গোটা দেশের নজরে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ। দুই রাজ্যেই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে দারুণ ফল করেছে বিজেপি। এরপর থেকেই জল্পনা ছিল কে হবেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী। আলোচনায় উঠে এসেছে একাধিক নাম। তবে সব জল্পনাকে উস্কে নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। আর এর পরেই গোটা দেশে তুমুল আলোচনা চলছে অটল-আদবাণী যুগের দুই অপ্রতিরোধ্যের রাজনৈতিক জীবন কি শেষ? শিবরাজ সিং চৌহান ও বসুন্ধরা রাজেকে কি এখন বড় কোনো দায়িত্ব দেওয়া হবে না? দলীয় নেতৃত্ব কি তাদের ওপর ক্ষুব্ধ? এমন নানান প্রশ্ন সামনে উঠে এসেছে।
বিজেপি আশ্চর্যজনকভাবে তিনটি রাজ্যেই 'নতুন মুখের' হাতে কমান্ড তুলে দিয়েছে। এর পর রাজস্থানে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে, মধ্যপ্রদেশে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এবং ছত্তিশগড়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংয়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাদের সকলেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার। এমন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই শুধু রাজনৈতিক মহলেই নয়, সাধারণ মানুষের মনেও প্রশ্ন উঠছে, এখন তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে? তাদের কোন রাজ্যের রাজ্যপাল হিসাবে নিয়োগ করা হবে? নাকি তাঁরা সক্রিয় রাজনীতিতেঅ থাকবেন এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্ব পেতে পারেন শিব-রাজে? এমন নানা প্রশ্ন ভেসে বেড়াচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।
মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শেষ সাংবাদিক সম্মেলনে যখন একই প্রশ্ন করা হয়েছিল, শিবরাজ বলেছিলেন যে 'আমার ভূমিকা একজন কর্মীর… বিজেপিতে প্রতিটি কর্মীর জন্য কাজ রয়েছে এবং দল যা দেবে আমি তাই করব'। লোকসভা নির্বাচনে লড়ার প্রশ্নে তিনি নীরব ছিলেন। তিনি আরও বলেন, আমার বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত দলই নেবে।শিবরাজ ১৮ বছর ধরে মধ্যেপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, বসুন্ধরা দুই মেয়াদে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এক সময় দুজনেই বিজেপির তারকা নেতা ছিলেন এবং অটল-আদবাণীর সময় থেকেই!
চৌহানের বয়স ৬৪, রাজের বয়স ৭০
বর্তমানে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী তা প্রকাশ করেনি। চৌহানের বয়স ৬৪ এবং রাজের বয়স ৭০। তবে, তিনি এখনও রাজ্যে দুই হেভিওয়েটের প্রভাব রয়েছে বিস্তর। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপির একটি সূত্র 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' কে জানিয়েছে পার্টি হাইকমান্ড দল বা কেন্দ্রীয় সরকারে উভয় নেতাদের নতুন ভূমিকা দিতে পারে। রাজ্যের দায়িত্বে যাওয়ার আগে দুই নেতাই কেন্দ্রীয় সরকারেও ছিলেন। দলের সিনিয়ার নেতারা বলছেন ২০১৪ সালে যখন মোদী সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসে, তখন রাজেকে কেন্দ্রে একটি পদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
দলের এক সিনিয়র নেতা বলেছেন চৌহান কেন্দ্রে সুযোগ পেতে পারেন এবং এটি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করা সম্পূর্ণরূপে তার উপর নির্ভর করছে। দলের অন্য একজন সিনিয়র আধিকারিক 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-কে দাবি করেছেন যে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে যেভাবে জনসাধারণের কাছে মন্তব্য করেছেন তা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পছন্দ নাও হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দিল্লিতে তার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে হচ্ছে। একদিন আগে দিল্লি যাওয়ার প্রশ্নে শিবরাজ বলেছিলেন যে 'নিজের জন্য কিছু চাইতে দিল্লি যাওয়ার আগে আমি মরতেই রাজি'।
মধ্যপ্রদেশে, শিবরাজ সিং চৌহানের পরিবর্তে মোহন যাদব মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে চলেছেন। চৌহান রাজ্যে ১৮ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। অন্যদিকে রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজের পরিবর্তে ভজনলাল শর্মাকে বেছে নেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী পদে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও এই দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে তাদের পরিকল্পনা প্রকাশ করেনি।
এবার দুই রাজ্যেই নেতৃত্ব বদল করেছে বিজেপি। এরপর আঞ্চলিক পর্যায়ে এসব নেতার কী হবে তা নিয়ে রয়েছে নানা মত। রাজ্য নির্বাচনে জড়িত দলের এক নেতা বলেছেন যে বসুন্ধরা এবং শিবরাজকে কোনও কাজে লাগানো হবে না তা অসম্ভব।
একজন সিনিয়র নেতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন"বসুন্ধরা এবং শিবরাজকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না। তাদের কী ধরণের দায়িত্ব দেওয়া হবে, তারা এই দায়িত্ব গ্রহণ করবে কি না? সেটা তাদের ওপর নির্ভর করছে"। বিজেপির এক প্রবীণ নেতা বলেছেন যে শিবরাজ দিল্লির প্রস্তাব গ্রহণ করবেন কি না তা সম্পূর্ণ তার ওপর নির্ভর করবে'।
অন্যদিকে রাজস্থান নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসার পর বসুন্ধরার ছেলে দুষ্যন্ত সিংয়ের বিরুদ্ধে বিজেপি বিধায়কদের রিসর্টে আটকে রাখার অভিযোগ এনেছিলেন এক বিধায়কের বাবা। বসুন্ধরা রাজে এবং দুষ্যন্ত বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গেও দেখা করেছেন। যদিও এরই মধ্যে বসুন্ধরা রাজে স্পষ্ট দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে তিনি দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আছেন। তিন রাজ্যে বড় জয়ের জন্য বসুন্ধরা প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন।
অনেক সিনিয়র নেতাকে পেছনে ফেলে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ পেয়েছেন ভজন লাল শর্মা। দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভজনলাল শর্মা তিন দশক ধরে সাংগঠনিক স্তরে বিজেপিতে সক্রিয়ভাবে রয়েছেন দ্য হিন্দুর মতে, বিজেপি ২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে ছত্তিশগড়ে একজন উপজাতী সম্প্রদায়ের মুখ, মধ্যপ্রদেশে একজন ওবিসি যাদব নেতা এবং রাজস্থানে একজন ব্রাহ্মণ মুখ বেছে নিয়েছে।