তাঁর মুসলিম "তোষণ" নীতি নিয়ে প্রায়শই সরব হয়ে থাকেন গেরুয়া শিবিরের সদস্যরা। "জয় শ্রীরাম" ধ্বনি শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া নিয়েও অনেক জল ঘোলা হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। সেই কারণেই কি অযোধ্যা মামলার রায়দান প্রসঙ্গে এখন অবধি নিশ্চুপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
তাঁর দলের অন্যান্য নেতারা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মোকাবিলা করতে আপাতত চূড়ান্ত ব্যস্ত তিনি। অন্যদিকে তাকানোর সময় নেই। ওদিকে সূত্রের খবর, দুদিন আগে এক দলীয় বৈঠকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের অযোধ্যা সম্পর্কে কোনোরকম মন্তব্য করতে নিষেধ করে দেন মমতা। তাঁর বক্তব্য ছিল, দলের তরফে কিছু বলতে হলে তিনিই বলবেন।
অযোধ্যা জমি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার কয়েক ঘন্টা পরেই টুইটারে মমতা লেখেন, "বাংলার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাবে সাইক্লোন বুলবুল। রাজ্য প্রশাসন চব্বিশ ঘন্টা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। কোনোরকম আপৎকালীন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। বিশেষ কন্ট্রোল রুম বসানো হয়েছে, মোতায়েন করা হয়েছে এনডিআরএফ-এসডিআরএফ বাহিনী। স্কুল, কলেজ, ও আঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে, এবং বিপন্ন উপকূলবর্তী এলাকা থেকে ১ লক্ষ ২০ হাাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।"
তবে অতীতে নোট বাতিল অথবা জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ করা নিয়ে যে তীব্রতা ও দ্রুততার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তিনি, সেই প্রেক্ষিতে এই দীর্ঘ নীরবতা কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে বইকি।
অযোধ্যা সম্পর্কে তাঁর মতামত জানতে চাইলে এক শীর্ষস্থানীয় তৃণমূল নেতার বক্তব্য, "ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে রাজ্য। গোটা প্রশাসন লড়ছে তা নিয়ে।"
সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে মন্তব্য করাটা অবশ্য তৃণমূলের পক্ষে এই মুহুর্তে কিঞ্চিৎ অস্বস্তিকর। অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের রায়কে স্বাগত জানালে ভেঙে পড়তে পারে মমতার দীর্ঘদিনের মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক। অন্যদিকে হিন্দুত্ব ভাঙিয়ে রাজ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। হঠাৎই দুর্গার নানা রূপের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছেন রামও। অতএব এই রায়ের সমালোচনাও নিশ্চিন্তে করতে পারছে না তৃণমূল। তাতে রাজনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা।
দলের অন্দরমহলের এক সূত্রের কথায়, "অযোধ্যা ইস্যুতে সাবধানে পা ফেলতে হবে আমাদের। আমরা এই রায়কে স্বাগত জানালে, বা চুপ করে থাকলেও, আমাদের মুসলিম ভোটাররা অসন্তুষ্ট হবেন। আবার নিন্দা করলে ফের মুসলিম তোষণের অভিযোগ উঠবে। কংগ্রেস যথেষ্ট ব্যালান্সড বিবৃতি দিয়েছে। এটাও হতে পারে যে এত দীর্ঘ রায় পড়ে যথাযথ প্রতিক্রিয়া দিতে কিছুটা সময় নিচ্ছে দল। অন্যরা কে কী বলল, তাও দেখে নিচ্ছে।"
লোকসভা নির্বাচনে রাজ্য বিজেপির আসন সংখ্যা দুই থেকে এবছর ১৮ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই হিন্দুদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে আগের তুলনায় আরও একটু দৃশ্যমান হয়ে উঠেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তা বিভিন্ন মন্দিরেই হোক বা দুর্গা পূজার প্যাণ্ডেলে। নিজের বাড়িতে কালীপূজা দীর্ঘদিন ধরেই করছেন তিনি, যদিও এবছর রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের উপস্থিতি সেই পুজোয় অন্য মাত্রা যোগ করে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, একদা শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা তাঁর হিজাব পরিহিত, বা রেড রোডে ঈদের নামাজ পড়ার ছবির স্মৃতি কিছুটা হলেও মুছে ফেলতে চাইছেন মমতা।