পশ্চিমবঙ্গ লোকায়ুক্ত সংশোধনী বিল ২০১৮ ভোটাভুটিতে পাস হল বিধানসভায়। বিলটি পাঠানো হয়েছে রাজ্যপালের কাছে। বিতর্কে অংশ নিয়ে কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি এক সুরে তীব্র ভাবে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। জবাবী ভাষণে বিরোধীদের বাউন্সার মারতে এতটুকুও সময় নেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বিতর্কে অংশ নিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেন, "দুর্নীতি বন্ধ করতে বিভিন্ন রাজ্য লোকায়ুক্ত বিল পাস করিয়েছে। কিন্তু সেভাবে কার্যকর হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীকে এর আওতার বাইরে রাখা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। পাবলিকের কাজে প্রচুর দুর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মুখ্যমন্ত্রী লোকায়ুক্তের আওতায় থাকলে ক্ষতি কী হত?"
আরও পড়ুন: লোকায়ুক্তের অফিসই নেই! জানতেন?
কংগ্রেসের সুরে সুর মিলিয়ে সংশোধনীর বিরোধিতা করেছে বিজেপি। বিধানসভায় দলের নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, "২০১৩ সালে লোকপাল বিল কেন্দ্র পাশ করেছে। পাঁচ বছর হয়ে গেল, এই রাজ্য পাশ করেনি। মুখ্যমন্ত্রী, আমলা, মন্ত্রী এর বাইরে থাকবেন কেন? নিজেদের বাঁচাতে চেষ্টা করছেন। মুখ্যমন্ত্রী তো সততার প্রতীক! তাহলে ভয় কিসের? এতে মানুষ আমাদের সন্দেহ করবে। বাঁচার রাস্তা তৈরি করছে এই বিল। তাই পুনর্বিবেচনা হোক বিলটি নিয়ে। ভারতের রাজনীতিতে দুর্নীতি বড় ইস্যু।"
লোকায়ুক্ত বিল থেকে সংবিধানে কোথাও কোথাও বিরোধ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী। তাঁর মতে, সংশোধন করা উচিত। "রাজনৈতিক নেতারা কেন নজরদারির মধ্যে থাকবেন না? মুখ্যমন্ত্রী থাকলে ক্ষতি কী?" বিতর্কে অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তীর্যক মন্তব্য ছুড়ে দেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, "ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এই বিলটির এক্তিয়ারে মুখ্যমন্ত্রীকে রাখা হোক। উনি লোকপাল বিলের সময় আন্না হাজারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।"
এই সংশোধনীতে মুখ্যমন্ত্রী যে পুরোপুরি লোকায়ুক্তের বাইরে তা মানতে চাননি তিনি। বিলের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "গণতন্ত্রে বিতর্ক থাকবে। তবে একটা ভুল ধারনা রয়েছে। কে বলেছে মুখ্যমন্ত্রী এই বিলের এক্তিয়ারে নেই? এটা ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। আইনটা ভাল করে পড়ুন। পাবলিক অর্ডার ছাড়া সব ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রীকে রাখা হয়েছে। আমি জনগনের কাছে দায়বদ্ধ।"
আরও পড়ুন: আবার বাংলা নাম পাশ বিধানসভায়
তাঁর বক্তব্যে কংগ্রেসকে তিনি কড়া হুঁশিয়ারি দিতে ছাড়েননি। তাঁর মন্তব্য, "এখানে বসে বিরোধিতা করছেন, দিল্লিতে গিয়ে সমর্থন চাইছেন। সিপিএমের পাশে বসে আছেন। আমাদের ভেবে দেখতে হবে।যেমন দেখাবেন তেমন দেখাব, আমাদের বিরুদ্ধে ভোট দিলে দিল্লিতে আপনাদের পরাস্ত করব। পার্টিটাকে তো বেচে দিয়েছেন সিপিএমের কাছে। এখন গোরক্ষকদের সাহায্য করছেন। যাঁরা দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা লোকপাল বিল চালু করতে পারেননি কেন? কংগ্রেসের আমলে তো লোকপাল চালু হয়েছিল। মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রে লোকায়ুক্তে মুখ্যমন্ত্রীকে এর বাইরে রাখা হয়েছে।"
১৫৮-৩৯ ভোটের ব্যবধানে এদিন লোকায়ুক্ত সংশোধনী পাস হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমরা ১০ দিনের মধ্যে লোকায়ুক্ত নিযুক্ত করব। রাজ্যপাল অর্ডার দিলে ১০ দিনের মধ্যে প্রাক্তন বিচারপতি নিযুক্ত করব।"