ভোট রাজনীতির জন্য দুর্গাপুজোতে রাজ্যের ছোটবড় ক্লাবগুলোকে টাকা দেওয়া হচ্ছে, এই নিয়ে সরব বিরোধীরা। এর মধ্যেই বিজেপি মনে করছে তাদের "চাপের" কাছে নতি স্বীকার করেছে তৃণমূল। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম প্রত্যেকেরই দাবি, এই অর্থ প্রদানে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণার সময় বলেই দিয়েছেন, আত্মমর্যাদা ও সুনাম রক্ষার জন্যই এই অর্থ প্রদান। তবে ক্লাবগুলো সাধুবাদ জানালেও অনেকে অভিমত দিয়েছেন, বড় পুজোগুলোকে এই অর্থ না দিয়ে ছোট পুজো কমিটিগুলোকে সাহায্য করলে ভাল হত।
এর আগে সাধারণের করের টাকায় ক্লাবগুলোকে কোটি কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে চালু রয়েছে ইমাম ভাতা। এবার লোকসভা নির্বাচনের আগে ২৮,০০০ পুজো কমিটিকে ১০,০০০ টাকা করে অর্থ বরাদ্দের কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতায় ৩,০০০ ও জেলার ২৫,০০০ ক্লাব এই আর্থিক সাহায্য পাবে। এই ঘোষণায় অবধারিতভাবেই রাজনৈতিক চাপানো-উতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। শুধুই কী পুজোয় আর্থিক সহায়তা, না এর পিছনে অন্য অর্থ রয়েছে তা নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন বিরোধীদের।
আরও পড়ুন: পুজো কমিটিগুলিকে উপহার মুখ্যমন্ত্রীর, ২৩ অক্টোবর কার্নিভাল
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখলেও বিজেপি মনে করছে রাজ্য সরকারের এই অর্থ প্রদান তাদের জয়। বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেন, "গতবার দুর্গাপুজো বন্ধ করে মহরমের মিছিল চালু করার পাপ খন্ডন হচ্ছে। কিন্তু জনগণের করের টাকা বা ধারের টাকা দিয়ে পাপ খন্ডনের চেষ্টা করছেন। এই টাকা কোনও পুজো প্যান্ডেলের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ ওই ১০,০০০ টাকা বাদেও সমাজের দানে সবাই পুজো করছে। এই টাকা অন্য জনকল্যাণমূলক কাজে লাগানো যেত। শুধু চটকদারি আর নিজের ভোট ব্যাঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এর তীব্র নিন্দা করছি। আমরা মনে করছি এটা সরকারি টাকার অপচয়।"
রাজ্য কংগ্রেসও মনে করছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে "দান-খয়রাত" চলছে। দলের রাজ্য সভাপতি অধীর চোধুরী বলেন, "বেকার ছেলেমেয়েদের কাজ তো দিতে পারেননি, সরকারি কোষাগার ভেঙে খরিদ করার ব্যবস্থা করছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, আর্থিক সংকটের জন্য বনধ করতে পারছি না। আর্থিক সংকটে ভুগছি। আর্থিক সংকটে ভুগলে এমন দানছত্র কীভাবে করেন? এর আগে ইমাম ভাতা দিয়ে মুসলমানদের ভোট, এবার হিন্দুদের জন্য পুজোয় দান। বিজেপিকে আটকানোর জন্যই এই দান-খয়রাত। সরকারি টাকা দিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি হচ্ছে।"
সিপিএমের শতরূপ ঘোষ বলেন, "মাঝেরহাট ফ্লাই ওভারের জন্য তিন কোটি টাকা ছিল না। এদিকে পুজো কমিটিকে ২৮ কোটি টাকা দেবেন। এবার থেকে কলকারখানা থেকে উন্নয়নের ভার নেবেন পুজো কমিটি। পুজোটাকে পুজো হিসাবে দেখছেন না। তাহলে সরাসরি বলে দিলেই হয়, ভোট পাওয়ার জন্য এই অর্থ প্রদান করছেন।"
পুজো কমিটিরা প্রত্যাশিতভাবেই এই ১০,০০০ টাকা দানকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। দেশপ্রিয় পার্ক পুজো কমিটির সাধারন সম্পাদক সুদীপ্ত কর বলেন, "অনেক ছোট কমিটি আছে, যারা এই ১০,০০০ টাকার দ্বারা উপকৃত হবে। আমরাও কৃতার্থ। তবে আমার মতে অনেক অনেক বড় কমিটি এত বেশি বাজেটে পুজো করে, সেই টাকা অন্যদের সাহায্যে লাগলে তাদের মান বাড়ত।"