Advertisment

লোকায়ুক্তের অফিসই নেই! জানতেন?

বুধবার খাদ্য ভবন চত্বরে ব্লক-এ ভবনের নিরাপত্তা কর্মী থেকে কেয়ারটেকার, বিভিন্ন অফিসের আধিকারিক-কর্মীর কাছে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, কেউই জানেন না লোকায়ুক্তের কোনও অফিসের খবর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
block -a

এই ভবনেই রয়েছে লোকায়ুক্তের অফিস। যা তন্ন করেও খুঁজে পাওয়া গেল না।

লোকায়ুক্ত বিলের সংশোধন নিয়ে রাজ্য-রাজনীতি উত্তাল। বুধবার বিধানসভার বিএ কমিটিতে ছাড়পত্র পেয়েছে লোকায়ুক্ত সংশোধনী বিল, যা পেশ হবে বৃহস্পতিবার। কিন্তু কলকাতায় লোকায়ুক্তের অফিস কোথায় কারও জানা আছে? কোথায় অভিযোগ করবেন কেউ কি তা জানেন? সেখানে অভিযোগের বিচারই বা কে করবেন? বুধবার এসবের উত্তর খুঁজতে বেরিয়েছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা ।

Advertisment

ভবনী ভবনের দফতর ৯ বছর আগেই উঠে এসেছিল মির্জা গালিব স্ট্রীটের রাজ্য খাদ্য ভবনে। বুধবার খাদ্য ভবন চত্বরে হন্যে হয়ে খোঁজাখুঁজি করা গেল লোকায়ুক্তের অফিস। শুরুতে মিলল একটি নির্দেশিকা বোর্ড। ব্লক-এ-র ফোর্থ ফ্লোরে অফিস, লেখা রয়েছে ওই বোর্ডে।

সেই ফোর্থ ফ্লোরে গিয়ে দেখা গেল, কোথায় কী! ওই বোর্ডই সার, সেখানে কোনও অফিস-ঘর নেই, নেই কর্মচারী, কোনও বিচারপতি তো দূরস্থান। মানুষ কোথায় অভিযোগ জানাবেন? আসলে বিধানসভায় সংশোধনী বিল পেশ হতে চললেও আদপে এই রাজ্যে লোকায়ুক্তের যে এই মুহূর্তে কোনওরকম অস্তিত্বই নেই, তা একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেল এদিন।

publive-image এই বোর্ডেই লেখা রয়েছে ব্লক-এ-র ফোর্থ ফ্লোরে অফিস লোকায়ুক্তের। ছবি: জয়প্রকাশ দাস

বুধবার খাদ্য ভবন চত্বরে ব্লক-এ ভবনের নিরাপত্তা কর্মী থেকে কেয়ারটেকার, বিভিন্ন অফিসের আধিকারিক-কর্মীর কাছে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, কেউই জানেন না লোকায়ুক্তের কোনও অফিসের খবর। বরং তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন, লোকায়ুক্ত কী, সেখানে কী হয়? ফোর্থ ফ্লোর অর্থাৎ পাঁচ তলায় গিয়ে দেখা গেল পিডবলিউডি-র একটি অফিস রয়েছে।

সে অফিসের কর্মীরা লোকায়ুক্তের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লেন। ঘণ্টাখানেক সময় ধরে খোঁজার পর রাজ্য তথ্য আয়োগ দফতরে হাজির হতেই লোকায়ুক্ত বলে যে কিছু একটা ছিল, সেটা অন্তত বোধগম্য হল। ওই অফিসের ভিতরে রিসিভ সেকশনে জনা সাতেক কর্মী বসেছিলেন। লোকায়ুক্তের অফিস কোথাও খুঁজে না পেয়ে সেখানে গিয়ে লোকায়ুক্তের কথা জিজ্ঞাসা করতে তাঁরা সবিস্ময়ে একে অপরের দিকে তাকানো শুরু করলেন। তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, অফিস নেই, লোকজন নেই, বিচারপতি নেই। একজন ক্লার্ক আছেন। তিনি আজ নেই। পরে আসবেন।

