Advertisment

পঞ্চায়েতে ঘাসফুলে পদ্মকাঁটার খোঁচা, শক্তিহ্রাস হাত-কাস্তের

এবারের ফল অনুযায়ী স্পষ্ট, বাংলার রাজনীতির লড়াই থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। আপাতত সেই স্থান পূরণ করতে চলেছে গেরুয়া শিবির।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
election

মহেশতলায় আজ ত্রিমুখী লড়াই। ফাইল ছবি- শুভম দত্ত, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

জয়প্রকাশ দাস

Advertisment

পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্য়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে পদ্মকাঁটার খোঁচা লেগেছে ঘাসফুলে। তবে শক্তি হ্রাস পেয়েছে হাতের। ধার কমেছে কাস্তের। মাথা তুলেছে বিক্ষুব্ধ নির্দলরা।

গ্রামবাংলার প্রায় কোথাওই সেভাবে দাঁত ফোটাতে পারল না বিরোধীরা। রাজ্য়ের প্রায় সর্বত্র আধিপত্য বজায় রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস। যেটুকু লড়াই হয়েছে তা গ্রামসভায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজেদের শক্ত ঘাঁটি গণিখান চৌধুরীর মালদায় হাতের বদলে পদ্ম ফুটেছে। রাজ্য় সভাপতি অধীর চৌধুরীর গড়ও আজ গড়ের মাঠ হয়ে গিয়েছে কংগ্রেসের কাছে। সিপিএম তো পঞ্চায়েত ভোটের আগেই ময়দান ছেড়ে পাড়ি দিয়েছে। এ অবস্থায় ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। দূরবিণ ছাড়া কোনওভাবেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বিরোধীদের। লড়াই এখন ঘাসফুলের সঙ্গে পদ্মফুলের। হাত-কাস্তে আপাতত বিশ্রামে।

২০০৯-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল আভাস দিয়েছিল বামেদের শক্ত চ্য়ালেঞ্জ ছুড়বে তৃণমূল। রাজ্যের রাস্তা কোন পথে চলেছে তার স্পষ্ট আভাস দিয়ে দেয় পঞ্চায়েত নির্বাচন। এবারের ফল অনুযায়ী স্পষ্ট, বাংলার রাজনীতির লড়াই থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস। আপাতত সেই স্থান পূরণ করতে চলেছে গেরুয়া শিবির। আগামী লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনই সেই প্রমাণ দেবে।

আরও পড়ুন, পঞ্চায়েত ভোট: প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য অপ্রত্যাশিত, বললেন মমতা

রাজ্য়ের ৬৬ শতাংশ পঞ্চায়েত আসনে ভোট হয়েছে। ফলাফল কাটাছেঁড়া করে দেখা যাচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে আসন দখলে বাম ও কংগ্রেসকে পেছন ফেলে দিয়েছে নির্দল প্রার্থীরা। তাঁরা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন। বিরোধীরা গ্রামপঞ্চায়েত ও সমিতির লড়াইয়ে কিছুটা মুখরক্ষা করতে পারলেও জেলা পরিষদের ভোটে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। বাম, কংগ্রেস, বিজেপি কোনও দলই জেলা পরিষদের আসনে লড়াইয়ের জায়গাই তৈরি করতে পারেনি। প্রতিটি জেলা পরিষদে অনায়াসে একতরফা জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বাম আমলেও দুএকটি জেলা পরিষদ বিরোধীদের দখলে ছিল। বিরোধীদের একেবারেই বেহাল দশা। জেলা পরিষদই জেলা পরিচালনার চাবিকাঠি। জেলা পরিষদগুলোতে বিরোধীরা কোনও আসন না পাওয়ায় সেখানে মুখ খোলার মত কোনও বিরোধীই রইল না। স্বভাবতই জেলাপরিষদগুলোতে একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও প্রতিবাদের কেউ থাকবে না।

tmc, panchayat vote পঞ্চায়েত ভোটে প্রত্যাশিতভাবেই বিপুল ভোটে জয় তৃণমূলের। ছবি- পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

