একই বিলের দু'টি বয়ান কেন? এই প্রশ্নে ঝুলে রয়েছে গণপিটুনি প্রতিরোধ বিলে রাজ্যপালের অনুমোদন। রাজভবনের তরফে রাজ্যের জবাব তলব করা হলে 'দৃষ্টিবিভ্রম' বলে জানায় নবান্ন। যাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। গত অগাস্ট থেকে এই নিয়ে রাজভবন-নবান্ন বিস্তর চিঠি আদানপ্রদান হয়েছে। তবুও গণপিটুনি প্রতিরোধ বিল আইনে পরিণত হয়নি। এরই মধ্যে গণপিটুনি প্রতিরোধ বিল, তপসিলি জাতি-উপজাতি বিলে রাজ্যপাল সম্মতি দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। রাজ্যপালকে কাঠগড়ায় তুলে বন্ধ করে দেওয়া হয় বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন। যা ঘিরে নয়া মাত্রা পেয়েছে রাজভবন-নবান্ন সংঘাত।
গত ৩০ অগাস্ট বিধানসভায় 'গণপিটপুনি প্রতিরোধ বিল'টি পাস হয়। এর ঠিক এক মাস আগেই বাংলার রাজ্যপাল হিসাবে নিযুক্ত হন জগদীপ ধনকর। বিল ঘিরে অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা, যাকে 'দৃষ্টিবিভ্রম' বলে রাজ্য। তাই এ ব্যাপারে সরকার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট না করা পর্যন্ত রাজ্যপাল কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তাই ইতিবাচক পদক্ষেপ করে বিলের বিলম্ব দূর করতে হবে রাজ্য সরকারকেই। বিষয়টি নবান্নকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় রাজভবনের তরফে।
আরও পড়ুন: ‘যত খুশি ঘুরুন, কিন্তু সরকারের পয়সা নষ্ট করবেন না’, ধনকড়কে বিঁধলেন পার্থ
বিধানসভায় পাস হয়ে যাওয়া 'গণপিটপুনি প্রতিরোধ বিলে' প্রথমে ১৩ সেপ্টেম্বর সম্মতি জানিয়ে দেন রাজ্যপাল। রাজভবন সূত্রের জানা গিয়েছে, বিধানসভায় পেশ করার আগে বিধায়কদের সংশ্লিষ্ট বিলটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যে বিলটি বিধানসভায় শেষ পর্যন্ত পেশ করা হয়, সেটি ছিল আগেরটির থেকে ভিন্ন। কারণ, প্রথম বিলটিতে সর্বোচ্চ সাজা ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর দ্বিতীয়টিতে সর্বোচ্চ সাজার প্রস্তাব দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড। অথচ এর জন্য বিধানসভায় কোনও সংশোধনী দেওয়া হয়নি। উপরন্তু এই দু'টি বিলের নম্বরও এক। বিষয়টি নিয়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিরোধীরা লিখিত ভাবে আপত্তি জানিয়েছিলেন রাজ্যপালের কাছে। তার পরেই গত ১৮ সেপ্টেম্বরে রাজ্যপাল বিধানসভার সচিবালয়ে চিঠি দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। কিন্তু রাজভবন সূত্রের খবর, বিধানসভার সচিবালয়ের উত্তরে রাজ্যপাল 'সন্তুষ্ট' হননি। এর পরে ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি চিঠি পাঠান স্বরাষ্ট্র দফতরে। এর চার দিন পরে স্বরাষ্ট্র দফতরও ‘ছাপার ভুলের দায়’ চাপায় আইন দফতরের উপর। চলতি বছর ১ অক্টোবর এর পর রাজ্যপাল আইন দফতরকে চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা তলব করেন।
২৩ অক্টোবর রাজভবনের তরফে সমন পাঠানো হয় আইন দফতরের সচিবকে। বিলের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এর দিন সাতেক পর দফতরের সচিব রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে লিখিত রিপোর্ট জমার কথা বলেন। যা ৫ নভেম্বর রাজভবনে পাঠানো হয়। পরে রাজ্যপালের তরফে ওই রিপোর্ট বিধানসভার সচিবকে পাঠিয়ে রিপোর্টের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। রিপোর্টে বলা হয়েছিল, আইন দফতর ভুল গণপিটুনি প্রতিরোধ বিল বিলি করার জন্য দায়ী নয়। গত ১৩ অক্টোবর অবসর নেন আইন দফতরের সচিব।
রাজভবন সূত্রে খবর, ১৪ নভেম্বর, রাজ্যপাল গণপিটুনি প্রতিরোধ বিল সংক্রান্ত বিধানসভার কার্যবিবরণী জানতে চেয়েছিলেন। ২১ শে নভেম্বর, বিধানসভার সচিব বিল সংক্রান্ত কার্যক্রমটি বিশদভাবে বর্ণনা করেন। ২৬ নভেম্বর রাজ্যপাল ফের চূড়ান্তভাবে বিধানসভা ওই বিলের উপর কার্যবিবরণী জানতে চান। তবে তার উত্তর মেলেনি।
আরও পড়ুন: বাংলায় নজিরবিহীন ঘটনা, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ বিধানসভা
গত ১লা ডিসেম্বর রাজ্যপাল লেখেন, রাজ্যসরকারের পক্ষে গণপিটুনি প্রতিরোধ বিলে ভুল রয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষে সেই ভুল হয়েছে। যা বিধানসভার সচিবকে জানানো হয়েছে। বিলের উপর কার্যবিবরণী দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ফলে সংশ্লিষ্ট বিলটিতে আর চূড়ান্ত সম্মতি জানানো হয়নি রাজ্যপালের। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে রাজ্যপাল ধনকর বলেন, 'আমি অন্ধের মত বিলে সম্মতি দিতে পারব না। সংবিধান মেনে চলব। এক্ষেত্রে আমার হাত-পা বাঁধা।'
বিলে ভুলের কথা স্বীকার করে নিয়ে এপ্রসঙ্গে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, 'উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজ্যপাল বিলে সম্মতি জানাচ্ছেন না। রাজ্যপাল বিরোধী রাজনৈতিক নেতার মত ব্যবহার করছেন।' এই পরিস্থিতির জন্য বিরোধী কংগ্রেস ও বামেরা কাঠগড়ায় তুলেছে রাজ্য সরকারকেই।
Read the full story in English