জানা গেল, পশ্চিমঙ্গ লোকায়ুক্তে এখন মাত্র দুজন কর্মী রয়েছেন। সুমন হালদার ক্লার্ক, আর সৌরীন ব্রহ্মচারী, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তবে তাঁরা বসেন তথ্য আয়োগ দফতরে। সেখানকার কাজ সামলান। এর আগে আরও যে সব কর্মী ছিলেন তাঁদের অন্য সরকারি দফতরে নিয়োগ করা হয়েছে। ওই তথ্য আয়োগ দফতরেই দেখা মিলল সৌরীন ব্রহ্মচারীর। তিনি বললেন, "আমি ও সুমন হালদার দুজন রয়েছি লোকায়ুক্তে। তবে এখন কাজ করছি তথ্য আয়োগে।" এ ছাড়া লোকায়ুক্ত নিয়ে আর কিছু বলতে পারবেন না বলেও জানিয়ে দিলেন তিনি। আর সুমনবাবু এদিন অফিসে আসেননি।

এই হল লোকায়ুক্তের প্রকৃত হাল। অর্থাৎ এঁরা দুজনও এখন অন্য দফতরের কর্মী হিসাবে কাজ করছেন। লোকায়ুক্ত কার্যত কর্মীশূন্য।

publive-image এই তথ্য আয়োগে এখন কর্মরত রয়েছেন লোকায়ুক্তের দুই কর্মী।

জানা গিয়েছে, প্রায় ৯ বছর ধরে এ রাজ্যে লোকায়ুক্তের কোন ভূমিকা নেই। এখানে শেষ বিচারপতি ছিলেন হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সমরেশ বন্দোপাধ্যায়। তাও প্রায় ৯ বছর হয়ে গিয়েছে। আগের সরকারের আমলে বেশ কিছু অভিযোগের মীমাংসা করেছিলেন তিনি। তিনি চলে যাওয়ার পর হাজার হাজার অভিযোগপত্র জমা পড়েছে। এখন তো আর অভিযোগ আসার অফিসই নেই। সমরেশবাবুর পর আর কোনও বিচারপতি নিয়োগ করেনি রাজ্য। ক্ষমতায় আসার পর পর ২০১১ সালে বেশ কয়েকবার লোকায়ুক্তের ব্যাপারে খোঁজ খবর করেছিল রাজ্য প্রশাসন। মির্জা গালিব স্ট্রীটে অফিস আসার পর অনেকে আশা করেছিলেন লোকায়ুক্ত কাজ শুরু করবে। আদপে দেখা গেল লোকায়ুক্তের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে বিধানসভায় লোকায়ুক্ত বিলের সংশোধনী পেশ হচ্ছে।

এদেশে প্রথম লোকায়ুক্ত চালু হয়েছিল ১৯৭১ সালে, মহারাষ্ট্রে। মূল উদ্দেশ্য ছিল অপশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তারপর কর্নাটক, রাজস্থান, উড়িষ্যা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যে লোকায়ুক্ত চালু হয়। কর্নাটকে খনি কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে গিয়ে বড় মাপের রাজনীতিককে গ্রেফতারও হতে হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পাকে জেল খাটতে হয়েছিল ২১ দিন। তদন্তের মুখে পড়েছিলেন প্রভাবশালী রাজনীতিক জনার্দন রেড্ডিও। কর্নাটকের লোকায়ুক্ত সারা দেশের কাছে মডেল। সেখানে বড়সড় দফতর হিসাবেই কাজ করে লোকায়ুক্ত। অনলাইনে ওই রাজ্যে অভিযোগ দায়ের করা যায়, জানা যায় তার স্ট্যাটাসও। এরাজ্যের চিত্র ঠিক তার বিপরীত। অফিসই নেই, ওয়েবসাইটের তো কোনও প্রশ্নই ওঠে না।

publive-image নিরাপত্তা কর্মী বা অন্য কোনও কর্মী জানেন না এখানে লোকায়ুক্তের অফিস আছে কিনা। ছবি: জয়প্রকাশ দাস

এখানেও বাম আমলে পঞ্চায়েত প্রধান বা কোনও জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে গাদাগুচ্ছের অভিযোগ আসত লোকায়ুক্তে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই দফতরের এক প্রাক্তন কর্মী জানান, অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ করে সঠিক বিচার পেতেন প্রার্থীরা। এমনকি লোকায়ুক্তে অভিযোগ দায়ের হয়েছে শোনার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি শুধরেও গিয়েছেন।

এদিকে এই বেহাল অবস্থা, ওদিকে লোকায়ুক্ত বিল নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে রাজ্য বিধানসভায়। বিএ কমিটির ছাড় পেয়ে বৃহস্পতিবার দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল লোকায়ুক্ত আমেন্ডমেন্ট বিল ২০১৮, বিধানসভায় পেশ হতে চলেছে। সেই লোকায়ুক্ত বিল, যার কোনও দফতর নেই।

বিচারক নেই।

west bengal politics government of west bengal
Advertisment