Advertisment

কেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর উপরে পূর্ব উত্তর প্রদেশের ভার?

পূর্ব উত্তর প্রদেশেরই কুশীনগরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন বুদ্ধ। এখানকারই খলিলাবাদের মঘর এলাকায় আমৃত্যু বাস করেছিলেন কবির দাস।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Priyanka Gandhi

প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নবকর্মভূমির সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক অতি প্রাচীন

গত সপ্তাহে কংগ্রেস সক্রিয় রাজনীতির মাঠে নামিয়ে দিয়েছে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদরাকে। তাঁর ময়দান পূর্ব উত্তর প্রদেশ। এখানকারই সারা ভারত কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তিনি। ভারত জয়ের যুদ্ধে এখানকার ভূমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অবলম্বন।

Advertisment

পূর্বই কেন্দ্র

২০১৪ সাল থেকেই পূর্ব উত্তর প্রদেশ বিজেপির রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা নিয়ে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের রাজ্য গুজরাটের বাইরে তাঁর ভোটে দাঁড়ানোর দ্বিতীয় আসন বেছে নিয়েছেন এই পূর্ব উত্তর প্রদেশের বারাণসীকে, যে বারাণসী দেশের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে অন্যতম এবং আধুনিক হিন্দুত্ব ও ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের ধ্বজাধারী। এখানেই রয়েছে মণিকর্ণিকা ঘাট, হিন্দু বিশ্বাসমতে যেখানে দাহ হলে স্বর্গবাস ঘটে। রয়েছে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, যাকে অ্যাকাডেমিক ঐতিহ্য এবং রক্ষণশীল গৌরবের দুর্গ বলে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এখানে রয়েছে গঙ্গা, এবং রয়েছে জ্ঞানবাপী মসজিদ, যা আরেক বিতর্কিত ধর্মস্থান হিসেবে সংঘের অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়।

আরও পড়ুন, ন্যূনতম আয় নিয়ে রাহুলের ঘোষণা: সময় ও তাৎপর্য

বিজেপি এখান থেকেই তুলেছে বেনারসের পূর্ব দিকে অবস্থিত গোরখনাথ মন্দিরের মহান্ত যোগী আদিত্যনাথকে। ২০১৭ সালে ব্যাপক জয়ের পরে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করে বৃত্ত সম্পূর্ণ করেছে তারা।

কিন্তু এসবই বৃত্তের বাইরের দিক। অযোধ্যাও এখানেই। যেখানে বিজেপি রাম মন্দির বানানোর অ্যাজেন্ডা সম্প্রতি স্পষ্ট করে দিচ্ছে। বিজেপির পক্ষে এই এলাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তার উদাহরণ হল, এখানেই যোগী অর্ধ কুম্ভের নামান্তর ঘটিয়ে কুম্ভ করেছেন, তার আগে এলাহাবাদের নাম করেছেন প্রয়াগরাজ।

পূর্ব উত্তর প্রদেশেরই কুশীনগরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন বুদ্ধ। এখানকারই খলিলাবাদের মঘর এলাকায় আমৃত্যু বাস করেছিলেন কবির দাস।

কংগ্রেসের পুরনো যোগাযোগ

প্রিয়াঙ্কার যে কর্মভূমি তাঁর দল স্থির করেছে তা একদিকে যেমন তাঁর কাছে সুযোগ, তেমনই তা এক চ্যালেঞ্জও বটে। এ জায়গার সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক পুরনো। রায় বেরিলি কিংবা আমেথিতে তো ফিরোজ গান্ধীর সময় থেকেই দল ভোটে লড়ে আসছে। তা ছাড়াও এলাহাবাদ ছিল জওহরলাল নেহরুর আসন।

এই পুরনো কসমোপলিটন শহরকে ঘিরেই উত্তর ভারতে রূপ পরিগ্রহ করেকংগ্রেস, যে দলে যোগ দিয়েছিলেন আইনজীবী, চিকিৎসক এবং অন্যান্য সেই সব ঘরানার মানুষজন, যাঁরা প্রথমে ব্রিটিশদের মত জীবনযাপন করতেন এবং তারপর ব্রিটিশরাজকে উৎখাত করার প্রকল্পে যোগ দিলেন।

পূর্ব উত্তর প্রদেশের কৃষক বিদ্রোহ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ইন্ধন জুগিয়েছিল, যার ভিত্তিতে এবং কংগ্রেস সোশালিস্ট পার্টির প্রচ্ছন্ন মদতে গড়ে ওঠে সারা ভারত কিষাণ সভা।

১৯৩৬ সালের কিষাণ ইশতেহারে জমিদারি প্রথা বিলোপ এবং গ্রামীণ ঋণ বাতিলের দাবি জানিয়েছিল। ১৯৩৭ সালের অক্টোবর মাসে এই সংগঠন তাদের ব্যানার হিসেবে গ্রহণ করে লাল ঝান্ডাকে।

১৯২২ সালে যে চৌরিচৌরা বিদ্রোহের জেরে ২২ জন পুলিশ কর্মীর প্রাণহানি ঘটে সে এলাকাও বর্তমান গোরখপুরের অন্তর্গত। এই ঘটনার পরেই মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন।

এসপার নয় ওসপার

২০১৯ সাল যদি দেশের দুই বৃহৎ দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণকারী হয়, তাহলে তার অনেক কিছুরই সাক্ষী থাকবে এই পূর্ব উত্তর প্রদেশ, যেখানে অনেকের ভাগ্যই পরীক্ষিত হবে। মোদী এবং যোগী দুজনেই চাইবেন, ভারত সম্পর্কে তাঁদের যা ধারণা, উত্তর প্রদেশে তার ছাপ রাখতে। অন্যদিকে নবতম গান্ধী রয়েছেন তাঁর নয়া শক্তি ও কৌশল সহযোগে।

কংগ্রেসের জন্য এ সংগ্রাম উত্তর প্রদেশের, যেখানে বাজির সংখ্যা অনেক। মহাজোট দেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাততালি দেওয়া নয়, এ লড়াই সংখ্যা ছাড়িয়ে।

গঙ্গা-যমুনার সঙ্গম না কি প্রয়াগরাজ- কী হবে এবার?

Read the Full Story in English

Priyanka Gandhi Explained CONGRESS
Advertisment