'বাংলায় এনআরসি হবেই', এই অমিত হুঙ্কারই তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে পরাজয়ের কারণ, জয়লাভের পর এমনটাই জানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে জয় চিরকাল অধরাই ছিল, একশো শতাংশ সাফল্য কীভাবে সম্ভব হল? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিজেপির ঔদ্ধত্যের রাজনীতি এবং এনআরসিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: মুকুলের ভূমিকায় সফল মমতা
এমনকী, এনআরসির প্রকোপে পদ্মশিবিরের হাতছাড়া খড়্গপুরের কেন্দ্রটিও। খড়্গপুরে এবার সম্মানের লড়াই ছিল বিজেপি সাংসদ ও রাজ্য সভাপতি তথা ওই কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক দিলীপ ঘোষের। কিন্তু সেই লড়াইতে ঘাসফুল শিবিরের কাছে গো-হারা হারলেন দিলীপ ঘোষ। ৬ মাস আগে লোকসভা নির্বাচনেও দিলীপ ঘোষ খড়্গপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪৫ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু, সেই এগিয়ে থাকা আর বজায় রইল না। বরং বিজেপির জয়ের ব্যবধান নিশ্চিহ্ন করে উল্টে ২০ হাজার ৮১১ ভোটে ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে নিল তৃণমূল। অন্যদিকে, লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জের বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী প্রায় ৫৮ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেই কালিয়াগঞ্জ বিধানসভায় এবার জয়লাভ করল ঘাসফুল শিবির। ২৪১৪ ভোটে বিজেপি প্রার্থী কমল চন্দ্র সরকারকে পরাজিত করলেন তৃণমূলের প্রার্থী তপন দেব সিং।
এদিকে, খড়গপুর সদরের যে কেন্দ্রে বিরাট ব্যবধানে পাপড়ি মেলেছিল পদ্ম, সেই কেন্দ্রও হাতছাড়া। বিজেপি প্রার্থী প্রেমচন্দ্র ঝা-কে ২০৮৫৩ ভোটে হারালেন তৃণমূলের প্রদীপ সরকার। তিন কেন্দ্রেই তৃতীয় স্থানে রইল বাম-কংগ্রেস জোট। আর তৃণমূলের এই হ্যাট্রিকের কারণ যে এনআরসিই, জয়ের পর সেকথাই স্মরণ করালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "আমরা হিন্দু, রাজবংশি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, আদিবাসী সব ভোট পেয়েছি। খড়গপুরে অ-বাঙালিদের ভোটও পেয়েছি। এতবছর ধরে এরা এখানে আছে, তাঁরা শান্তিতে বাস করতে চায়। স্বাধীনতার এত বছর পরে কেউ যদি বলে ভারতের নাগরিক কি না তা প্রমাণ করতে, এটা কী ঠিক? এনআরসির নামে বিজেপি আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছে। তার জবাব দিয়েছে মানুষই।"
আরও পড়ুন: বিজেপিকে হারিয়ে তৃণমূলকে স্বস্তি দিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী
বিজয়নী’ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২১ বছরে কালিয়াগঞ্জ বা খড়গপুরে কিন্তু আমরা একটা সিটও পাইনি কোনওদিন। এই প্রথম ওখানকার মানুষ আমাদের ভালোবেসে, বিশ্বাস রেখে ভোট দিয়েছেন। আমরা মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এটা মা-মাটি-মানুষের জয়। আমরা নম্রভাবে মানুষের কাজ করে যেতে চাই। ওখানের কর্মীরাও ভালো কাজ করেছে। সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে ভোট দিয়েছেন। এই জয় বাংলার সভ্যতা, সংস্কৃতির জয়।” যে এনআরসি অস্ত্রে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর তুলেছিলেন, আজ সেই অস্ত্রই যে 'বুমেরাং' হয়েছে, সে কথা স্বীকার করেছেন বিজেপি নেতারাও। কালিয়াগঞ্জের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী কমল চন্দ্র সরকার বলেন, "এনআরসি পরাজয়ের কারণ অবশ্যই। আমরা মানুষের কাছে গিয়ে বিষয়টিকে সঠিক ভাবে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। মানুষ ভয় পেয়েছে। সংখ্যালঘু ভোট সব তৃণমূলের দিকে গিয়েছে।"
আরও পড়ুন: তিনে তিন! লোকসভার ধাক্কা সামলে একশ শতাংশ ঘুরে দাঁড়াল তৃণমূল, পরাজিত বিজেপি
একই সুর করিমপুরের প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারের গলায়। পদাঘাতের কেন্দ্রে প্রায় ২৪ হাজার ভোটে পরাজিত এই বিজেপি প্রার্থী বলেন, "এনআরসি অবশ্যই একটা কারণ। তৃণমূল মানুষের কাছে গিয়ে গিয়ে এনআরসি নিয়ে মিথ্যা কথা রটিয়েছে। আরেকদিকে বাম-কংগ্রেস ভোট গিয়েছে তৃণমূলে।" অন্যদিকে, জনসংযোগকে হাতিয়ার করে তিন কেন্দ্রে জয় পাওয়া তৃণমূলের আস্থাভাজন নেতা শুভেন্দু অধিকারি বলেন, "আমরা মানুষের কাছে গিয়ে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছি। লোকসভা নির্বাচনে কিছু নেতা মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কালিয়াগঞ্জ এবং অন্যান্য জায়গায়। আমরা যে তাঁদেরকে সমর্থন করি না, তা মানুষকে জানিয়েছিলাম। মানুষ আমাদের বিশ্বাস করেছেন।"