নির্বাচনের দামামা বাজতেই ব্রিগেডে সমাবেশ করল বাম ও কংগ্রেস। সঙ্গে রইল আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। এগিনের ব্রিগেড ঘিরে মানুষের উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা চোখে পড়ল। তবে বিশেষভাবে নজরবন্দি হল ‘ভাইজানে’র জনপ্রিয়তা। সমাবেশ স্থলে পৌঁছানো থেকে বক্তব্য রাখার সময় আব্বাসকে ঘিরেই স্লোগান উঠল। তিনিও সুর চড়িয়ে মমতকে জিরো করার ডাক দিলেন। মোদী সরকারকে কেন্দ্র থেকে উথখাতের আহ্বান জানালেন। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদার দাবি ব্রিগেডের বিশাল সমাবেশ দেখে ‘এখন সব চেয়ে বেশি আক্ষেপ করছেন মমতা।’ ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের পৃষ্ঠপোষক তৃণমূল নেত্রীকে তোপ দেগে বলেন, ‘বাংলার স্বাধীনতা কেড়েছেন মমতা, আমরা ওকে উৎখাত করবই’।
একই সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত অধীর চৌধুরীর সামনেই কংগ্রেসকে জোটের বার্তা দিয়েছেন আব্বাস সিদ্দিকি। বলেন, ‘তোষণ করতে নয়, ভাগিদার হতে এসেছি।’
ভরা ব্রিগেডে এদিন বর্কব্য রাখেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। বলেন, ‘তৃণমূল-বিজেপি তরজা গান করছে। ব্রিগেডের প্রচার নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এই সমাবেশ ঐতিহাসিক। মানুষকে শোষণ করছে। কোনও উস্কানিতে কান দিয়ে লাভ নেই। আমরা কাজ চাই।’ এরপরই তৃণমূল নেত্রীকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘উনি দিদিকে বলো, তারপর পাড়ায় পাড়ায় সব সমাধান করলেন। কিন্তু, এমন সমাধান করলেন যে পুরো দলটাই বিজেপি হয়ে গেল।’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধির চৌধুরী বলেন, ‘মোদী-মমতার রাজনৈতিক ডিএনএ এক। ওরা চাইছে বাংলায় তৃণমূল-বিজেপি ছাড়া আর কিছু থাকবে না। আমরা বলছি আগামীতে তৃণমূল-বিজেপি নয়, শুধু সংযুক্ত মোর্চা থাকবে।’
তবে বাম-কংগ্রেস ব্রিগেডে হইচই হল। অনেকদিন পর অক্সিজেন পাওয়ার আনন্দ লাল পতারাধারীদের। যদিও ব্রেগিডের খেলায় ম্যান অফ দ্য ম্যাচ আব্বাস সিদ্দিকি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন
‘
'ঝড় উঠেছে, এই ঝড় রুখতে হবে। করোনা মানুষের শরীরে বাসা বেঁধেছে। আর আমাদের সমাজে ২টি ভাইরাস বাসা বেঁধেছে। তাদের মারতে গেলে আপনাদের-আমাদের তৈরি ভ্যাকসিন দরকার।' বিজেপি-তৃণমূলকে নিশানা সিপিএম নেত্রী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী দেবলীনা হেমব্রমের।
'একদিকে দল বদলের লড়াই, এখানে দিন বদলের লড়াই। আমরা শিল্প গড়ার জন্য, ওরা শিল্প বেচে দেওয়ার জন্য। আমরা মানুষকে জুড়ি, আর ওরা আদিবাসী, মতুয়া সবার মধ্যে ভাগ করতে চায়। মানুষ যখন অনাহারে ছিলেন তখন আমরা বলেছিলাম মানুষকে খাদ্য দাও, এখন ভোটের আগে করছে, এটাই চালাকি। কৃষকের কথা ৩ মাস ধরে শোনেন না। যাঁরা লোহার ট্রেন ঠিক করে চালাতে পারে না, তাঁরা নাকি সোনার বাংলা গড়বে? আমরা সরকারে এলে চিটফান্ডের সম্মত্তি নিলাম হবে। এসএসসিতে নিয়োগ দুর্নীতি হবে না। উর্দির সম্মান পুলিশকে রক্ষা করতে হবে।'
'দিদি মোদীর খেলা এক দশক ধরে দেখেছি, এবার ওদের মাঠ থেকে নকআউট করতে হবে।' আহ্বান সেলিমের।
'কেউ কেউ বলল খেলা হবে। আর মোদীজি স্টেডিয়ামটাই দখল করে নিলেন। বসন্ত এসে গিয়েছে। পলাশ সহ লাল রঙা ফুল ফুটছে। তাই বামেদের কেউ আটকাতে পারবে না। কয়েকশ কর্মী খুন হয়েছেন, ভুয়ো মামলায় জড়ানো হয়েছে। লাল ঝান্ডাকে কেউ শেষ করতে পারেনি। বসন্ত মানে শুধু পলাশ নয়, সঙ্গে ফোট কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়াও। তাইতো আজ ব্রিগেডে এসেছেন আইএফএস-কংগ্রেসও।' বললেন মহম্মদ সেলিম।
'যখন নেতাজি আজাদ হিন্দ বাহিনী তৈরি করছিলেন সেই সময় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সাভারকার ইংরেজেদের বাহিনী পুষ্ট করছিলেন' দাবি ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের।
'গান্ধীজি বলেছিলেন ভগাবন সবাইকে সুবুদ্ধি দিন । তবে সবার নয়, এখন ৩ জনের সুবুদ্ধি চাই। এঁরা হলেন নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, মোহন ভগবত' শ্লেষ সিপিআই নেতা ডি রাজার। এছাড়াও তিনি বলেন, 'মোদী বলেছিলেন আমি প্রধানমন্ত্রী নই, প্রধান সেবক। জবাব দিন আপনি কার সেবক?' এরপরই তোপ দেগে তিনি বলেন, 'তৃণমূল সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। তৃণমূল-বিজেপি হটাতে হবে। সংযুক্ত মোর্চাকে জেতাতে হবে।'
“বাংলা সহ গোটা ভারতে বেকারত্ব বাড়ছে, যুবকরা দিশাহীন। আমাদের লুঠপাটের সরকার চাই না, জাতাপাতের সরকার চাই না। আড়াইশোর ওপর কৃষক মারা গিয়েছেন, কিন্তু তাতেও মোদী সরকারের টনক নড়েনি। 'হ' মানে হিন্দু, 'ম' মানে মুসলমান, যখন 'হাম' হয় তখনই ভারত তৈরি হয়।” বললেন সীতারাম ইয়েচুরি।
'করোনার নামে ব্যক্তিগত তহবিল খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর এখানে সারদা-নারদা। এরা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ', ব্রিগেডের মঞ্চে দাবি সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির।
'আমরা ভারতীয়, আমরা গর্বিত, ভিক্ষা নয় অধিকার চাই, এখন সব চেয়ে বেশি আক্ষেপ করছে মমতা', দাবি আব্বাসের
ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন আব্বাস সিদ্দিকি। মঞ্চে রয়েছেন, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই নেতা ডি রাজা। ছবি- পার্থ পাল

