প্রধানমন্ত্রী এত বেশি বক্তৃতা করেন যে তার সবগুলো বিশ্লেষণ করা অসম্ভব। সুতরাং, গত সপ্তাহে তিনি যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দিয়েছেন তাতে প্রাপ্য মনোযোগ দেওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। তার একটিতে তিনি আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে পচন ধরেছে, সেই ব্যাপারে বলেছেন। দ্বিতীয়টিতে তিনি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম বক্তৃতাটি দেশের সাধারণ নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রথম বক্তৃতা সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে মোদি করেছেন। সেখানে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের ধরতে ভয় না-পাওয়ার জন্য তিনি সিবিআই কর্তাদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে মোদী বলেন, 'দুর্নীতি কোনও সাধারণ অপরাধ নয়। উন্নয়নের পথে এটি বাধা। দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি এবং একটি রাজবংশীয় ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করে। যা গোটা জাতির শক্তিকে ক্ষয় করে। উন্নয়নকে মারাত্মকভাবে বাধাপ্রাপ্ত করে।' অনুষ্ঠানে মোদী বারবার বোঝাতে চেষ্টা করেছেন যে দেশের সমস্ত বিরোধী দলগুলোকে বংশবাদী গণতন্ত্রই ধ্বংস করছে।
উলটোদিকে আমাদের বিরোধী দেশবাসীকে বিশ্বাস করাতে চান যে তাঁরাই স্বৈরাচারী সময়ে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। আমাদের সমস্ত প্রধান রাজনৈতিক দল, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত, কার্যত প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। এমনটাই মোদীর অভিযোগ। তাঁর অভিযোগের কারণ, এই সব দলের মাথায় শুধুমাত্র নেতার পরিবারের সদস্যরাই রয়েছেন। যা কার্যত সামন্ততন্ত্র, গণতন্ত্র নয়। যদিও বিজেপিতেও এমন বংশানুক্রমিক নেতার সংখ্যা যথেষ্ট। সেই ব্যাপারে অবশ্য বক্তৃতায় মোদী কোনও রা কাড়েননি। তবে, বক্তৃতায় তিনি বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে তিনি এমনই একজন নেতা, যাঁর জনপ্রিয়তা এতটাই অপ্রতিরোধ্য যে বিরোধীদের কাছে তা ভীতিজনক। আর, সেই জন্যই বিরোধীরা একত্রে মোদীর বিরুদ্ধে সরব।
আরও পড়ুন- জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি কীভাবে মানুষের স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করে?
মোদী বিরোধীদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করতে পারছেন, কারণ বর্তমানে দেশের কোনও একক বিরোধী দল মোদীকে চ্যালেঞ্জ করতে পারছে না। এদেশের বহু দলেরই প্রকৃতি সামন্তবাদীদের মত। সেই সব দলের সংসদীয় নির্বাচনী এলাকাগুলোয় নেতারা তাঁদের সন্তানদেরকেই প্রার্থী করেন। যেন তা ব্যক্তিগত সম্পত্তি। অবশ্য বামদলগুলো ব্যাতিক্রম। একমাত্র বামেরাই এক্ষেত্রে মোদীর প্রকৃত জবাব হয়ে উঠতে পারতেন। কিন্তু, তারা এখনও বেশ দুর্বল। তারপরও বিরোধীদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যেসব অভিযোগ করেন, সেগুলো বামেদের ক্ষেত্রে খাটে না। আর, তাতেই উঠছে প্রশ্ন। আগামী দিনে বামেরাই কি হতে চলেছে মোদীর জবাব?