এবারের পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত নির্বাচনের অনেকগুলি অর্থপূর্ণ সূচকের মধ্যে একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্দল প্রার্থীদের চোখে পড়ার মত প্রদর্শন। এমন কী, জয়ী বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস প্রার্থীদের সংখ্যাও ছাপিয়ে গিয়েছে জয়ী নির্দল প্রার্থীর সংখ্য়া। এ নিয়ে এখন আর বিতর্কের কোনও অবকাশ নেই যে এই জয়ী প্রার্থীরা তৃণমূল কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। বোর্ড গঠনে এঁরা যে শাসকদলের সঙ্গ দেবেন তা নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই। এখন প্রশ্ন, ঘোর সঙ্কটের সময় কৌশল বদল করে সিপিএম বা অন্যান্য বাম দলগুলির সদস্যরা কেন অন্য কোনও প্রতীকের সাহায্যে নির্দল হিসেবে দাঁড়ালেন না, যাতে জয়ী হলে তাঁরাও বামেদের হয়ে বিশেষ ভূমিকা নিতে পারতেন, ভোট পরবর্তীতে নজর কাড়তে পারতেন। কিন্তু বাস্তবে তা তো হয়ই নি, বরং তৃণমূল বিরোধিতা করতে গিয়ে বামেদের একটা বড় অংশ বিজেপিকে সমর্থন করেছে।
ভোটের আগেই হেরে গিয়েছে বামফ্রন্ট, এই হলো অভিজ্ঞ মহলের সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্দল হয়ে নির্বাচনী লড়াইতে থাকলে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে সুবিধা পেত পারত বামেরা। নির্বাচনী রণকৌশল বদল করতে পারত সিপিএম-সহ বাম শরিকরা। কিন্তু কমিউনিষ্টরা চিরকাল যেখানে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে লড়াই করেছে, সেক্ষেত্রে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নির্দল হয়ে লড়াই করতেও ভয় পেয়েছে দলের নেতা-কর্মীরা। বাংলায় বাম সংগঠন যে একেবারেই ধংসের পথে তা বলার অপেক্ষা রাখে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন, পঞ্চায়েতে ঘাসফুলে পদ্মকাঁটার খোঁচা, শক্তিহ্রাস হাত-কাস্তের
ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর এ রাজ্যে বামেদের কঙ্কালসার চেহারা ক্রমশ প্রকাশ পেয়েছে। এই পঞ্চায়েত নির্বাচন সম্ভবত স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলো, যে বামেরা নিজেরাই নিজেদের রাজনৈতিক পুনর্বাসন সম্পর্কে সন্দিহান। বিশেষজ্ঞদের মত, যে কোনও প্রতীক নিয়ে নির্দল প্রর্থী হিসাবে দাঁড়াতে পারত বামেরা। প্রয়োজনে দলের সঙ্গে সম্পর্ক সাময়িক ভাবে ছিন্নও করতে পারত। দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীকে বহিষ্কার করতে অতীতে প্রয়াত নেতা সুভাষ চক্রবর্তীকেও ব্য়বহার করা হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন। সেভাবে জিতে আসা ওই নির্দল প্রার্থীরা বামেদের সাহায্য় চাইতে পারত। কিন্তু মুখে লড়াইয়ের কথা বললেও, একটা স্তরের বামকর্মীরা একেবারে হতোদ্য়ম হয়ে পড়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যাঁরা আজ দলীয় নেতৃত্বের বিরোধিতায় সরব, তাঁরাও নির্দল হওয়ার কথা ভাবেননি একবারও।
তবে সিপিএম নেতারা মনে করছেন, এই পন্থা নেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। রাজ্য় সিপিএম নেতা কল্লোল মজুমদারের দাবি, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় যে ভাবে আক্রমন করা হয়েছে বিরোধীদের, তাতে প্রার্থী হওয়াই সম্ভব ছিল না। লড়াই হয় প্রতীকে। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, "দলের কয়েকজন নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছেন। তবে সেটা কোনও কৌশল নয়। আমরা চেয়েছি রাজনৈতিক ভাবে লড়াই করতে। তাছাড়া, জয়ের পর তাঁরা যে দলে আসবেনই তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। এই রাজ্য়েও জনপ্রিতিনিধি কেনা-বেচা চলেছে।"