লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। সংসদের উভয় কক্ষে এই বিল পাস হলে এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে এই বিল আইনে পরিণত হবে। এই আইন কার্যকর হওয়ার পরে, মহিলারা লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ পাবেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল বলেন, 'সংরক্ষণ পাওয়ার পরে লোকসভায় মহিলা সাংসদের সংখ্যা বেড়ে ১৮১-তে পৌঁছাবে'। সরকারের ডাকা বিশেষ অধিবেশনের আজ তৃতীয় দিন। বিল নিয়ে আজ উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে। তবে এই বিলের কৃতিত্ব নিয়ে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা অব্যাহত রয়েছে। আজ আলোচনায় অংশ নেবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিও।
লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল আলোচনা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, 'এই বিল গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের উন্নয়নে এই বিল আনা হয়েছে'। মঙ্গলবার লোকসভায় পেশ হওয়া মহিলা সংরক্ষণ বিল, বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় আলোচনা হবে। প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা ধরে চলবে আলোচনা। রাজ্যসভা বিএসির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে রাজ্যসভার বিরোধী দলের নেতা এবং কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, 'আমরা ইতিমধ্যেই ২০১০ সালে রাজ্যসভায় (মহিলা সংরক্ষণ বিল) পাস করেছি, কিন্তু কিছু কারণে লোকসভায় বিলটি পাস হয়নি। এটা নতুন বিল নয়। আমার ধারণা নির্বাচনকে সামনে রেখেই বিলকে একটি ইস্যুতে অরিণত করতে চাইছে বিজেপি। কেন্দ্র বলছে আদমশুমারি ও সীমানা নির্ধারণের পর সবকিছু মাথায় রেখে তা বাস্তবায়ন করা হবে। তারা রাজ্যসভায় পাস হওয়া বিলটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। আমরা মহিলা সংরক্ষণ বিলের পক্ষে তবে ত্রুটিগুলি সংশোধন করা উচিত'।
নরেন্দ্র মোদী সরকার মঙ্গলবার ১২৮তম সংবিধান সংশোধনী বিল, ২০২৩ পেশ করেছে। যাতে লোকসভা এবং সমস্ত রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে এসসি/এসটিদের জন্য আসনের এক-তৃতীয়াংশ এবং সাধারণ বিভাগে মোট আসনের এক-তৃতীয়াংশ ‘যতটা সম্ভব’ সংরক্ষিত থাকবে। বিলটি পাস হওয়ার পরে পরিচালিত প্রথম আদমশুমারির ভিত্তিতে আসনগুলো সংরক্ষিত হবে। এই আইনে শুরু থেকেই ১৫ বছরের জন্য মহিলাদের আসন সংরক্ষণকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সংসদকে এই সংরক্ষণ আরও বাড়ানোর ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে।
মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ আসন পুনর্বিন্যাসের পরই কার্যকর হবে। এই আসন পুনর্বিন্যাস হবে মহিলা সংরক্ষণ বিল আইন হওয়ার পর প্রথম আদমশুমারি অনুযায়ী। বুধবার লোকসভায় বিলটি উপস্থাপন করে কেন্দ্রীয় আইন ও বিচারমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল বলেছেন যে একবার পাশ হয়ে গেলে, লোকসভায় মহিলা সাংসদের সংখ্যা বর্তমান ৫৪৩ আসনের বিচারে হবে ১৮১। বর্তমানে সংসদে ৮২ জন মহিলা সাংসদ আছেন।
এই বিল ধারা ৩৩০এ-তে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত করার বিষয়টি যুক্ত করতে চেয়েছে। শুধু তাই নয়, লোকসভায় তফসিলি জাতি এবং উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসনের এক-তৃতীয়াংশও মহিলাদের জন্য রাখার কথা বলেছে। আর, লোকসভায় সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণ করা মোট আসনের এক-তৃতীয়াংশ মহিলাদের জন্য আলাদা করে রাখার কথা বলেছে। বিলটি লোকসভার পাশাপাশি সব বিধানসভাতেও মহিলাদের সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করার জন্য ৩৩২এ ধারা সংশোধনের কথা বলেছে। আর, সংশোধনী অনুযায়ী এসসি/এসটি থেকে সাধারণ, সব ক্ষেত্রেই মহিলাদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণের কথা বলেছে।
বিলটি ধারা ২৩৯এএ-এর ২ ধারায় দিল্লি বিধানসভায় মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের কথা বলেছে। সব জায়গার মত দিল্লি বিধানসভাতেও তফশিলি জাতি-উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত আসনের এক-তৃতীয়াংশ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করার কথা বিলে বলা হয়েছে। বিলটি উত্থাপনের ঠিক আগে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন যে সরকার আইনসভায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য সাংবিধানিক সংশোধনী বিলটি উত্থাপন করছে। এর নামকরণ করা হয়েছে, ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’ (আক্ষরিক অর্থে, নারী শক্তির উপাসনা করার আইন)। সমস্ত, মহিলাদের অভিনন্দন জানিয়ে মোদী সদস্যদেরকে সংশোধনী বিলটি সর্বসম্মতভাবে পাস করার আহ্বান জানিয়েছেন।
মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আজ বিতর্ক, কংগ্রেসের পক্ষে দায়িত্বে সনিয়া। মহিলা সংরক্ষণ বিল, লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ বা এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই ৩৩ শতাংশ কোটার মধ্যে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অনাবাসী ভারতীয়দের জন্য উপ-সংরক্ষণের প্রস্তাবও রয়েছে। বিলে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি লোকসভা নির্বাচনের পর সংরক্ষিত আসনগুলি পরিবর্তন করা উচিত।
লোকসভা আজ আলোচনার পরে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাসের সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার মঙ্গলবার মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করেছে। বিল অনুসারে সরকার লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে চায়৷ লোকসভায় আজ সকাল ১১টায় বিলটির ওপর আলোচনা শুরু হয়েছে এবং আজ আলোচনার পর বিলটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মঙ্গলবার লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করা হলে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৯ সেপ্টেম্বরকে একটি "ঐতিহাসিক দিন" বলে অভিহিত করেন এবং বিরোধী দলগুলিকে বিলটি পাস করার আহ্বান জানান। মহিলাদের অবদানের কথা তুলে ধরে, প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, মহিলারা দেশের নীতি-নির্ধারণে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে এবং মহিলা সংরক্ষণের বিল বাস্তবায়ন দেশের জন্য একান্তভাবেই প্রয়োজন। ঐকমত্য ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে গত ২৭ বছর ধরে ঝুলে রয়েছে মহিলা সংরক্ষণ বিল।
আজ সকাল ১১টায় মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনার জন্য লোকসভায় সাত ঘণ্টার উইন্ডো থাকবে। বিলটিতে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসনে প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিতর্কের পরে, বিলটি আজ সংসদে পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 'নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়াম' নামের বিলটি লোকসভায় পেশ করেন আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন এই বিল ভারতীয় গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। বিলের প্রস্তাবে বলা হয়েছে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে।
২০০৮ সালের মহিলা সংরক্ষণ বিল, তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার সংসদে প্রবর্তন করেছিল, ২০১০ সালে রাজ্যসভায় পাস হয়েছিল। তবে, এটি অনুমোদন করে আইনে পরিণত হয়নি। ২০১৪ এবং ২০১৯ উভয় লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বিজেপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল এই বিল। বুধবার বেলা ১১ টায় হাউসের বৈঠকে বিলটি আলোচনার জন্য তোলা হবে।
দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে অমীমাংসিত মহিলা সংরক্ষণ বিলের ভাগ্য অবশেষে বদলাতে চলেছে। এইচডি দেবগৌড়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন যা করতে পারেননি, অটল বিহারী বাজপেয়ী আমলে মনমোহন সিং যা করতে পারেননি, তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তা করে দেখালেন। প্রথমবারের মতো বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পথ সহজ হয়েছে। প্রথমবার হাউসে বিল আসার পথে কোনও বাধা ছিল না। নতুন সংসদের প্রথম দিনেই নতুন লোকসভা কক্ষে মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করল মোদী সরকার। এখন বুধবার লোকসভায় এ নিয়ে আলোচনা হবে। বিলটির নাম- নারী শক্তি বন্দন আইন বিল-২০২৩, যার অধীনে লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে।
বিলটি ঘোষণা করে, প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'আজকের এই ঐতিহাসিক দিনে, সংসদের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে, আমরা দেশে এই নতুন পরিবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছি। সমস্ত সাংসদদের একত্রিত হওয়া উচিত এবং দেশের নারী শক্তির জন্য নতুন প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত করা উচিত। এই বিল আইনে পরিণত হলে মহিলাদের সংরক্ষণের মেয়াদ হবে ১৫ বছর।
মহিলা সংরক্ষণ বিলের মাধ্যমে, মোদী সরকার ২৪-এর নির্বাচনের আগেই নির্বাচনী ময়দানে একটি মাস্টার স্ট্রোক খেলেছে। এখন প্রশ্ন মোদী কি ২০২৪ সালের নির্বাচনে নারী সংরক্ষণের বাজি দিয়ে তাঁর জয় নিশ্চিত করতে চাইছেন? সরকারের এই সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন, ঐতিহাসিক এবং একটি মাইলফলক। সংসদ ও বিধানসভায় দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'ভগবান এমন অনেক পবিত্র কাজের জন্য আমাকে বেছে নিয়েছেন, আমার সরকার গতকাল (সোমবার) মন্ত্রিসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল অনুমোদন করেছে। সে কারণেই ১৯ সেপ্টেম্বরের এই তারিখটি ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করবে'।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ইতিহাস গড়ার কথা বলছেন, কিন্তু এই বিল দেশের রাজনীতির ভূগোলও বদলে দিতে চলেছে। সিএসডিএস তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ২৯% মহিলা ভোট পেয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৩৬% মহিলা ভোট পেয়েছিল। ২০২২ সালের ইউপি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৪৬ % মহিলা ভোট পায়
এই প্রবণতা দেখায় যে এই তিনটি নির্বাচনে, সর্বাধিক সংখ্যক মহিলা ভোট বিজেপিতে গিয়েছে এবং এটি সরাসরি বিজেপি তার থেকে ফায়দা তুলেছে। সরকারও তার পরিকল্পনায় মহিলাদের বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে নির্বাচনে এর সুফল পেয়েছে বিজেপি।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের তথ্য থেকে বোঝা যায়, যেখানে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি ভোট দিয়েছেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে, যেখানে ৬৭.০১ শতাংশ পুরুষ ভোটার ভোট দিয়েছেন। একই সময়ে মহিলাদের ভোটের হার ছিল ৬৭.১৮ শতাংশ। এর মানে হল যে মহিলারা তাদের ভোট সম্পর্কে সচেতন, তাই মোদী সরকার বিশ্বাস করে মহিলা সংরক্ষণ একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
প্রশ্ন হল মোদী ২০২৪ সালের নির্বাচনে 'মহিলা সংরক্ষণ'বিলকেই কি তুরুপের তাস করে মাঠে নামতে চাইছে? এর জবাব কেবল সময়ই দেবে। তবে মহিলা সংরক্ষণ বিল যে একটি গেম চেঞ্জার হতে পারে। সব দলই এ ব্যাপারে সচেতন, সে কারণেই প্রথমবারের মতো সংসদে এই বিল পেশের সময় কোন বাঁধা ছিল না, বরং ক্রেডিট নেওয়ার প্রতিযোগিতা ছিল। কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী লোকসভায় বলেছিলেন যে রাজীব গান্ধীর সরকার, নরসিমা এবং মনমোহন সিংয়ের সরকার তাদের নিজস্ব উপায়ে বিলটি পাস করার চেষ্টা করে। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, 'সংসদে আনা এই বিল একেবারে নতুন'।
মহিলা সংরক্ষণ বিল পাসের উদ্যোগ আসন্ন লোকসভার আগে বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’-কে ভাঙতে মোদী সরাকারের বিরাট কৌশল বলে দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের। কারণ, বিরোধী জোটের বেশিরভাগ দলই মহিলাদের সংরক্ষণের পক্ষে। কিন্তু সমাজবাদী পার্টি এবং আরজেডি চায় ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের মধ্যে জাতি ও সম্প্রদায় ভিত্তিক কোটা। এছাড়াও, ইস্তেহারে দেওয়া মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতিও মোদী সরকার পালন করেছে বলে দাবি করতে পারবে বিজেপি।