রাজ্যের গেরুয়া ঝড় এবার দাঁত ফোটাতে শুরু করল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতেও। গত দুদিনে অন্তত তিনটি কলেজের ছাত্র সংসদে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে সংঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। আরও ১৫টি কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও শঙ্কিত টিএমসিপি। বিজেপি নেতাদের দাবি, আগামী কয়েকদিনে ওই কলেজগুলি ছাড়াও রাজ্যে আরও বেশ কিছু কলেজে প্রতিষ্ঠিত হবে গেরুয়া আধিপত্য। এবিভিপির রাজ্য নেতৃত্ব ছাড়াও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গেরুয়া দাপট বাড়াতে সক্রিয় হয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা বর্তমান বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা।
লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের অব্যবহিত পরেই জলপাইগুড়ির সুকান্ত মহাবিদ্যালয় কলেজের ছাত্র সংসদ রং বদলে গেরুয়া হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিন ছাত্রভোট না হওয়া সত্ত্বেও ওই কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদেরই একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। কার্যত একই অবস্থা উত্তর ২৪ পরগণা জেলার গাইঘাটার নহাটা কলেজেও। সেখানকার ছাত্র সংসদেরও দখল নিয়েছে গেরুয়া শিবিরের ছাত্র সংগঠন। নদীয়ার রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অর্ন্তগত বগুলা কলেজেও একই ছবি। গত ১২ বছরের টিএমসিপি’র আধিপত্য ঘুচিয়ে ছাত্র সংসদের দখলে নিয়েছে এবিভিপি। এর বাইরেও আরও বেশ কিছু কলেজের দখল নিয়েছে গেরুয়া শিবির।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় এই রাজ্যে বিজেপি শক্তিশালী হলেও এবিভিপি এখনও দুর্বল। বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি ক্যাম্পাসে কিছু আসন পাওয়া ছাড়া তাদের উল্লেখযোগ্য সাফল্য নেই। সূত্রের খবর, বিজেপির হাওয়ায় ভর করে রাজ্যে সক্রিয় হতে চাইছে সংঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন। ইতিমধ্যেই চারটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খান কুড়ি কলেজকে টার্গেট করে সংগঠন বাড়াতে চাইছেন এবিভিপি নেতারা। সংগঠনের এক সর্বভারতীয় নেতার কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে বিপুল সংখ্যক তরুণ ভোটার বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। এই সমর্থকদের একাংশকে কর্মীতে পরিণত করতে হবে, সাংগঠনিক কাঠামোর আওতায় আনতে হবে।”
বিজেপি সূত্রের খবর, এবিভিপি নেতৃত্ব বিশেষ নজর দিয়েছেন চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেগুলি হলো উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বভারতী। এর বাইরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ক্যাম্পাসে শক্তি বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছেন এবিভিপি নেতারা।
এই সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার বাইরে শঙ্কুদেব ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেরুয়া প্রভাব বাড়াতে সক্রিয় হয়েছেন। বিজেপি’র এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এবিভিপি খাতায় কলমে বিজেপি-র সংগঠন নয়, সংঘ পরিবারের ছাত্র শাখা। শঙ্কুদেব বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এবিভিপির সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় তিনি নেই। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে ওঁর প্রভাব অনস্বীকার্য। দীর্ঘদিন টিএমসিপির সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন। এখনও রাজ্যের প্রতিটি জেলায় টিএমসিপির অন্দরে তাঁর অনুগামীরা রয়েছেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তাঁদের একাংশ এবিভিপিতে যোগ দেবেন।”
শঙ্কুদেব এই প্রসঙ্গে জানান, রাজ্যে ১২ লক্ষ তরুণ ভোট রয়েছে। তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে এই নব্য ভোটারদের একাংশকে বিজেপির পক্ষে আনতে সক্রিয় হয়েছিলেন। তাঁদের একাংশ নির্বাচনের সময় বুথে এজেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর কথায়, “টিএমসিপি এবং যুব তৃণমূলের পদাধিকারীদের অনেকেই আমার অনুগামী। আমি রাজ্য সভাপতি থাকার সময় তারা আমার সঙ্গে কাজ করেছে। ওই নেতাদের অনেকেই বিজেপিতে যোগ দেবে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর, প্রেসিডেন্সির মতো ক্যাম্পাসেও দ্রুত গেরুয়া পতাকা উড়বে।”
এবিভিপির রাজ্য সভাপতি সুবীর হালদার বলেন, “আমরা সবাই মিলেই চেষ্টা করছি। দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যে আমাদের পক্ষে হাওয়া রয়েছে। এই নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন বলে তা প্রকাশ্যে এসেছে। খুব দ্রুত শিক্ষাক্ষেত্রেও আমাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বড় খবর আশা করছি।”