বামেদের কেন এই দশা হল পঞ্চায়েত ভোটে? নির্বাচনের ফলাফলের পর রাজ্য় বামফ্রন্ট নেতাদের চোখে মুখে বিমর্ষতা। তবে সেটাই বোধহয় স্বাভাবিক ছিল। একে তো বছরভর আন্দোলনের ছিটেফোঁটাও ছিল না সিপিএম বা বামেদের মধ্য়ে। তারওপর রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হলেও কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে ভুলে গিয়েছেন নেতারা। ষাটোর্ধ নেতারাই এখন দলের মূল কাণ্ডারী। সেই দলের এই হাল হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে থাকবো কি থাকবো না, তা নিয়েই মাসের পর মাস কাটিয়ে দিচ্ছে ফ্রন্ট শরিকদের বড়দাদা সিপিএমের। দলিল আর আলোচনার ওপর ভর করেই ঠান্ডা করে সভা করলে ময়দানের ফলাফল শূন্য হতে বাধ্য়। এটা বামেরা নিজেরা অবগত নন এমনও নয়।

আরও পড়ুন, সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়েই কুমারস্বামীকে ফোন মমতার

আর কংগ্রেস, তারা বামেদের সঙ্গে না কি তৃণমূলের সঙ্গে তা এখনও সাধারণ মানুষের কাছে অস্পষ্ট। রাজ্য় কংগ্রেস নেতৃত্ব বামেদের সঙ্গে জোট করতে চাইছে। অন্য় দিকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলছেন, কংগ্রেসটা আমি বুঝে নেব। রোজই কোনও না কোনও কংগ্রেস বিধায়ক বা নেতা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন। এই দল পরিবর্তনে ফলে নিজেদের গড় মুর্শিদাবাদেই প্রায়.নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে কংগ্রেস। তাতেও কোনও তাপ-উত্তাপ নেই কী রাজ্য় কংগ্রেস, কী এআইসিসির! এরই মধ্য়ে এ রাজ্য় থেকে তৃণমূলের সহযোগিতায় একটি রাজ্য়সভার আসন দখল করল কংগ্রেস। এ রাজ্য়ে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনায় ভুগছে শতাব্দী প্রচীন দলটি। তাই গ্রামপঞ্চায়েত নির্বাচনে ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। সন্ত্রাস নিয়ে বাম বা কংগ্রেস যতই অভিযোগ করুক না কেন তাদের সংগঠন যে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে তা-ও বিলক্ষন জানেন তাদের নের্তৃত্ব। যার প্রভাব পড়েছে এই নির্বাচনে। বিশেষ করে মালদায় বিরোধীদের মধ্য়ে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত শুধু কংগ্রেস নয়, গণি পরবারের কাছেও লজ্জার। সংখ্য়ালঘু অধ্য়ুষিত এই জেলায় কংগ্রেসকে টেক্কা দিয়েছ পদ্মশিবির। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে অন্য় বিরোধীদের থেকে অনেক ভাল ফল করেছে গেরুয়া বাহিনী। পুরুলিয়া, ঝড়গ্রামেও বেশ ভাল ফল করেছে। যদিও জঙ্গলমহলে মাও-বিজেপি যোগের অভিযোগ উঠেছে। তাহলে তো স্বীকার করে নিতে হয় সেখানে এখনও মাওবাদীরা সক্রিয়। গ্রাম নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা নিতে তারা সক্ষম। যদিও বিজেপির দাবি, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ ভরসা করছেন না তৃণমূল কংগ্রেসকে। তৃণমূল কংগ্রেসও স্বীকার করেছে জঙ্গল মহলে আশানুরূপ ফল হয়নি। আগামী দিনে জঙ্গলমহলের পরিস্থিতি বলে দেবে পঞ্চায়েতে পদ্ম-মাও আতাঁত হয়েছি কী হয়নি।  শুধু সময়ের অপেক্ষা।

tmc bjp panchayat election
Advertisment