যে অস্ত্রে শান দিয়ে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বাজিমাত করতে চাইছে বিজেপি, সেই অস্ত্র ভোতা করতে সরাসরি আক্রমণ শানালেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এবার আর আড়ালে নয়, ভোট যুদ্ধের লড়াই মুখোমুখি। কিন্তু নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে নিজের নাম প্রার্থী হিসাবে কেন ঘোষণা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো? বিজেপি বধে নন্দীগ্রামে প্রার্থী হিসাবে নিজের নাম নিজে ঘোষণা করে মমতা বুঝিয়ে দিলেন লড়াইয়ের ময়দানে তাঁর ঝাঁঝ বিন্দুমাত্র কমেনি। এছাড়া দলীয় নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে তাঁর এই আগাম ঘোষণা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সামনে থেকে তিনি যে এখনও লড়াই করতে পারেন তা ফের জানান দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এবারের বিধানসভা নির্বাচনে জীবনপন বাজি রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি বাংলা দখলে সাঁড়াশি আক্রমণ করলেও তৃণমূল নেত্রী যে ছাড়ার পাত্রী নন সেকথা সোমবার নন্দীগ্রামের জনসভায় তাঁর ঘোষণা স্পষ্ট করে দিয়েছে। তিনি এদিনের জনসভায় নিজেই নিজের নাম নন্দীগ্রামে বিধানসভা আসনের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে দিলেন। এর মাধ্যমে শুভেন্দুসহ তামাম বিজেপি নেতৃত্বকে কড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী।
আরও পড়ুন- মাস্টারস্ট্রোক মমতার, এবার ভোটে নন্দীগ্রামের প্রার্থী তৃণমূল সুপ্রিমো
নন্দীগ্রামের আন্দোলন ২০১১-তে রাজ্যে পরবির্তন আনতে তৃণমূল কংগ্রেসকে সাহায্য করেছিল। তখন সেখানে প্রার্থী করা হয়েছিল শহিদের মা ফিরোজা বিবিকে। ২০১৬-তে প্রার্থী হন শুভেন্দু অধিকারী। সম্প্রতি শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে পদ্ম শিবিরে সামিল হন। বিজেপিতে যোগ দিয়ে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দু। সভা-সমাবেশে তিনি চ্যালেঞ্জ করতে থাকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এবার লড়াই সম্মুখ সমরে।
নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার পিছনে একাধিক কারণ আছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এবারের লড়াই তৃণমূল কংগ্রেসের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। বিজেপির কাছেও এটাই বাংলা জয়ের সেরা সুযোগ। তারওপর তাঁর অন্যতম সেনাপতি এখন বিজেপি শিবিরে। শুভেন্দু অধিকারীও নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নন্দীগ্রামকে কেন্দ্র করেই বিজেপি ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে ঝাঁকুনি দিতে চাইছে। সেক্ষেত্রে নন্দীগ্রামকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কতটা গুরুত্ব দেন তা স্পষ্ট করলেন নিজে থেকে ঘোষণা করে প্রার্থী হতে চেয়ে। নন্দীগ্রামের আন্দোলনের কথা নানা ভাবে স্মরণ করিয়ে নিজে যে আবেগান্বিত হয়ে পড়েছেন তা বলতেও ভোলেননি মমতা। লড়াই এবার সরাসরি।
দল ছাড়ার পর থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল ২০২১ নির্বাচনে নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী প্রার্থী হবেন না। বলা হচ্ছিল অন্য বিকল্প আসন খুঁজছেন শুভেন্দু। যদিও এবিষয়ে শুভেন্দু এখনও কোনও জবাব দেননি। তিনি আগেই ঘোষণা করেছিলেন, তৃণমূল নেত্রী নন্দীগ্রামে জনসভা করার পর দিন তিনি সভা করে জবাব দেবেন। আগামিকাল ১৯ জানুযারী শুভেন্দু খেজুরিতে পাল্টা সভা করবেন। সেখানে জবাব দেবেন।
আরও পড়ুন- ‘ভয় পেয়েছেন মমতা’, কড়া আক্রমণ বাম-বিজেপির
শুভেন্দু দল থেকে চলে গেলেও কোনও ক্ষতি হবে না বলেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণায় এটাও স্পষ্ট শুভেন্দুকে নিয়ে মাথা-ব্যাথা রয়েছে তৃণমূলের। বরং এবার সরাসরি শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। লড়াই এবার আর বাকযুদ্ধে নয়। সরাসরি রাজনীতির ময়দানে। শুভেন্দুও যদি নন্দীগ্রামে বিজেপির প্রার্থী হিসাবে থেকে যান তাহলে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন ইতিহাস তৈরি করবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
সাধারনত বিধানসভা নির্বাচনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী একে অপরকে এড়িয়ে চলেন। একই কেন্দ্রে প্রার্থী হন না। ২০১১ নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে বামেদের থেকে এগিয়ে রাখতে সাহায্য করেছিল নন্দীগ্রাম। এবার রাজ্যের ক্ষমতা কার হাতে থাকবে তা ভোট দিয়ে নির্ধারণ করতে চলেছে নন্দীগ্রাম। তাই কলকাতা থেকে গ্রামীণ এলাকায় চলে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রথম কলকাতার বাইরে প্রার্থী হচ্ছেন তৃণমূলনেত্রী। লড়াই এবার সম্মুখ সমরে। গান্ধীজির উক্তি মাঝে-মধ্যেই মমতা দিয়ে থাকেন- 'করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে'।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন