২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের কৌশল রচনা করে চলেছে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে রাজ্যের শাসন ক্ষমতা হাতে পেতে করোনা আবহেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে পদ্ম শিবির। ইতিমধ্যে পাঁচটা ভার্চুয়াল জনসভায় অমিত শাহ এবং একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বক্তব্য রেখেছেন। দুর্নীতি, বিদ্যুতের মাশুলবৃদ্ধি সহ নানা ইস্যুতে প্রতিবাদ, বিক্ষোভও চলছে। এরই মধ্যে লৌহমানব সর্দার বল্লবভাই প্যাটেলের মতো বাংলার রূপাকার তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও আপাদ-মস্তক কংগ্রেসী বিধানচন্দ্র রায়কে ‘দলে টানতে’ মরিয়া হয়ে উঠেছে বঙ্গ বিজেপি। ১ জুলাই পালনে এবার তাই ঢাকঢোল পিটিয়ে নেমে পড়েছিল গেরুয়া শিবির। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এবার হয়ত মূর্তি বানানোর পরিকল্পনাও করে ফেলবে পদ্মপার্টি।
বিধানচন্দ্র রায়ের সঙ্গে বিজেপির জন্মদাতা জনসংঘের কোনওরকম সংযোগ ছিল বলে কেউ কখনও দাবিও করতে পারবে না। তবে রাজ্যবাসী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বিধানচন্দ্র রায়কে এখনও পয়লা নম্বরেই রাখে। আগামী দিনেও তার ব্যতিক্রম হওয়া এক রকম অসম্ভব। কিন্তু এবার যে বিজেপির অভিযান 'বিকাশ পুরুষ' বিধানচন্দ্র রায় তা অনেকটা পরিস্কার করে দিয়েছেন বঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজেই। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ১ জুলাই বিধানচন্দ্রের জন্ম ও মৃত্যু দিনে বিজেপির কার্মসূচি ও বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে এবার গেরুয়া শিবির বিধানচন্দ্র রায়কে 'হাইজ্যাক' করল বলে।
সর্দার বল্লবভাই প্যাটেলের মতো বিধান রায়কেও ‘বিকাশ পুরুষ’ হিসাবে সামনে রাখতে চায় পদ্ম শিবির। তাই তাঁকে উদাহরণ হিসাবে রাখতে চাইছে গেরুয়া বাহিনী। ১ জুলাই পৃথক ব্যানারে গেরুয়া শিবির আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। আবার কংগ্রেস ভবনে কেন এই দিনে বাম নেতৃত্ব গিয়েছে তা নিয়ে কটাক্ষ করতেও ছাড়েনি বিজেপি। অতএব বিধান রায়কে নিয়ে বিজেপির আরও নানা কর্মসূচি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
এ রাজ্যে উন্নয়ন নিয়ে বলতে গেলে বিধানচন্দ্র রায়কে উপেক্ষা করার সাহস কেউ দেখাবেন না। একদিকে স্বনামধন্য চিকিৎসক ও অন্যদিকে সফল প্রশাসনিক প্রধান। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে উৎসর্গ করে ‘বলিদান দিবস’ বা ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ যাই পালন করুক না কেন এ রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে বলার মত মুখ বিজেপির নেই। দু-একটা আসন পেলেও এই রাজ্যে কোনও দিন জনসংঘ বা বিজেপি ক্ষমতায় আসেনি। ফলে বিজেপির উন্নয়নের হাতিয়ার কেবল কয়েকটি কেন্দ্রীয় প্রকল্প। আর এর পাল্টা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূলও। ফলে বিধান রাতের মতো একটা মুখ তাঁদের বড় দরকার।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বা কেন্দ্রীয় স্তরের যে কোনও বিজেপি নেতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামকৃষ্ণ পরমহংস, স্বামী বিবেকানন্দ সহ একাধিক বাঙালি মণিষীর নাম স্মরণ করেই ভাষণ শুরু করেন। বিজেপি যে মনেপ্রাণে কতটা বাঙালীপ্রেমী তা বোঝাতে আরও নানা চেষ্টাও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কারণ সহজ, বিজেপি বাংলার সংস্কৃতি বোঝে না, বাঙালিদের দল নয়- এসব অস্বস্তিকর প্রচার বাজারে চালু আছে। তাছাড়া ২০১৯ নির্বাচনে অমিত শাহর রেলির সময় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে বিতর্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তাই রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, বিধানচন্দ্র রায়কে ‘মার্গ দর্শক’ করে বাঙালিয়ানা আরও জরদার করতে চাইছে বিজেপি। তাছাড়া তাঁরা ফের প্রমাণ করতে চাইছে যে বল্লবভাই প্যাটেলকে কাছে টানা কোনো বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ ছিল না, বরং তাঁরা প্রকৃতই বিরোধী কংগ্রেসী জনদরদী মানুষকে কাছে টানতে দ্বিধা করে না।
এদিকে বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করতে সিপিএমের হাত ধরেছে রাজ্য কংগ্রেস। বিধান রায়ের জন্ম ও মৃত্যু দিনে বিধানভবনে হাজির ছিলেন বামফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃত্ব। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এই মুহূর্তে রাজ্য কংগ্রেসের বেহাল দশা। মালদা, মুর্শিদাবাদ জেলা ছাড়া রাজ্যের অন্যত্র কংগ্রেসের তেমন একটা সাংগঠনিক অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতে বিধানচন্দ্র রায়কে দলে টেনে আপন করে নেওয়া অনেকটা সহজ বিজেপির কাছে। কিন্তু গেরুয়া বাহিনীকে একুশের ভোট বৈতরণী পার করতে বিধানচন্দ্র রায় আদৌ সফল হবেন কিনা তা বলবে আগামী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন