯ বছরেই ছাড়িয়ে গিয়েছিলাম। বাংলার মানুষ এই পরিবর্তন চায়নি। বাংলার মানুষের নিভিঃশ্বাস উঠছে।" বিশ্বজিতের দাবি, "নতুন করে দলবদলের কথা বলে ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে। এই দল থেকে ফিরে যাওয়ার কোনও কারণ নেই।"
আরও পড়ুন- এনআরসি ভীতিই ভোটে জিতেছে, মমতার বিশ্লেষণে সিলমোহর বিজেপিরও
এই তিন বিধায়ক এদিন যাই বলুক, বঙ্গ বিজেপির মনোবল নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মনে। তাঁরা মনে করছেন, সম্প্রতি রাজ্যে তিন বিধানসভার উপনির্বাচনে ১০০ শতাংশ পরাজিত হয়েছে বিজেপি। তাতেই প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। দিল্লির নেতাদের কাছে একদিকে যেমন কৈফিয়ত্ৎ দিতে হচ্ছে, তেমনই রাজ্যে নিচুতলার কর্মীদের মনোবল ধরে রাখাও কঠিন হচ্ছে। এসবের জন্যই তিন বিধায়ককে দিয়ে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বিবৃতির আকারে কার্যত এক প্রকার 'মুচলেখা' দেওয়ানো হল। এদিন প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ভারতীয় জনতা পার্টিতে যারা আসবেন তাঁদের সম্মান রয়েছে ও থাকবে। দলে এখন সাংগঠনিক প্রক্রিয়া চলছে। দল ছাড়া নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তাই এই বিধায়কদের হাজির করানো হল।"