/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/07/cats-51.jpg)
নির্বাচন কমিশন সূত্রে যা খবর, রবিবার শিন্ডে শিবিরে যোগ দেওয়ার আগেই গত ৩০ জুন, দলের রাশ নিজের হাতে টানতে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হন অজিত পাওয়ার।
‘৮৩ বছর হল, আপনি থামবেন না?’ শরদ পাওয়ারকে উপেক্ষার বার্তা ভাইপো অজিতের। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছেন অজিত পাওয়ার। তিনি বলেছেন, ‘আমি পাঁচবার উপ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছি। এটা রেকর্ড… কিন্তু আমি শুধু ডেপুটি সিএম-এ আটকে রয়েছি। আমিও রাজ্যের নেতৃত্ব দিতে চাই এবং মুখ্যমন্ত্রী হতে চাই…! আমি দেখতে পাচ্ছি রাজ্যে দারিদ্র্য বেড়েছে, বেকারত্ব বাড়ছে। সরকারে থেকে এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে। বিরোধী দলে থেকে রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়”।
পাশাপাশি শরদ পাওয়ারের রাজনীতি থেকে অবসরের প্রসঙ্গেও তিনি বার্তা দিয়ে বলেন, “প্রতিটি পেশায় অবসরের বয়স থাকে,আমলাতন্ত্র হোক বা রাজনীতি। বিজেপিতে, অবসরের বয়স ৭৫, আমাদের কাছে এল কে আদবানি, মুরলি মনোহর যোশী এবং অন্যান্যদের উদাহরণ রয়েছে। নতুন প্রজন্ম আমাদের আর্শীবাদ করবেন। আমি যদি কিছু ভুল করে থাকি, আমাকে বলুন, আমি তা মেনে নেব, সংশোধন করব এবং এগিয়ে যাব। শরদ পাওয়ার ৮৩ পার করেছেন, আপনি কি কোন দিন থামবেন না?"
মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে সময় যত এগোচ্ছে, ততই একবছর আগের শিবসেনার ভাঙনের দৃশ্যগুলো পুনরাবৃত্তির মত সামনে চলে আসছে। এবার অবশ্য বিরোধী শিবিরের শিবসেনা নয়। দল ভাঙার জন্য গেরুয়া শিবিরের চাঁদমারি জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পাটি বা এনসিপি। যার অন্যতম শীর্ষ নেতা অজিত পাওয়ার শীর্ষস্থানীয় অন্য নেতাদের নিয়ে গেরুয়া শিবিরে পাশে রবিবারই চলে গিয়েছেন। সরকারে যোগ দিয়েছেন। এবার এনসিপি অধিকারের পালা চলছে। যেখানে অজিতের প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁর অশীতিপর কাকা তথা একসময়ের মারাঠা রাজনীতির ‘পাওয়ারফুল ম্যান’ বলে পরিচিত শরদ পাওয়ার।
জানা যাচ্ছে যে অজিত পাওয়ারের গোষ্ঠীর লোকজন আগে তারও আগে থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রেখেছিলেন। গত ৩০ জুন, তাঁরা এক প্রস্তাবে শরদ পাওয়ারকে সরিয়ে অজিত পাওয়ারকে এনসিপির নেতা নির্বাচিত করেছেন। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশনের সূত্রে প্রকাশ যে অজিত পাওয়ার ৩০ জুন নির্বাচন কমিশনকে চিঠি লিখেছিলেন, যাতে তাঁর দলকেই আসল এনসিপি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কমিশনের কাছে তিনি দলের প্রতীক চেয়েও আবেদন জানিয়েছেন সেই সময়ই। নির্বাচন কমিশনকে লেখা চিঠিতে মহারাষ্ট্রের বর্তমান উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত দাবি করেছেন, তাঁর সঙ্গেই এনসিপির সমস্ত বিধায়কদের সমর্থন আছে। বান্দ্রায় দলের ২৯ জন বিধায়কের সকলেই তাঁকে সমর্থন করেছেন। তাঁরা অজিত পাওয়ারের সমর্থনে মুম্বই এডুকেশন ট্রাস্টের সভায় হাজিরাও দিয়েছেন।
