এষা রায়
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় আজ সোমবার ভোটগ্রহন হচ্ছে মোট ৬৬ শতাংশ আসনে। জেলার বাকী ৩৪ শতাংশ আসনে ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে রাজ্যের শাষকদল তৃণমূল কংগ্রেস, যা সুপ্রিম কোর্টের রোষের মুখে পড়বার জন্য ছিল যথেষ্ট। স্বভাবতই এই আসনগুলিতে ফলাফল ঘোষণা স্থগিত রেখেছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট।
তবে বাকী আসনগুলিতেও এই ফলাফলের পুনরাবর্তন অনিশ্চিত করতে শ্রীপুর পঞ্চায়েত সমেত দক্ষিণ পরগনার অন্যান্য পঞ্চায়েত আসনগুলিতে জোট বেঁধেছে নির্দল সমেত বাকী সমস্ত বিরোধী দলগুলি। বিগত ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে সামান্য কিছু আসনে বাম দল এবং কংগ্রেসের জোট হলেও এবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে বাকী সমস্ত দল।
গত ২০১২ অবধি শ্রীপুরের মোট তিনটি পঞ্চায়েত সমিতির মোট ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত সিটে এসইউসিআইয়ের রমরমা থাকলে ও তা ২০১৩ সালে তৃণমূলের কবলে চলে যায়। এবছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে এসইউসিআইয়ের মোট প্রার্থীর সংখ্যা আট, কংগ্রেসের চার এবং সিপিএমের তিন। তবে এঁদের মধ্যে মোট পাঁচজন প্রার্থী নৌকা, আম ইত্যাদি নির্দল চিহ্নে লড়াই করছেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিপিএম কর্মী এপ্রসঙ্গে বললেন, "বিজেপি'র সঙ্গে আমাদের কোন জোট না হলেও তৃণমূল স্তরে একটা বোঝাপড়া আছেই। কোন বুথে ওদের প্রার্থী শক্তিশালী হলে যাতে আমাদের সমস্ত ভোট ওদের প্রার্থী পায় সেবিষয়ে নিশ্চিত করবে আমাদের কর্মীরা। আর যদি উল্টোটা হয় তাহলে বিজেপি'র লোকেরাও একই কাজ করবে।"
আরও পড়ুন- পঞ্চায়েত ভোট LIVE: কড়া নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণ চলছে গ্রাম বাংলায়, ৪ জেলায় অশান্তি!
২০১৩ সালের সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য মৈনাক কাসারী এবছর নির্বাচনে অংশগ্রহন করেননি। তিনি বললেন, "আমাদের আসল উদ্দেশ্য হল যেকোন উপায়ে তৃণমূলকে হারানো। আমাদের পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই নিশ্চিত করতেই আমরা সকলে একজোট হয়েছি। তৃণমূল কোনভাবেই এই জোটকে হারাতে পারবে না।"
দলের কঠোর বিরোধী দমন রাজনীতি এবং তৃণমূল স্তরের নেতাদের দুর্নীতিতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে বহু টিএমসি কর্মীরাই বিরোধীদের মাথা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। পঞ্চায়েতে নৌকা চিহ্নে দাঁড়ানো ভোটপ্রার্থী সঞ্জিত দেব এপ্রসঙ্গে বলেন, "বহুদিন ধরেই তৃণমূল কংগ্রেসের নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমি সোচ্চার হয়েছিলাম। ভোটের মাত্র পনের দিন আগে আমাকে বিরোধী জোটের মুখ হতে আহ্বান জানালে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট লড়তে রাজী হয়ে যাই। এখন আমি কংগ্রেস, সিপিএম এবং এসইউসিআই- তিনটি দলেরই মুখ।"
কাশীপুর অঞ্চলের কংগ্রেস সভাপতি বলেন, "সরকারের হাউসিং স্কিমের আওতায় এ অঞ্চলে কিছু তৃণমূল নেতার দু-তিনটি করে নিজস্ব বাড়ি হয়েছে। আমরা এসব দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে গেছি।"
রামকৃষ্ণপুরের তৃণমূল কর্মী ৪৩ বছর বয়সী অমর ঘোষ অঘোষিত জোটের সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোট লড়ছেন। এসইউসিআই-এর ৫৭ বছর বয়সী নেতা দীপেন কয়াল এপ্রসঙ্গে বললেন, "বিরোধীদের মনোনয়ন পেশ করতে না দেবার পেছনে মুখ্য কারণ বিরোধী দল নয়, বরং তৃণমূলের অন্দরের গোলমাল।"
দক্ষিণ বারাসতের গ্রাম পঞ্চায়েতে সমস্ত বিরোধীরা মিলে গড়েছেন 'গনতন্ত্র বাঁচাও কমিটি'। তৃণমূলের পতাকা ছাড়া এই অঞ্চলে কোন দলীয় পতাকা নেই। অঞ্চলের সিপিএম কর্মী অপূর্ব প্রামানিক বললেন, "কোন নির্দিষ্ট দলের নিরিখে নয়, সবাই একজোট হয়ে লড়ছি তৃণমূলের বিরুদ্ধে। নির্বাচনের দিন ঘোষনার পর থেকেই বোমাবাজি সহ নানা বিচ্ছিন্ন ঝামেলার খবর প্রায়ই কানে আসছে আমাদের।"