আমফান ত্রাণের অর্থ নিয়ে এবার বড় রকমের চাপান-উতর শুরু হয়ে গিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার পর থেকে অধিকাংশ তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত পঞ্চায়েত কর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। প্রায় সর্বত্রই ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে। কোথাও বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা, কোথাও বা বঞ্চিত সাধারণ মানুষ বিক্ষোভে শামিল হচ্ছে। ২০ হাজার টাকা তো দূরের কথা একটা ত্রিপলও জোটেনি অনেকেরই। এরমধ্যে আবার বিজেপির কয়েকটি গ্রামপঞ্চায়েত ও সদস্যদের বিরুদ্ধে ত্রাণ দুর্নীতির অভিযোগ করল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির বক্তব্য, তৃণমূল চোর একথা জণগন বুঝে গিয়েছে, তাই এবার বিজেপিকেও চোর বলে রটাতে চাইছে।
এর আগে দেখা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম, দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক এলাকা, হুগলি, হাওড়া সহ বিভিন্ন জায়গায় আমফান ঘূর্ণিঝড়ের ত্রাণের অর্থ নিয়ে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। এমনকী কুলতলিতে দুটি রাজনৈতিক খুন এবং অশান্তির পিছনেও আমফান ত্রাণের টাকার ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এরই মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনায় সোমবার কনিয়াড়া ও মঙ্গলবার ধর্মপুর গ্রামপঞ্চায়েতে বিজেপির বিরুদ্ধে আমফান ত্রাণের দুর্নীতি নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, শুধু তাদের নয় বিজেপির গ্রামপঞ্চায়েতও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন- প্রশান্ত কিশোরের “দিদিকে বলো” কে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে “বাপ কে বলো”
বুধবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বিজেপির দুর্নীতি নিয়ে তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, "এই জেলায় ৪টি গ্রামপঞ্চায়েতে বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে। এই চারটে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতি সদস্য ৩০-৩৫ জন আত্মীয়-স্বজনকে ত্রাণের টাকা পাইয়ে দিয়েছে। কোনও পঞ্চায়েতে আমাদের ২৫ জন বিজেপির ৭, আবার কোথাও আমরা ১৮ এবং ওরা ৫। এই সব ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি করেছে বিজেপি সদস্যরা। লুটে-পুটে খেয়েছে।"
আরও পড়ুন- ত্রাণ দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ক্ষোভের আগুনে ফুঁসছে ক্ষতিগ্রস্তরা
সম্প্রতি আমফান দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হওয়ায় নন্দীগ্রামে ২০০ জনকে শোকজ করে তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার তাঁদের মধ্যে ২৫ জনকে দল সাসপেন্ড করে। উত্তর ২৪ পরগনাতেও যে আমফানের ত্রাণ নিয়ে তৃণমূল সদস্যরা দুর্নীতি করেছে তা-ও স্বীকার করে নিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, "দলের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আমাদের মধ্যেও দুর্নীতি হয়েছে। আমরা যদি প্রথম দিন জানতে পারতাম এরকম করবে তাহলে দলের একজন নেতাকে সেখানে বসিয়ে দিতাম। সে নজর রাখত। আমাদের সদস্যরাও লুটেপুটে খেয়েছে। যে পেরেছে টাকা নিয়ে নিয়েছে। আমরা তাদের খুঁজে খুঁজে বের করছি। এই জেলায় ইতিমধ্যে ১২ জনকে শোকজ করা হয়েছে। এদের দল থেকে বহিস্কার করা হবে। কেউ আটকাতে পারবে না। আমি তো বিডিও-র কাছ থেকে তালিকা নিয়েছি। ওই তালিকা ধরে দুর্নীতি ধরা হচ্ছে।" মন্ত্রীর দাবি, "আমাদের জেলায় সাসপেন্ডের তালিকা দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। আমরা তাড়িয়ে দিতে পারি, কিন্তু বিজেপি কখনও পারবে না। বিজেপির টাকার ভাগ ২৫ শতাংশ জেলা, ২৫ শতাংশ রাজ্য, বাকিটা নিজেদের কাছে রাখে।"
আরও পড়ুন- নারদকাণ্ড: শোভন বাদ, তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেই নোটিস মুকুলকে
তবে গেরুয়া শিবিরের দাবি, নিজেরা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলে বিজেপির বিরুদ্ধে অযথা মিথ্যা রটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। খাদ্যমন্ত্রীর মুখে দুর্নীতির অভিযোগ শুনে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, "প্রথম কথা আমি চোর বলে তোমরাও চোর বলে রটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। তাছাড়া আমাদের পঞ্চায়েতগুলির কোনও ক্ষমতাই নেই। সারা রাজ্যে বিজেপি যা গ্রামপঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি চালায় তার সমস্ত ক্ষমতা শিফট করে নিয়েছে বিডিও দফতর। তালিকা তৈরি করছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাহলে দুর্নীতিটা করবে কোথা থেকে? যদি কোনও দুর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে ওনার হাতে সরকার, ওনার হাতে প্রশাসন, ওনার হাতে পুলিশ, দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। কে তৃণমূল, কে বিজেপি না দেখে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।" সায়ন্তনের কথায়, "জণগন বুঝে গিয়েছে কে চোর। এখন আমি চোর, তুমি সাধু নও সেটা প্রমাণ করতে উঠে পেড়ে লেগেছে তৃণমূল। তাতে কোনও লাভ নেই।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন