মুর্শিদাবাদে আবারও খুন এক তৃণমূল নেতা। শুক্রবার প্রকাশ্যে হরিহরপাড়া থানার প্রদীপডাঙ্গা মোড় এলাকায় পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে বুক লক্ষ্য করে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। গুলির নিশানা - এলাকার তৃণমূল নেতা তথা শাসকদলের পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী সফিউল হাসান (৪৫)। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে বোমাও নিক্ষেপ করা হয় তাঁর দিকে। স্থানীয় সূত্রের খবর, গুলিবিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন ওই তৃণমুল নেতা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সফিউল হাসানের।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় গোটা এলাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। কে বা কারা এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে তা খতিয়ে দেখতে তল্লাশি অভিযানও শুরু করেছে পুলিশ। মৃতদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
আরও পড়ুন, ‘এক মাসের মধ্যে চিটফান্ডের নায়করা জেলে যাবে’, বিস্ফোরক রাহুল সিনহা
সূত্রের খবর, এই ঘটনার সময় সফিউল হাসানের মৃতদেহ আটকে দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে দীর্ঘক্ষণ হরিহরপাড়া-বহরমপুর রাজ্যসড়ক অবরোধ করে রাখেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। পরে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উল্লেখ্য, ঘটনার চব্বিশ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতেরা হলো সুজল শেখ, শাফিউল শেখ ও ইজরায়েল শেখ। প্রাথমিক জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃতেরা স্থানীয় হুমাইপুর এলাকার বাসিন্দা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা যায়, সাতদিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন করে বহরমপুর অ্যাডিশনাল চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তোলা হবে অভিযুক্তদের।
খুনের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃনমুল সভাপতি তথা মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, "তৃণমূলকে শেষ করতে কংগ্রেস-বিজেপি মিলে এলাকায় এইসব কান্ড ঘটিয়ে চলেছে। তবে এইভাবে মুর্শিদাবাদে তৃণমুলের ক্ষতি করা সম্ভব নয়।" যদিও কংগ্রেসে এবং বিজেপির পক্ষে এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক সচিব জয়ন্ত দাস এবং জেলা বিজেপির সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলেন, "এটা তৃণমুলের নিজেদের ভিতরের গোলযোগ, ওরা গা বাঁচাতে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।"
ঠিক কী হয়েছিল বহরমপুরে?
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এদিন দুপুরে সফিউল হাসান নিজের বাড়ি হরিহরপাড়া থানার অন্তর্গত লালনগর থেকে নিজের গাড়িতে চেপেই হরিহরপাড়া যাচ্ছিলেন। সেই সময় মাঝরাস্তায় প্রদীপডাঙ্গা মোড় এলাকায় সাত-আটজন দুষ্কৃতীর একটি দল মারুতি ভ্যান নিয়ে এসে পথ আটকায় সফিউলের। তারপর ওই দুষ্কৃতীরা তৃণমূল নেতাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে প্রথমে গুলি এবং পরে বোমা ছুড়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। জানা যায়, মৃত নেতার স্ত্রী আরদোসা বিবি হরিহরপাড়া থানার হুমাইপুর গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান। তিনি এই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।
আরও পড়ুন, সব্যসাচীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হিম্মত নেই মমতার: মুকুল
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই ডোমকলের কুচিয়ামোড় এলাকায় আরেক তৃণমূল নেতার বাড়িতে ঢুকে একই সঙ্গে তিনজন তৃণমুল কর্মীকে খুন করা হয়। এরপর ডোমকল ১ নং ধুলাউড়ি পঞ্চায়েতের তুলসীপুর এলাকায় নিদুভূষণ মন্ডল নামে অপর এক তৃণমুল কর্মীর দেহ উদ্ধার হয় লিচু বাগানে। এই রেশ কাটতে না কাটতেই ফের খুন হলেন সফিউল। উল্লেখ্য, গত ২৩ এপ্রিল ডোমকলেই তৃণমুলের ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার জাহানারা বিবির স্বামী তৃণমুল কর্মী তোজাম্মেল আনসারীরও দুষ্কৃতীদের আক্রমণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে।