প্রথমে অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, তারপর এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুজনেই ফরমান জারি করলেন, সিবিআইয়ের তদন্তে রাজ্যের অনুমতি নিতে হবে। অন্ধ্রের পর এই রাজ্যেও সেই নিয়ম চালু হয়ে গেল। তবে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এক সুরে কথা বলেছে কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি। তাদের দাবি, ভয় পেয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল সরকার। প্রত্যাশিতভাবেই বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল।
কী বলছেন বিরোধীরা? সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, "ভয়। মোদীও ভয় করছেন সিবিআইকে। সিবিআইয়ের ডাইরেক্টরকে পাল্টে দিলেন রাতের অন্ধকারে। এরপর মমতা সিআইডিকেও ভয় করবেন। বাম সরকারের সময় পান থেকে চুন খসলে সিবিআই তদন্ত দাবি করতেন। পান বা চুন না থাকলেও সিবিআই চাইতেন। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য। তখন তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি। এখন চাইছেন যেন সরকারের মুখে চুনকালির দাগ না পড়ে। মমতা ভয় পাচ্ছেন সিবিআইকে।"
রায়গঞ্জের সাংসদ সেলিমের আরও দাবি, "প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা, ১০০ দিনের কাজ, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের স্টাইপেন্ড সহ বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বাজেটের টাকা নয়ছয় হয়েছে। ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এসব বিষয়ে আমরা সিবিআইয়ের তদন্ত চেয়েছি। সেই ভয়ে এই সিদ্ধান্ত।"
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর থেকে সোমেন মিত্র রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন। শনিবার তিনিও এক হাত নিয়েছেন তৃণমূলকে। তিনি বলেন, "এর একমাত্র কারণ সিবিআইয়ের ভীতি। কথায় কথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই তদন্ত দাবি করতেন। তিনি হঠাৎ সিবিআই তদন্তে বিমুখ হলেন কেন? সিবিআই কি কোনও ঘটনাকে সাধারনের সামনে তুলে ধরবে? এটাই ভয়? মমতা তো সিবিআইয়ের প্রবক্তা ছিলেন। এ কি ভয়ের থেকে বিরূপতা?"
আতঙ্কের কথা বললেও বিজেপি এই বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নারাজ। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেন, "আতঙ্ক গ্রাস করেছে তৃণমূলকে। ভারত সরকার চাইলেই পাশ কাটিয়ে যেতে পারে। এটা সবাই জানে। যারা অতঙ্কগ্রস্ত তারাই এসব করছে। এটা বড় কোনও ইস্য়ু নয়। এভাবে রাজ্য সরকার প্রমান করল তারা কতটা আতঙ্কগ্রস্ত। চিটফান্ডের তদন্ত অবশ্য চলছে আদালতের নির্দেশে।"
বিরোধীরা যখন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে হইচই বাঁধিয়ে দিয়েছেন, ভয়ের কথা বলছেন, তখন পঞ্চায়েত মন্ত্রী ও বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বিরোধীদের দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ভয় বিরোধীরা পাচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, "ভয়ের ব্যাপার কী আছে? যদি সত্যি কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে আদালত হয়ে আসবে। ভয় ওরা পাচ্ছে। ওদের রাজনীতিতে সিবিআই আছে। আর কিছু নেই। অপব্যবহার করছে সিবিআইয়ের।"
তিনি আরও মনে করেন, "সিবিআইয়ের নিজেরই কিছু নেই। লোককে অসম্মান করা ছাড়া। ওরা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে মামলা করছে। ওরা আবার আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে? হাতিয়ার করতে পারবে না বলেই বিরোধীরা চেঁচাচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হাজির হত। সেটা করা যাবে না বলেই এসব বলছে। কংগ্রেস আর সিপিএম বিজেপির ওপর ভরসা করে বসে আছে।"