বামপন্থী ও তাদের শরিকদের বিধানসভা ভোটে ভোট দেওয়ার জন্য সরাসরি আহ্বান জানান ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের নেতা আব্বাস সিদ্দিকি। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে আব্বাসদের জোট এখনও হয়নি। আসন নিয়ে রফা না হওয়াতেই এখনও জোটের জট খোলেনি বলে জানা গিয়েছে। তবে এদিন ব্রিগেডে কংগ্রেসকে বার্তা দিয়ে আব্বাস বলেছেন, 'ভাগিদারি করেতে এসেছি, তোষণ করতে নয়।'
'আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন বামপন্থীরা, আগামী নির্বাচনে রক্ত দিয়ে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করব। দিদিমণির হাত থেকে ক্ষমতা চলে গেছে, ক্ষমতা কমিশনের হাতে চলে গেছে। একমাস পড় আমরা বাংলা দখল করব। বেকারদের কাজ দেব। প্রত্যেকের পেটে ভাত দেব।' ঘোষণা আব্বাসের।
'বাংলার স্বাধীনতা কেড়েছেন মমতা, আমরা ওকে উৎখাত করবই। তৃণমূল বিজেপির 'বি' টিম। কেন্দ্র থেকে মোদী সরকারকেও উৎখাত করতে হবে। আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে বামেরা। তাই যেখানে ওদের প্রার্থী থাকবে সেখানেই জোটকে ভোট দেবেন।' বললেন আব্বাস সিদ্দিকি।
'চাকরি চাইতে গিয়েছিল, মইদুল ইসলামকে পিটিয়ে মেরে দিল পুলিশ। বেকার যুবকদের মৃত্যু নিয়ে রসিকতা করছেন মুখ্যমন্ত্রী, মানুষ ভুলবে না'। বললেন অধীর চৌধুরী।
'এত বড় নির্বাচনে আমার এই প্রথম বক্তব্য রাখা। ওরা চাইছে বাংলায় তৃণমূল-বিজেপি ছাড়া আর কিছু থাকবে না। আমরা বলছি আগামীতে তৃণমূল-বিজেপি নয়, শুধু সংযুক্ত মোর্চা থাকবে। ব্রিগেডে আজ পরিবর্তনের রামধনু। দেখে যান মমতা মোর্চার ক্ষমতা। গণতান্ত্রিক পথে এসে গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করছেন মমতা-মোদী। ওদের দু'জনের রাজনৈতিক ডিএনএ এক। মোদী-মমতার কোনও ফারাক নেই।' ব্রিগেড থেকে এক যোগে মমতা-মোদীকে নিশানা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।
'ধর্মের নামে অসহিষ্ণুতা চলছে। গণতন্ত্র-পুঁজিবাদের বিকাশ একসঙ্গে হতে পারে না। খেলা- মেলা নয়, মানুষের জয় হবে। গণতন্ত্র ধ্বংস করা হচ্ছে। অনাহারে চা শ্রমিকদের মৃত্যু হচ্ছে। অবিলম্বে সব বন্ধ চা বাগান খুলতে হবে। লড়াই করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। তৃণমূল সরকারের পতন ঘটিয়ে মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।' ব্রিগেডে নিজের বক্তব্যে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে এই দাবি জানান আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য।
সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্যের মাঝেই ব্রিগেড সমাবেশে পৌঁছলেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের নেতা আব্বাস সিদ্দিকি। ভাষণের মাঝ পথেই বর্কব্য থামিয়ে আব্বাসকে স্বাগত জানালেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক।
'তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে তরজা গান চলছে। এই ব্রিগেড সমাবেশ যাতে প্রচার না পায় তার চেষ্টা হতে পারে। কিন্তু কোনও উস্কানিতে কান দিয়ে লাভ নেই। আমরা কাজ চাই। সরকারি. আধা সরকারি জায়গায় সব পদ পূরণের দাবি করছি আমরা। বিকল্প নিয়ে যেতে হবে মানুষের কাছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা হচ্ছে। আমাদের লড়াই খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থে।' ব্রিগেডের ভাষণে বললেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
ভরে উঠেছে ব্রিগেড। উপস্থিত সমাজের নানা অংশের খ্যাতনামারা।
বামেদের ব্রিগেডে যোগ দিয়েছেন তরুণ মজুমদার। তিনি বলেন, “গণনাট্য সময় থেকে আমরা যোগ দিয়েছে। আমাদের শেকড় অনেক পুরোনও। সেই সময় শুম্ভু মিত্ররা ছিলেন। এখন যারা যোগ দেন তারা অনেক কিছু ভেবে নিয়, স্বার্থ দেখে যোগ দেন।” টুম্পা সোনা গান প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক বলেন, গানের ক্ষেত্রে সুরের চেয়ে কন্টেন্ট আগে। এই গানের প্যারোডিতে আমি কোনও দোষ দেখি না।

এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ
বঙ্গে আজ সকলের নজর রয়েছে বিগ্রেডে। ইতিমধ্যেই দূর-দূরান্তের জেলা থেকে ময়দানে আসতে শুরু করেছে একাধিক বাস-ট্রাক। হেঁটে ব্রিগেডের দিকে রওনা দিতে শুরু করেছেন বাম ও কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। ব্রিগেডকে কেন্দ্র করে শহরের রাজপথে নেমেছে জনতার ঢল। রবিবার শহরের যান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একাধিক পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ। রবিবার ভোর পাঁচটা থেকে দুপুর দু'টো পর্যন্ত শহরের ভিতরে সমস্ত রকম পণ্যবাহী লরি চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বর-সহ ময়দান সংলগ্ন বেশ কিছু এলাকায় গাড়ি পার্কিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ

এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ

এক্সপ্রেস ফোটো- শশী ঘোষ
সকাল ৭টার ব্রিগেড
কর্মী-সমর্থকদের ঠিক কী জানিয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য?
একুশের নির্বাচনের প্রাক্কালে এই ব্রিগেডে হাজির করানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। চিকিৎসকরা সায় না দেওয়ায় রবিবার ব্রিগেডে আসা হচ্ছে না অসুস্থ বুদ্ধবাবুর। কিন্তু তিনি না আসতে পারলেও বার্তা দিয়েছেন কমরেডদের জন্য। তিনি বলেছেন, “ব্রিগেড সমাবেশ নিয়ে বিভিন্নভাবে খবরাখবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। শুনে বুঝতে পারছি বহু মানুষ সমাবেশে আসবেন এবং অনেকে এসে গেছেন। বড় সমাবেশ হবে। এরকম একটা বৃহৎ সমাবেশে যেতে না পারার মানসিক যন্ত্রণা বোঝানো যাবে না। মাঠে ময়দানে কমরেডরা লড়াই করছেন আর আমি শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ মেনে চলেছি। ময়দানে মিটিং চলছে আর আমি গৃহবন্দী যা কোনদিন কল্পনাও করতে পারিনি। সমাবেশের সাফল্য কামনা করছি।”
সমাবেশের আগে টুইটে দলের কর্মীদের জন্য বিশেষ বার্তা সূর্যকান্ত মিশ্রের

এক্সপ্রেস ফোটো- পার্থ পাল