তৃণমূলের ইতিহাসে যে জয় চিরকাল অধরাই ছিল, বৃহস্পতিবার উপনির্বাচনের ফলাফল তাই এনে দিল। কালিয়াগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে কঠিন জয় হাসিল করার পর এমন প্রতিক্রিয়াই জানালেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। খড়গপুরেও জয়ের কাছাকাছি তাঁর দল এবং করিমপুরেও ক্রমশ ব্যবধান বাড়াচ্ছে জোড়াফুল প্রতীক। কিন্তু সব মিলিয়ে একশো শতাংশ সাফল্য কীভাবে সম্ভব হল? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিজেপির ঔদ্ধত্যের রাজনীতিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই জয়ের পিছনে শুধুমাত্র এনআরসিকেই একমাত্র কারণ হিসেবে মানতে নারাজ মমতা। তিনি বলেন, বিজেপির আমলে দেশজুড়ে বেকারত্ব, অর্থনীতির বেহাল অবস্থা, ভিন রাজ্যে বাংলার মানুষদের খুন হওয়ার ঘটনা সবকিছুই কারণ হিসেবে কাজ করেছে। মমতা আরও বলেন, বাংলার মানুষ ভালোবাসতে জানে, তাঁরা হিংসাকে প্রশয় দেয় না।
আরও পড়ুন: Live: খড়গপুরেও জয়ী তৃণমূল, এখনও এগিয়ে করিমপুরে
'বিজয়নী' তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "২১ বছরে কালিয়াগঞ্জ বা খড়গপুরে কিন্তু আমরা একটা সিটও পাইনি কোনওদিন। এই প্রথম ওখানকার মানুষ আমাদের ভালোবেসে, বিশ্বাস রেখে ভোট দিয়েছেন। আমরা মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এটা মা-মাটি-মানুষের জয়। আমরা নম্রভাবে মানুষের কাজ করে যেতে চাই। ওখানের কর্মীরাও ভালো কাজ করেছে। সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে ভোট দিয়েছেন। এই জয় বাংলার সভ্যতা, সংস্কৃতির জয়।"
এরপরই বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে মমতা বলেন, "লোকসভা ভোটে বিজেপি যা করেছি তা নিয়ে এখন কথা বলার কোনও অর্থ নেই। সেই সময় ইভিএম মেশিন কারচুপি করা হয়েছিল। কালিয়াগঞ্জ, খড়গপুরের বিপুল ব্যবধানকে পেরিয়ে এই যে জয়, তা বিজেপির এনআরসি, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরির কারণেই। ভিন রাজ্যে বাঙালিদের যেভাবে খুন করা হয়েছে, তার জবাব দিয়েছে মানুষ। বাংলার মানুষ সবাইকে নিয়ে চলে। বিজেপির যে ঔদ্ধত্যে, অহংকার তার পরাজয় হয়েছে। আমরা বদলা নয়, বদল নিয়ে এসেছি।"
আরও পড়ুন: খড়গপুরে ঐতিহাসিক জয় তৃণমূলের, প্রশ্নের মুখে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্ব
দেশের অর্থনীতি, এনআরসি, সরকারি সংস্থার বেসরকারীকরণ, ব্যাঙ্কিং সমস্যা এবং বেকারত্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিই বিজেপির মুখ থুবরে পড়ার কারণ, এমনটাই মত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অন্যদিকে, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীপদে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার বিষয়ে মমতা বলেন, "খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ে এই অনুষ্ঠানটি হচ্ছে। ওরা এখনও যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি। আমার কাছে সরকারিভাবে এখনও কিছু ইনফরমেশন আসেনি। তিন বিরোধী যেভাবে একযোগ হয়েছে তা বিজেপির বিপর্যয়। লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কয়েকটি আসন জিতে বিজেপি বলেছিল ২০২১-এ তৃণমূল হবে সাফ। আমি বলছি ২১-এর আগে এই ১৯-এর ধাক্কা সামলাক আগে।"
অন্যদিকে, বিধানসভা উপনির্বাচনের এই জয়ের পর তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বিজেপি বিদায়ের প্রথম ঘন্টা বাজল, আমাদের আরও সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে, মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। মানুষ বুঝতে পেরেছেন যে বাংলায় বিজেপি কখনই তৃণমূলের বিকল্প হতে পারে না। বিজেপিকে পুরো প্রত্যাখ্যান করেছে রাজ্যের মানুষ। উন্নয়নের জয় হয়েছে।"