এশিয়ান যোগাসন ফেডারেশনে সোনা জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করল বছর দশেকের ছোট্ট সৃজা। হুগলির মানকুন্ডু মহাডাঙ্গা কলোনির বাসিন্দা সুশান্ত সাহা। পেশায় তিনি ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। তাঁর ছোট মেয়ে সৃজাই এবার বাংলার গর্বের মুখ। চন্দন নগর কাশীশ্বরী পাঠশালার চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী সৃজা। সেই সৃজাই এবার শিরোনামে। দক্ষিণ কোরিয়ায় আয়োজিত এশিয়ান যোগাসনের নবম সংস্করণে প্রতিযোগিতায় সুযোগ পেয়েছিল সৃজা। আর সেখানেই এশিয়ার তাবড় তাবড় প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে দেশকে সোনা এনে দিল।
২৬ অগাস্ট দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিল সৃজা। আর টুর্নামেন্টে বিজয়ী হয়ে দেশে ফিরেছে শুক্রবারেই। সৃজার এই সাফল্যে আপাতত মানকুন্ডুতে খুশির হাওয়া। এলাকার বিভিন্ন বিশিষ্ট মানুষ যেমন নিয়মিত সৃজার বাড়িতে আসছেন শুভেচ্ছা জানাতে। তেমনই ক্রীড়ামহলের অনেকেই সৃজার সাফল্যে বেশ খুশি।
কীভাবে ছোট্ট সৃজা এশিয়া-জয় করল? পড়শিরা কৃতিত্বের অনেকটাই দিচ্ছেন সৃজার মা নবনীতা সাহাকে। মায়ের উদ্যোগেই সৃজা ভর্তি হয়েছিল চন্দননগরের ত্রিশক্তি ক্লাবে। গর্বিত মা নবনীতা এদিন বলছিলেন, "সৃজার যখন বছর সাতেকের। সেই সময়ে স্থানীয় একটি ক্লাবে যোগাসন প্রতিযোগিতা দেখতে গিয়েছিলেন। ভাললাগার সেই শুরু। যোগাসন পুঁচকে সৃজারও বেশ পছন্দ হয়েছিল।" এরপর তিনি ভর্তি করে দেন ত্রিশক্তি ক্লাবে। সেই শুরু। সেই বছরেই সৃজা জেলায় প্রথম হয় যোগাসনে। জেলার পরে রাজ্যতেও প্রথম হয়। জাতীয় পর্যায়ে দশম স্থান পেয়েছিল। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি সৃজাকে।
আরও পড়ুন International Yoga Day 2019: রাঁচিতে যোগাসনে নরেন্দ্র মোদী
প্রশিক্ষক অমিত দাসের তত্ত্বাবধানে আরও উন্নতি লাভ করতে থাকে সৃজা। তবে উপমহাদেশীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করার সুযোগ এসেছিল এবারেই। অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেলেও অবশ্য কোরিয়ায় যাওয়া নিয়ে বিস্তর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল সাহা-পরিবারকে। দক্ষিণ কোরিয়ায় অংশগ্রহণ করার জন্য় প্রয়োজন ছিল প্রায় দেড় লাখ টাকার। দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে সেই টাকার অভাবে অংশগ্রহণই ভেস্তে যেতে বসেছিল। তবে সৃজার পিতা সুশান্ত বাবুর ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসেন স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত বিদ্যালয় শিক্ষক, শৈলেন ভড়। তাঁর অর্থানুকুল্য়েই সৃজার দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি দেওয়া। যদিও পরে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। ক্রীড়ামন্ত্রী লক্ষীরতন শুক্ল নিজে পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করেন।
বাড়িতে গেলে হাসিখুশি সৃজাকে দেখা যায় রীতিমতো ট্র্যাকশ্যুট পড়ে বিছানায় পদক সাজিয়ে বসে রয়েছে। সাফল্যের গল্প শোনাচ্ছে পুঁচকে। এশিয়া চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে সৃজার পরবর্তী লক্ষ্য আপাতত জাতীয় পর্যায়ে পুনরায় প্রথম হওয়া। কানপুরে ন্যাশানাল মিটের পরেই সৃজা চলে যাবে মালয়েশিয়ায়।
জানা গিয়েছে, খুব শীঘ্রই সৃজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসবেন স্থানীয় বিধায়ত ইন্দ্রনীল সেন। এলাকার সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও আসতে পারেন। সৃজার মা অবশ্য বিধায়ককে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। বলে দেন, ইন্দ্রনীলবাবু সাহায্য না করলে সৃজা এতদূর পৌঁছতেই পারত না।