শরদ পাওয়ারও হাল ছাড়ছেন না। তিনি যশবন্তরাও বলবন্তরাও চহ্বান অডিটোরিয়ামে এনসিপির পালটা সভা ডেকেছেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত আছেন ১৪ জন এনসিপি বিধায়ক। যে যুক্তিকে সামনে রেখে অজিত পাওয়ারদের প্রতীক ও দলের নাম পাওয়ার বিরোধিতা করেছে শরদ পাওয়ারের গোষ্ঠী। তাঁদের বক্তব্য দলের দুই তৃতীয়াংশ বিধায়কের সমর্থন না-থাকলে আইন অনুযায়ী বিদ্রোহীরা কিছুতেই দলের নাম ও প্রতীক পেতে পারে না।
এনসিপির দুই তৃতীয়াংশ বিধায়কের সমর্থন মানে হল ৩৬ জন বিধায়কের সমর্থন। কিন্তু, অজিত পাওয়ারদের কাছে মাত্র ২৯ জন বিধায়কের সমর্থন আছে। এই পরিস্থিতিতে শরদ পাওয়ার তাঁর অনুষ্ঠানে এনসিপি কর্মীদের নতুন প্রজন্মের নেতা গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। এদিকে অজিত পাওয়ার আরও বলেন, ‘আমি সুপ্রিয়া সুলেকেও বলেছিলাম যে পাওয়ার সাহেবকে বোঝানোর জন্য। কিন্তু, তিনি (অজিত পাওয়ারের মেয়ে সুপ্রিয়া সুলে) আমাকে বলেছেন যে তিনি (শরদ পাওয়ার) একগুঁয়ে। কথা শুনবেন না। সমস্ত বিধায়কদের সমর্থন কিন্তু আমাদের সঙ্গে আছে। এমনকী যে বিধায়করা অন্য বৈঠকে (শরদ পাওয়ারের বৈঠক) গিয়েছেন, তাঁরাও যোগাযোগ করেছেন।’অজিত পাওয়ার শিবিরের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে সভাপতির পদ সহ এনসিপির পুরো কাঠামো ত্রুটিপূর্ণ কারণ দলের সংবিধানের বিধান অনুসারে কোনও নিয়োগ করা হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি বিধায়কদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে শিণ্ডের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা দলের বিধায়কদের মধ্যে অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে। সেই অসন্তোষ চাপা দিতে একনাথ শিণ্ডে আজ শিবসেনা বিধায়ক এবং দলের অন্য নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন নিজের সরকারি বাসভবন বর্ষা বাংলোয়।
আরও পড়ুন: < মরিয়া রাজ্যপাল, ফের বেনজির জোড়া পদক্ষেপ সিভি আনন্দ বোসের >
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে যা খবর, রবিবার শিন্ডে শিবিরে যোগ দেওয়ার আগেই গত ৩০ জুন, দলের রাশ নিজের হাতে টানতে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হন অজিত পাওয়ার। ৩০ জুন নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি চিঠি লেখেন যাতে তার দলকে ‘আসল এনসিপি’ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। রবিবার আট এনসিপি বিধায়কের সঙ্গে একনাথ শিন্ডে সরকারে যোগ দিয়েছেন ইজিত পাওয়ার। শারদ পাওয়ারের দল ইতিমধ্যে বিধায়কদের বিধায়ক পদ খারিজের আবেদন জানিয়ে বিধানসভার স্পিকারের কাছে আবেদন পত্র জমা করেছেন।
অজিত পাওয়ার কমিশনকে জানিয়েছেন, ‘দলের ৪০ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে তাঁর দিকেই’। এনিয়ে ইতিমধ্যে কমিশনে হলফনামাও দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে এনসিপি নেতা জয়ন্ত পাটিল ৯ বিধায়কের বিরুদ্ধে বিধায়কপদ খারিজের বিষয়েও নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি ক্যাভিয়েট দাখিল করেছেন।