দিল্লিতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রশান্ত কিশোর 'ব্র্যান্ড মোদী' সম্পর্কে কথা বলার সময় বলেছিলেন ২০২৪ সালে ভোট প্রধানমন্ত্রী মোদীর পক্ষে না বিপক্ষে, ভোটাররা তাঁর আদর্শ, তাঁর কাজের ধরন, তিনি কী করেছেন, কী করেননি তা নিয়েও যেমন আলোচনা করবেন ঠিক তেমনই ২৪-এর লোকসভা ভোট কেবল যে 'মোদীর' নামেই হবে তা স্পষ্ট।
বিরোধী দল সংক্রান্ত এক প্রশ্নে প্রশান্ত কিশোর বলেন, 'ভারতে বিরোধী দল দুর্বল নয়। আমরা অনেকেই মনে করি যে মোদী গত ১০ বছরে একতরফাভাবে কাজ করেছেন। কিন্তু এটি সত্য নয়। বিরোধীদের কাছে অন্তত তিনটি সুযোগ ছিল যখন তারা প্রধানমন্ত্রী মোদীকে কোণঠাসা করতে পারত। কিন্তু বিরোধীরা সেই সুযোগকে কাজে লাগায়নি। তারা বিজেপিকে তৃতীয় মেয়াদে ফিরে আসার সুযোগ দিয়েছে'।
প্রশান্ত কিশোর বলেন, 'ধরে নেওয়া যাক যারা বিজেপির হিন্দুত্বে বিশ্বাস যারা করেন সেই সকল ভোটাররা বিজেপিকে ভোট দেবেন। কিন্তু বিগত লোকসভার নিরিখে ভোট দিতে যাওয়া ১০০ জনের মধ্যে মাত্র ৩৮ জন বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। বাকি ৬২ জন মোদীর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। অর্থাৎ, এরা সেই সব ভোটাররা হিন্দুত্ব সত্ত্বেও, সংগঠন সত্ত্বেও, শক্তি থাকা সত্ত্বেও, বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। এখন চ্যালেঞ্জ হলো এই সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬২ শতাংশ ভোটারকে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ করব। হিন্দুত্বকে কীভাবে মোকাবেলা করা যায় তা ভেবে সময় নষ্ট করা উচিত না'।
রামমন্দির নির্মাণ কী বিজেপির ভোট বাড়াতে সাহায্য করবে? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রশান্ত কিশোর বলেন, 'অবশ্যই মন্দির নির্মাণ বিজেপি কর্মী, সমর্থক, ভোটারদের জন্য বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে। সম্ভবত ভোটের শতাংশ বেশি হবে। কিন্তু এমন ভোটার আছেন যারা মন্দির নির্মাণের কারণেই বিজেপিকে ভোট দেবেন না। এপ্রসঙ্গে ৩৭০ ধারা বাতিলের কারণে মন্দিরের তুলনায় অনেক ভোটার বিজেপির পক্ষে এসেছেন বলেও উল্লেখ করেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। তবে রাম মন্দির অবশ্যই স্টেরয়েডের মত কাজ করবে। তবে এর ফলে বেশি ভোট পাবে বিজেপি এমন কোন মানেই নেই'।
তিনি বলেন, 'বিজেপি যখন ৫৫ শতাংশ হিন্দুদের সমর্থন পাবে তখন তার সনাতন ধর্ম এবং হিন্দু রাষ্ট্রের ডাকে মনোযোগ দেওয়া শুরু করবে বিজেপি। এটা করতে হলে অন্তত ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ হিন্দু ভোট দরকার'। এতে কমপক্ষে ২০-৩০ বছর সময় লাগতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
'ধর্মনিরপেক্ষ' শব্দে বিরোধীদের লাভ হচ্ছে না কারণ বিরোধীরা সঠিক সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে না। সাধারণ নির্বাচনের নয় মাস আগে (বিরোধীরা) ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স গঠন করেছিলেন। সর্বোপরি, এই জোট দুই বছর আগেও বা বাংলার নির্বাচনের পরপরই তৈরি হতে পারত। এতে বিরোধীরা বাড়তি সুযোগ পেতে পারত। তিনি বলেছিলেন যে ২০২৩ সালের জুনে ইন্ডিয়া জোটের প্রথম বৈঠকের পর থেকে এখন পর্যন্ত একটিও জনসভা করেননি বিরোধীরা।
প্রশান্ত কিশোর বলেছেন যে 'নীতীশ কুমার এনডিএ-তে যোগ বিজেপিকে লোকসভায় বিহারে বেশি আসন হারাতে হবে, কারণ এখন তাদের নীতীশ কুমারের সঙ্গে বিজেপিকে আসন সমঝোতা করতে হবে। কারণ ওরা জানে নীতীশ কুমারকে ছাড়া বিহারে রাজনীতি সম্ভব নয়। তবে নীতীশের এনডিএ-তে যোগ দেওয়া যে ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্সের কাছে এক বড় ধাক্কা সেকথা উল্লেখ করেছেন তিনি'।