"বাংলার মাটিতে বিহারি, অসমীয়াদের নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করতে দেবো না।" শুক্রবার ডায়মন্ড হারবারের গঙ্গার তীর সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের শিলান্যাস করতে এসে এমনটাই বললেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, "হিন্দুত্ব নিয়ে যাঁরা রাজনীতি করছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে বলছি, আগুন নিয়ে খেলবেন না।"
তিনি আরও বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্প রূপায়ণে সহায়তা করছে না। তবুও এমপি ল্যাডস (মেম্বার অফ পার্লামেন্ট লোকাল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট স্কিম) প্রকল্প রূপায়ণে আমি সারা ভারতে প্রথম হয়েছি। এটা ডায়মন্ড হারবার, তথা বাংলার গর্ব। আমি আমার সাংসদ কোটার টাকার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব দিয়েছি নিঃশব্দ বিপ্লবের মাধ্যমে। প্রকল্পটি রূপায়নের জন্যে পঁচিশ কোটি টাকা খরচ করার কথা, সেখানে প্রথম পর্যায়ের সাড়ে বারো কোটি টাকার কাজ আজ থেকে শুরু হচ্ছে।"
ফলক উন্মোচনের সঙ্গে সঙ্গে জায়েন্ট স্ক্রিনে ভেসে ওঠে পর্যটন মানচিত্রের ছবি। হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে দেখেন ভবিষ্যতের রোমাঞ্চকর দৃশ্য। প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী, জেটিঘাট থেকে কেল্লার মাঠ পর্যন্ত ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক বরাবর হুগলি নদীর পাড়ের সৌন্দর্যায়ন নিয়ে কী ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া যায় তা নিয়ে প্রত্যেকের মধ্যে মত বিনিময় হয়। পরিকল্পনা মাফিক নদীর পাড় বিদেশের ধাঁচে তৈরি করা হবে। নদীর পাড় কংক্রিট দিয়ে বাঁধানো হবে। সেখানে পর্যটকদের সময় কাটানোর জন্য থাকবে বসার ব্যবস্থা। সঙ্গে থাকছে পর্যাপ্ত আলো।
এমনভাবে পাড়টি বাঁধানো হবে যাতে কিছু অংশ বেরিয়ে থাকবে নদীর ওপর পর্যন্ত। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন পর্যটকরা। এ ছাড়া কেল্লার মাঠও নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শীতের মরশুমে প্রচুর মানুষ এখানে পিকনিক করতে আসেন। পিকনিক করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পরিকাঠামো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অভিষেক বলেন, "রাজ্য পরিবহন দফতরের সহযোগিতায় কপাট হাট থেকে রাজার তালুক পর্যন্ত ফুটপাথ তৈরী হবে। দশ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ফুটপাথ তৈরী হলেও গঙ্গার পাড়ের ছোট ছোট মন্দির ও হকারদের উচ্ছেদ না করে, গাছ না কেটে সুন্দর করে সাজানো হবে গঙ্গাবক্ষ। সেচ দফতর জমি দিচ্ছে। বদলে যাবে শহরের চেহারা।"
এই প্রসঙ্গে সম্প্রতি গুজরাতে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মুর্তি তৈরির সমলোচনা করে তিনি বলেন, "তিন হাজার কোটি টাকার এই মূর্তি বানিয়ে তাঁকে অসম্মান করা হচ্ছে। তিনি বেঁচে থাকলে মেনে নিতেন না। দেশের বিপিএল তালিকাভুক্ত মানুষের উন্নয়ন করা যেত ওই টাকায়। ওরা এতদিন রামকে নিয়ে রাজনীতি করেছে, এখন বিবেকানন্দ, নেতাজীকে নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে, ভাই-ভাইকে বিভাজন করতে চাইছে।"
এদিনের এই অনুষ্ঠানে অভিষেকের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী, জেলা শাসক ওয়াই রত্নাকর রাও, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শামিমা শেখ সহ স্থানীয় বিধায়ক ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা।