দিল্লির জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে নেৃতৃত্ব দেওয়ায় প্রচারের আলোয় এসেছিলেন ঐশী ঘোষ। মাথা ফেটেছিল, ব্যাপক মারধর করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির পুঁজিকে সম্বল করেই বাংলার ভোট ময়দানে ঐশী। শুধু তাই নয় গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের জেতা আসনেই দল তাঁকে প্রার্থী করেছে। উল্লেখ্য, সিপিএম এবার বহু বিধানসভা কেন্দ্রেই যুবদের প্রার্থী করেছে।
পশ্চিম বর্ধমানের জামুরিয়ার ১০ নম্বর বাকশিমুলায়ায় গিয়ে দেখা গেল পদযাত্রা করছেন সিপিএম প্রার্থী ঐশী। সঙ্গে প্রবীণ সিপিএম নেতৃত্বও রয়েছেন। লকডাউনের সময় জামুরিয়ার বিধায়ক জাহানারা খানকে তাঁর বিধানসভা এলাকায় দেখা যায়নি বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। তাছাড়া এই কয়লাখনি এলাকায় জলের তীব্র সমস্যা রয়েছে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বিজেপি এই কেন্দ্রে এগিয়েও ছিল। সেই সব বোঝা মাথায় নিয়েই প্রচার করছেন জেএনইউর এই প্রাক্তনী।
জেএনইউর আন্দোলন আর ময়দানে সরাসরি লড়াই, কেমন দেখছেন?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে ঐশী বলেন, "জেএনইউ ও ময়দানে লড়াইতে তফাত অনেকটা। তবে আবার লড়াই দুটো জায়গাতে সমানও। ওখানে ছাত্র-ছাত্রীদের ইস্যু নিয়ে লড়াই করেছি এখানে মানুষের লড়াই। ছাত্র-ছাত্রী, যুব সম্প্রদায়, শ্রমিক, মহিলা, সংখ্য়ালঘুদের জন্য লড়াই। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিখেছি মানুষের জন্য লড়াই সামনে থেকে করতে হবে। জামুরিয়ার মানুষের রুটি-রুজির কথা, এখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের কথা, লৌহ-ইস্পাত, কয়লাখনি, শ্রমিকরাও রয়েছেন। জামুরিয়া মিশ্র এলাকা, সমস্যা ও আপদে-বিপদে দাঁড়িয়ে থাকার লড়াই এখানে।"
পদযাত্রা করছেন। বাড়িতে মাসিমা, কাকিমা ডাক দিয়ে ঢু মারছেন ঐশী। হাতজোর করে ভোট দেওয়ার আবেদন করছেন দোকানীদের। ঐশীর কথায়, "প্রচারে খুব ভাল সাড়া পাচ্ছি। সংযুক্ত মোর্চাকে ক্ষমতায় আনতে হবে। এখন মানুষকে কাজ পেতে টাকা দিতে হয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে দেয়নি। গণতন্ত্রের হত্যা করা হয়েছে। বিজেপি সাংসদরা নিজের স্বার্থে রাজনীতি করছেন। মানুষের রুটি-রুজি, পানীয় জল, দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন মেটানোই আমাদের বিকল্প।"
জামুরিয়ায় সিপিএমের বিধায়ক ছিলেন। যখন আপনি প্রচার করছেন সেই আট নম্বর বাকশিমুলিয়ার বাসিন্দারা বলছেন, লকডাউনে স্থানীয় বিধায়ককে দেখা যায়নি। এই প্রশ্নে অস্বস্তিতে পড়লেও ঐশী বলেন, "সিটিং বিধায়ক অসুবিধার মধ্যে এখানে কাজ করেছেন।" তবে জেএনইউর প্রাক্তনীর প্রতিশ্রুতি, "আমরা দৃঢ়ভাবেই কাজ করব। জল থেকে বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে সামনে থেকেই করব। এখানে সংযুক্ত মোর্চার নেতৃত্বে বিকল্প এলে পুরো পরিবর্তন আসতে হবে।" শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ঐশীর বক্তব্য, "শিক্ষা ক্ষেত্রে গত ১০ বছর নানা দুর্নীতি হয়েছে। আদিবাসী কলোনীতে তাঁদের ভাষায় পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁদের ভাষায় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে হবে। জামুরিয়া থেক কলেজে পড়তে দূরদুরান্তে যেতে হয়।"
ব্রিগেড সমাবেশ হওয়ার আগে পর্যন্ত তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির লড়াই দেখেছিলেন রাজনৈতিক মহল। কিছুটা পরিস্থিতি বদল মনে হলেও মূল লড়াই তৃণমূল-বিজেপির বলেই এখনও মনে করছে অভিজ্ঞমহল। তবে ঐশীর দাবি, "বিজেপি বলে কোথাও কিছু নেই।" ঐশী বলেন, "মিডিয়ার পর্দাতেই দেখানো হচ্ছে তৃণমূল-বিজেপির লড়াই। এখানে প্রাক্তন তৃণমূল ও বর্তমান তৃণমূলের লড়াই। বিজেপি কোথাও নেই। লড়াইটা মানুষের। মানুষকে সামনে রেখেই সরকার গঠন হবে। মানুষকে সামনে রেখেই আগামী দিনের লড়াই হবে।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন