Advertisment

গেম চেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে মহিলা সংরক্ষণ বিল, ২৪-এর লোকসভার আগেই মাস্টারস্ট্রোক মোদীর

প্রধানমন্ত্রী মোদী ইতিহাস গড়ার কথা বলছেন, কিন্তু এই বিল দেশের রাজনীতির ভূগোলও বদলে দিতে চলেছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Lok Sabha likely to pass Women's Reservation Bill after discussion today

প্রধানমন্ত্রী মোদী ইতিহাস গড়ার কথা বলছেন, কিন্তু এই বিল দেশের রাজনীতির ভূগোলও বদলে দিতে চলেছে

লোকসভা আজ আলোচনার পরে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাসের সম্ভাবনা। সরকার মঙ্গলবার মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করেছে। বিল অনুসারে সরকার লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে চায়৷ লোকসভায় আজ সকাল ১১টায় বিলটির ওপর আলোচনা শুরু হবে এবং আজ আলোচনার পর বিলটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Advertisment

মঙ্গলবার লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করা হলে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৯ সেপ্টেম্বরকে একটি "ঐতিহাসিক দিন" বলে অভিহিত করেন এবং বিরোধী দলগুলিকে বিলটি পাস করার আহ্বান জানান। মহিলাদের অবদানের কথা তুলে ধরে, প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, মহিলারা দেশের নীতি-নির্ধারণে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে এবং মহিলা সংরক্ষণের বিল বাস্তবায়ন দেশের জন্য একান্তভাবেই প্রয়োজন। ঐকমত্য ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে গত ২৭ বছর ধরে ঝুলে রয়েছে মহিলা সংরক্ষণ বিল।

আজ সকাল ১১টায় মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনার জন্য লোকসভায় সাত ঘণ্টার উইন্ডো থাকবে। বিলটিতে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসনে প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিতর্কের পরে, বিলটি আজ সংসদে পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 'নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়াম' নামের বিলটি লোকসভায় পেশ করেন আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন এই বিল ভারতীয় গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। বিলের প্রস্তাবে বলা হয়েছে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে।

২০০৮ সালের মহিলা সংরক্ষণ বিল, তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার সংসদে প্রবর্তন করেছিল, ২০১০ সালে রাজ্যসভায় পাস হয়েছিল। তবে, এটি অনুমোদন করে আইনে পরিণত হয়নি। ২০১৪ এবং ২০১৯ উভয় লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বিজেপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল এই বিল। বুধবার বেলা ১১ টায় হাউসের বৈঠকে বিলটি আলোচনার জন্য তোলা হবে।

দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে অমীমাংসিত মহিলা সংরক্ষণ বিলের ভাগ্য অবশেষে বদলাতে চলেছে। এইচডি দেবগৌড়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন যা করতে পারেননি, অটল বিহারী বাজপেয়ী আমলে মনমোহন সিং যা করতে পারেননি, তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তা করে দেখালেন। প্রথমবারের মতো বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পথ সহজ হয়েছে। প্রথমবার হাউসে বিল আসার পথে কোনও বাধা ছিল না। নতুন সংসদের প্রথম দিনেই নতুন লোকসভা কক্ষে মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করল মোদী সরকার। এখন বুধবার লোকসভায় এ নিয়ে আলোচনা হবে। বিলটির নাম- নারী শক্তি বন্দন আইন বিল-২০২৩, যার অধীনে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে।

বিলটি ঘোষণা করে, প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'আজকের এই ঐতিহাসিক দিনে, সংসদের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে, আমরা দেশে এই নতুন পরিবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছি। সমস্ত সাংসদদের একত্রিত হওয়া উচিত এবং দেশের নারী শক্তির জন্য নতুন প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত করা উচিত। এই বিল আইনে পরিণত হলে মহিলাদের সংরক্ষণের মেয়াদ হবে ১৫ বছর।

মহিলা সংরক্ষণ বিলের মাধ্যমে, মোদী সরকার ২৪-এর নির্বাচনের আগেই নির্বাচনী ময়দানে একটি মাস্টার স্ট্রোক খেলেছে। এখন প্রশ্ন মোদী কি ২০২৪ সালের নির্বাচনে নারী সংরক্ষণের বাজি দিয়ে তাঁর জয় নিশ্চিত করতে চাইছেন? সরকারের এই সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন, ঐতিহাসিক এবং একটি মাইলফলক। সংসদ ও বিধানসভায় দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'ভগবান এমন অনেক পবিত্র কাজের জন্য আমাকে বেছে নিয়েছেন, আমার সরকার গতকাল (সোমবার) মন্ত্রিসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল অনুমোদন করেছে। সে কারণেই ১৯ সেপ্টেম্বরের এই তারিখটি ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করবে'।

প্রধানমন্ত্রী মোদী ইতিহাস গড়ার কথা বলছেন, কিন্তু এই বিল দেশের রাজনীতির ভূগোলও বদলে দিতে চলেছে। সিএসডিএস তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ২৯% মহিলা ভোট পেয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩৬% মহিলা ভোট পেয়েছিল। ২০২২ সালের ইউপি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৪৬ % মহিলা ভোট পায়

এই প্রবণতা দেখায় যে এই তিনটি নির্বাচনে, সর্বাধিক সংখ্যক মহিলা ভোট বিজেপিতে গিয়েছে এবং এটি সরাসরি বিজেপি তার থেকে ফায়দা তুলেছে। সরকারও তার পরিকল্পনায় মহিলাদের বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে নির্বাচনে এর সুফল পেয়েছে বিজেপি।

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের তথ্য থেকে বোঝা যায়, যেখানে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি ভোট দিয়েছেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে, যেখানে ৬৭.০১ শতাংশ পুরুষ ভোটার ভোট দিয়েছেন। একই সময়ে মহিলাদের ভোটের হার ছিল ৬৭.১৮ শতাংশ। এর মানে হল যে মহিলারা তাদের ভোট সম্পর্কে সচেতন, তাই মোদী সরকার বিশ্বাস করে মহিলা সংরক্ষণ একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

বিলটি কি গেম চেঞ্জার প্রমাণিত হবে?

প্রশ্ন হল মোদী ২০২৪ সালের নির্বাচনে 'মহিলা সংরক্ষণ'বিলকেই কি তুরুপের তাস করে মাঠে নামতে চাইছে? এর জবাব কেবল সময়ই দেবে। তবে মহিলা সংরক্ষণ বিল যে একটি গেম চেঞ্জার হতে পারে। সব দলই এ ব্যাপারে সচেতন, সে কারণেই প্রথমবারের মতো সংসদে এই বিল পেশের সময় কোন বাঁধা ছিল না, বরং ক্রেডিট নেওয়ার প্রতিযোগিতা ছিল। কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী লোকসভায় বলেছিলেন যে রাজীব গান্ধীর সরকার, নরসিমা এবং মনমোহন সিংয়ের সরকার তাদের নিজস্ব উপায়ে বিলটি পাস করার চেষ্টা করে। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, পুরনো বিল শেষ হয়ে গেছে, এই বিল নতুন।

bjp Womens Reservation Bill
Advertisment