'কেন্দ্রে এবং আমাদের রাজ্যে শুধুমাত্র বামপন্থীরাই জনবিরোধী, দমনমূলক এবং অগণতান্ত্রিক সরকারকে প্রতিহত করতে পারে। আমাদের ডিওয়াইএফআই কর্মীরা এই রাজ্যে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে প্রতিদিন লড়াই করছে। আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই এবং আপনাদের লড়াইয়ের সাফল্য কামনা করি। এই সম্মেলনের সকল প্রতিনিধিদের জন্য শুভ কামনা।' দলের যুব মোর্চার একাদশ সম্মেলনে এটিই ছিল পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বার্তা।
কমতে কমতে বিধানসভায় আসন সংখ্যার নিরিখে এখন শূন্য সিপিএম। তবে, পুর ও বালিগঞ্জ উপনির্বাচনের ফলাফলে সামান্য ভোট বড়েছে এই বাম দলটির। আর তাতেই ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করেছে আলিমুদ্দিনের নেতারা। দলের কর্মীদের তাই আরও উৎসাহিত করতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেই ফের মাঠে নামাল বঙ্গ সিপিএম। ডিওয়াইএফআই সম্মেলনে বার্তা দিলেন বুদ্ধদেববাবু। বিবাহ
২০১১ সালে রাজ্য়ে পালাবদলের পর থেকে বেশিরভাগ সময়ই লাইমলাইট থেকে দূরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু, ২০১৯ সালে ব্রিগেডে গিয়ে দলীয় কর্মীদের অনুপ্রাণিত করা থেকে ২০২১ সালের ভোটের আগের সমাবেশে এই প্রবীণ বাম নেতার অডিও বার্তা শোনানো হয়।
সিপিএম কর্মীদের মতে, স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বামেদের জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু একজন আইকনিক নেতা ছিলেন যিনি তিন দশক ধরে রাজ্য পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। বুদ্ধবাবু ২০০০ সালে রাজনীতি থেকে সরে আসার পরে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিপিএম এর মুখ হিসাবে আবির্ভূত হন। তাঁর নেতৃত্বে, বামফ্রন্ট ২০০১ এবং ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে স্বাচ্ছন্দ্যে জয়লাভ করে।
দলের এক প্রবীণ নেতার কথায়, 'তাঁর দূরদর্শী বিবৃতি, সরল জীবন, সাংস্কৃতিক পটভূমি, এবং সৎ ইমেজ বুদ্ধবাবুকে জ্যোতি বসুর নিখুঁত বিকল্প হতে সাহায্য করেছিল। সিপিএমে অনিল বিশ্বাস, বিমান বোস, সূর্যকান্ত মিশ্রদের মতো নেতাদের দেখেছে, কিন্তু এযাবৎ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যেরর মতো নেতা বিরল।'
সিপিএম নেতৃত্বের অনেকেই বিশ্বাস করেন যে বসু বা ভট্টাচার্যের মতো জনপ্রিয় নেতাদের খুঁজে পেতে ব্যর্থতার ফলেই দলের পতন ঘটেছে। দলের এক নেতা বলেন, 'বুদ্ধবাবুর শুধু একজন সাধারণ ও সৎ নেতা। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন। তাঁর সময়ে আইটি শিল্প ক্রমশ সাফল্যের মুখ দেখেছিল। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের প্রস্তাবিত শিল্পের জেরে তরুণ প্রজন্ম আশা করেছিল যে রাজ্যে ক্রমশ শিল্পের উত্তোরণ ঘটবে, পাল্টে যাবে পরিস্থিতি। কিন্তু, তা হয়নি। তবুও, বেশিরভাগ বাঙালি বিশ্বাস করে যে বুদ্ধবাবুর রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃষ্টি এবং সততা ছিল। অন্য কোনও সিপিএম নেতার সেই বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।'
ক্ষত ভরাটে দলটি তরুণ নেতাদের সামনে আনছে। কিন্তু এখনও তাতে খুব সফল ধরা দেয়নি। গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে, সিপিএমের যুবরা দলের প্রার্থীপদের ৬০ শতাংশ ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামে ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় লড়াই করেছিলেন। কিন্তু দলের বেশিভাগ যুব প্রার্তীই হেরে গিয়েছিল৷ একুশের ভোটে বামেরা একটি আসনও জিততে পারেনি।
কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গের সময়, বামপন্থী যুব কর্মীরা রেড ভলান্টিয়ার্স নামে একটি দল গঠন করেছিল। যা সর্বত্র প্রশংসা অর্জন করেছে। বিশেষত সোশাল মিডিয়ায়। রেড ভলান্টিয়ার্সদেরই রাজ্যব্যাপী পুরোভোটে প্রার্থী করেছিল বামরা। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের বিশ্লেষণ, দলটিতে জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসযোগ্য মুখ না থাকায় এই পরাজয়।
সিপিএমের একজন যুব নেতা বলেন, 'যখন ভট্টাচার্যের মতো কোনও নেতা নেই, তখন শুধু নতুন মুখ আনাই যথেষ্ট নয়। দলের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে, আমাদের এখনও বুদ্ধবাবুই ভরসা। তিনি পদ্মভূষণ প্রত্যাখ্যান করার পর, একজন কমিউনিস্ট নেতা হিসেবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বেড়েছে।'
নবনির্বাচিত ডিওয়াইএফআই-এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য বলেন, 'আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে কখনও ভুলিনি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আমাদের প্রথম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ১৯৬৭ সালে, যখন চারটি যুব সংগঠন একত্রিত হয়ে ডিওয়াইএফআই গঠন করে, তখন তিনি আমাদের নেতা ছিলেন। তাই আমরা তাকে ভুলতে পারি না। তিনি আমাদের শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের পথ দেখিয়েছিলেন। সন্দেহ নেই যে তাঁর বার্তা আমাদের অতিরিক্ত শক্তি যোগাবে।'
বাম প্রতিদ্বন্দ্বীদের মতে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ফের রাজনৈতিক মঞ্চে ফিরিয়ে আনা, কার্যত সিপিআইএমের রাজনৈতিক দেউলিপনার লক্ষণ এবং স্পষ্ট করে যে এই দলে কোনও তরুণ নেতা নেই যে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য এবং রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, '২০১১- পর থেকে সিপিআইএম এই মুহূর্তে কোনও আইকনিক নেতা নেই। এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে সিপিআইএমের শেষ আইকনিক নেতা হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাই, সিপিআইএম ভেবেছিল যদি তারা বুদ্ধবাবুর বার্তা প্রকাশ্যে আনতে পারে তাহলেই দালের কর্মীরা অনুপ্রাণিত হবে।'
বিজেপি নেতা শমিক ভট্টাচার্যের কথায়, 'সিপিএম সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক দখল করার জন্য গত বছর থেকে মরিয়া হয়ে উটেছে। তারা পদক্ষেপ অনেকটাই পক্ষপাতমূলক এবং সাম্প্রদায়িক। এতেই ফলাফল যা হওয়ার হয়েছে।'
Read in English