Advertisment

ছাত্রীকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় অভিযুক্ত, 'নিখোঁজ' কাউন্সিলরকে শপথবাক্য পাঠ করিয়ে বিতর্কে এসডিও

বাম জমানার উদাহরণ টেনে জেলা তৃণমূল সভাপতির সাফাই, এমন ঘটনা ঘটতেই পারে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
burdwan

তুহিনা খাতুন। (ডানদিকে) অভিযুক্ত কাউন্সিলর।

বর্ধমান পুরসভার ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বসির আহমেদ ওরফে বাদশা। ওই ওয়ার্ডের বাবুরবাগ নতুনপল্লি এলাকায় বাড়ি কলেজ ছাত্রী তুহিনা খাতুনের। ২ মার্চ পুরভোটের ফলাফল ঘোষণার পর জয়ী তৃণমূল প্রার্থী বসির আহমেদ ও তাঁর অনুগামীরা তুহিনা খাতুনের বাড়িতে চড়াও হয়। তাঁরা তুহিনাকে মারধরের পাশাপাশি তাঁর শ্লীলতাহানিও করে বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনার পরেই বিকেলে পুলিশ গিয়ে বাড়ি থেকে উদ্ধার করে তুহিনা খাতুনের ঝুলন্ত মৃতদেহ। তুহিনার মৃত্যুর জন্য তাঁর পরিবার নব নির্বাচিত তৃণমূল কাউন্সিলর বসির আহমেদ ও তাঁর বেশ কয়েকজন অনুগামীকে দায়ী করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় তুহিনাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন তুহিনার দিদি কুহেলি।

Advertisment

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে পুরভোটের সময়ে তুহিনাদের বাড়ির কাছের একটি দেওয়ালে আঁকা হয় গাছে তিন মহিলার ঝুলন্ত দেহের ছবি। ভোটে বসির আহমেদ জিতলে তুহিনাদের তিন বোনের ওই ছবির মত দশা হবে বলে এলাকায় প্রচারও করা হয়। এই ঘটনা সামনে আসার পরেই দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্চার হয় বাম ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠন। তারা পথে নেমে বিক্ষোভও দেখায়। পাশাপাশি তুহিনার মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ আন্দোলনে নামে কংগ্রেস। খোদ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও সাংসদ অধীর চৌধুরী বর্ধমানে এসে তুহিনার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

শেষ পর্যন্ত দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে এখনও পর্যন্ত পুলিশ ৪ মহিলা-সহ ছয় জনকে গ্রেফতার করলেও গ্রেফতার হয়নি মূল অভিযুক্ত বসির আহমেদ। তিনি আদালতেও আত্মসমর্পণ করেননি। পুলিশ নাকি তাঁকে খুঁজেই পাচ্ছে না। এমন আবহের মধ্যেই গত ১৬ মার্চ বর্ধমান পুরসভার নবনির্বাচিত ৩৩ জন তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর শপথ নেন বর্ধমান উত্তরের মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাসের কাছে। ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত থাকায় ওই দিন বসির আহমেদ শপথ অনুষ্ঠানে হাজির হননি। কিন্তু, পুলিশ যে বসির আহমেদকে খুঁজে পাচ্ছে না, সেই বসির আহমেদই পরদিন অর্থাৎ ১৭ মার্চ সশরীরে দ্বিতীয়ার্ধে মহকুমা শাসকের চেম্বারে পৌছে যান। তিনি সেখানেই শপথ নেওয়ার পর্ব সেরে ফেলেন।

ওই দিন বসির আহমেদের শপথ নেবার খবর কেউ জানতে না-পারলেও শনিবার তা জানাজানি হয়ে যায়। তার পরেই পুলিশ ও মহকুমা শাসকের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছে। এই বিষয়ে বর্ধমান উত্তরের মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস জানিয়েছেন, 'পুর আইন অনুসারে নোটিফিকেশনের ৩ মাসের মধ্যে শপথ নিতে হয়। বসির আহমেদ ১৭ তারিখ আমার অফিসে এসেছিলেন। তাঁকে আমি কাউন্সিলর হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছি। কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গেও আমি কথা বলব।’ জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন জানান, 'ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।'

ফেরার কাউন্সিলারের শপথ গ্রহণ নিয়ে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র অভিযোগে বলেন, 'পুলিশ যাঁকে খুঁজেই পাচ্ছে না, সেই কাউন্সিলর মহকুমা শাসকের কাছে গিয়ে শপথ নিয়ে ফেললেন। অথচ পুলিশ বলছে কিছুই নাকি তাঁরা জানেন না। এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে তদন্ত আসলে কেমন হচ্ছে। এই সবের মধ্য দিয়ে ছাত্রীর পরিবারের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে।’ এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরী বলেন, 'বর্ধমান শহরের আইন-শৃঙ্খলার রক্ষকের কাছে গিয়ে শপথ গ্রহণ করে নিলেন ফৌজদারি মামলায় ফেরার অভিযুক্ত। এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে প্রশাসন অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’ যদিও পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সাফ জবাব, 'কারওর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলেও সে শপথ গ্রহণ করতে পারে। এমন নজির আগে থেকেই রয়েছে। কেস থাকা সত্ত্বেও বাম আমলে নিখিলানন্দ সর বিধায়ক হিসেবে রাজ্য বিধানসভায় শপথ নিয়েছিলেন।'

burdwan councillor Tuhina Khatun
Advertisment