গত সপ্তাহে প্রয়াগরাজের ধর্ম সংসদে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে। তারা জানিয়েছে, আগামী ৪ মাস, অর্থাৎ লোকসভা ভোট না মেটা পর্যন্ত রাম জন্মভূমি ইস্যুতে কোনও নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে না। এ সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল, এবং লোকসভা ভোটে এ সিদ্ধান্ত কী কী ভাবে প্রভাব ফেলবে তা একবার দেখে নেওয়া যাক।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ যে কারণ দেখিয়েছে
পরিষদের বক্তব্য, রাম মন্দির ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে যাতে ব্যবহার না করা হয়, সেটাই তাদের উদ্দেশ্য। বলা হয়েছে, "নির্বাচন মানে গণতন্ত্রের উৎসব... সন্ত সমাজ চান না সিউডো সেকুলাররা পবিত্র শ্রী রামজন্মভূমি আন্দোলনকে রাজনৈতিক জলার ঘূর্ণিতে নিয়ে ফেলুক। ফলে আমরা এখন এই আন্দোলনের কোনও নতুন পর্যায়ের কথা ঘোষণা করছি না।"
এ সিদ্ধান্ত কি অবাক করার মতো?
এ সিদ্ধান্ত হঠাৎই গৃহীত। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ যদিও তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে কারণ দেখিয়েছে। কারণ হিসেবে অযোধ্যার ৬৭ একর জমি ফেরানোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের পিটিশনের কথা বলেছে তারা।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাদের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা না করা পর্যন্ত যথেষ্ট চাপে ছিল বিজেপি। আরএসএস নিজেই যথেষ্ট চাপ দিয়েছে বিজেপির ওপর। গত ১৮ অক্টোবর নাগপুরে বিজয়া দশমীর দিন বার্ষিক অনুষ্ঠানে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত সরকারকে রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে আইন প্রণয়নের ব্য়াপারে বিজেপি সরকারকে ভাবনা চিন্তা করতে বলেন। তিনি ছাড়াও বেশ কয়েক জন এই দাবি তুলেছিলেন। তাঁর মধ্যে ছিলেন সংঘপ্রধান ভাইয়াজিও। সরকারের ৬৭ একর জমি ফেরানোর দাবি বিজেপি এবং আরএসএস, দু পক্ষেরই মুখ রেখেছে।
এর ফলে বিজেপির ভোট প্রচারে কী সুবিধে হতে পারে?
ভোট প্রচারের মধ্যে রামমন্দিরের দাবি নিয়ে লড়াই সংঘ পরিবারের কর্মীদের বিভাজনের মুখে ঠেলে দিতে পারত। এর ফলে অস্বস্তির মুখে পড়তে হত বিজেপিকে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বিজেপির উপর চাপ অনেকটাই সরিয়ে দিয়েছে। ধর্ম সংসদে ভগবত বলেই দিয়েছেন, "আগামী দিনে আমরা যে কর্মসূচিই নিই না কেন, ভোটে তার প্রভাব পড়বেই।"
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষে এ সিদ্ধান্তের অর্থ কী?
সার সত্যি বলে যেটা মনে হচ্ছে, তা হল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এ ভোটে বিজেপিকে সমর্থন করবে এবং ভোট মিটলে ফের মন্দির ইস্যু তুলবে তারা। এখন পরিষদে এমন কোনও নেতা নেই, যিনি বিজেপির সঙ্গে লড়ে যেতে পারেন। অশোক সিংঘল মারা গিয়েছেন, প্রবীণ তোগাড়িয়াকে পরিষদ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া পরিষদ কর্মীরাও এখন শিবির বিভক্ত।
সংঘ পরিবারের নেতৃত্বের সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের সম্পর্ক
অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এন ডি এ সরকারের সময়ে সিংঘল সহ বিভিন্ন পরিষদ নেতারা বারবার প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন। সরসংঘচালক সুদর্শন এমনকি এও বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে কিছু অকর্মণ্য ব্যক্তি বসে রয়েছেন।
এখনকার সংঘ পরিবারের কোনও নেতাই বর্তমান সরকার বা বিজেপি নেতৃত্বকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না। একমাত্র আরএসএসের শাখা সংগঠন ভারতীয় মজদুর সংঘের নেতা কেসি মিশ্র ২০১৫ সালে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গরিবি শব্দের মানেই জানেন না। এর কয়েক মাস পরেই তিনি 'ছুটিতে চলে যান', এবং তারপর থেকে তিনি ভুবনেশ্বরে 'বিশ্রামে' রয়েছেন।
Read the Full Story in English