Advertisment

গান্ধীহত্যা বিতর্ক সত্ত্বেও মহাত্মার 'স্বপ্ন পূরণে' আরএসএস

শিবিরগুলিতে যেমন শারীরিক কসরত শেখানো হয়, তেমনই নানা ধরনের আলোচনাও চলে। সেই আলোচনার তালিকায় রামচন্দ্র যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন মহাত্মা গান্ধীও।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
rss

উলুবেড়িয়ায় আরএসএসের শিবির।

মহাত্মা গান্ধীর ঘাতক নাথুরাম গডসের প্রতি আরএসএস-এর আদর্শগত আনুগত্য নিয়ে প্রায়ই গরম হয়ে ওঠে ভারতের রাজনৈতিক আবহ। কিন্তু, সেই আরএসএসের প্রশিক্ষণ শিবিরেই নিয়ম করে চর্চা হচ্ছে মহাত্মার ভাবধারার। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের চারটি প্রশিক্ষণ শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় ও মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গায় এবং শিলিগুড়িতে এই প্রশিক্ষণ শিবিরগুলি আয়োজিত হয়েছিল। আর সেখানেই গান্ধীর জীবন ও দর্শন নিয়ে পাঠ দেওয়া হয়েছে বলে খবর।

Advertisment

সংঘের বক্তব্য, অনুশাসনের মাধ্যমে দেশ সেবক তৈরি করাই তাদের কাজ। এই শিবিরগুলিতে যেমন শারীরিক কসরত শেখানো হয়, তেমনই নানা ধরনের আলোচনাও চলে। সেই আলোচনার তালিকায় রামচন্দ্র যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন মহাত্মা গান্ধীও।

গান্ধীজির হত্যা নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। সেই আলোচনায় বারবার উঠে আসে সংঘের নাম। সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবেই অবগত সংঘ পরিবারও। কিন্তু নাগপুর কেন্দ্রিক সংগঠনটি মনে করে, মহাত্মার স্বপ্ন তারাই পূরণ করবে। সংঘের দক্ষিণবঙ্গের প্রচার প্রমুখ বিপ্লব রায় বলেন, "মহাত্মা গান্ধী গ্রাম বিকাশের কথা বলেছেন। নিম্নবর্গের মানুষকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন। তবে ততটা করতে পারেন নি। গান্ধীজির সেই ভাবনার কথা নিয়ে শিবিরে চর্চা চলে। তাঁর অনেক নীতির সঙ্গে আমরা সহমত।"

মহাত্মা গান্ধীর হত্যা প্রসঙ্গে সংঘের ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। ওই অভিযোগকে শুধুই 'রাজনীতি' বলে উড়িয়ে দিয়ে বিপ্লব বলেন, "ওই বিষয়টা রাজনৈতিকভাবে বিচার করলে আমাদের আঘাত লাগে। আমাদের দুঃখ হয়, ক্ষোভ হয়। তবে মহাত্মা গান্ধীর জীবন স্মরণ করে অনুকরণ করার যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। তাঁর রাম রাজ্যের পরিকল্পনা ভারতের জীবন্ত পরিকল্পনা। তা অবজ্ঞা করা যায় না। আমাদের তাঁকে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।"

বাংলার রাজনৈতিক পরিসর এই মুহূর্ত 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনিতে তোলপাড়। তবে তাতে কোনও হেলদোল নেই সংঘের। বরং তারা মনে করে, জাতীয় পুরুষ রামচন্দ্রের জীবন কাহিনী পড়ানো প্রয়োজন। তবে রামের পাশাপাশি সংঘের শিবিরে রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, গৌতম বুদ্ধ, ভীমরাও আম্বেদেকর (বাবাসাহেব), সাভারকার, মহাত্মা গান্ধী, ভগিনী নিবেদিতা, প্রত্যেকের কাজ সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হয়।

বিপ্লব রায় বলেন, উলুবেড়িয়া ও বেলডাঙ্গায় প্রথমবর্ষের প্রশিক্ষণ শিবির হয়েছে। দু'টি শিবিরই ২০ দিনের। উলুবেড়িয়াতে ২২ মে শুরু হয় শিবির। ১৮ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত উপার্জনশীল ২৫৫ জন এই শিবিরে প্রশিক্ষণ নেন। নিয়মিত পড়াশোনার সঙ্গে যুক্ত ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত ১২৯ জন বেলডাঙ্গার শিবিরে অংশ নিয়েছেন। দ্বিতীয় বর্ষের শিবির হয়েছে ওড়িশার কটকে। সেখানে দক্ষিণবঙ্গে থেকে গিয়েছেন ৪৫ জন। এছাড়া, ২৫ জন স্বয়ংসেবক নাগপুরে তৃতীয় বর্ষে ২৫ দিনের ক্যাম্পে অংশ নিয়েছেন।

দেশের রাজনীতিতে একসময় যেসব দল মহাত্মা গান্ধীর বিরোধিতা করেছে, পরবর্তীতে তাদের সবার কাছেই গান্ধীজি 'প্রাসঙ্গিক' হয়েছেন। বামেরাও অবলীলায় গান্ধীর বাণী প্রচার করেছে। এখন সংঘও গান্ধীজির কর্মকান্ডকে অস্বীকার করতে পারছে না। রাজনৈতিক মহলের মতে, গান্ধীকে "অবজ্ঞা" করে যে ভারতে সংগঠনের শ্রীবৃদ্ধি সম্ভব নয়, তা সম্যক বুঝেছে আরএসএস। বরং তাঁর আদর্শ যে এদেশে এখনও প্রাসঙ্গিক, তা মেনে নিয়েছে সংঘ।

RSS
Advertisment