কেলেঙ্কারির ১০ বছর পার। চুক্তিপত্র অনুযায়ী, পেমেন্ট সংক্রান্ত বিবাদের এখনও ৫০টি মামলা ঝুলছে। ৭ কোটি টাকা সালিশীকারীদের প্রদান করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর ৪০ কোটি টাকা মূল্যের এরোস্ট্যাট নয়াদিল্লিতে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, শ্রীলঙ্কা যার জন্য আবেদন করেও পায়নি। গত ৩ অক্টোবর, ২০১০ সাল নয়াদিল্লিতে ১৯তম কমনওয়েলথ গেমসের ১০ বছরপূর্তি আজ। কিন্তু ঠিক এক দশক পর সেই কেলেঙ্কারির দাগ মুছতে পারেনি সরকার। এখনও দুর্নীতির ছাপ রয়ে গিয়েছে নয়াদিল্লিতে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের করা আরটিআইয়ে ফাঁস সেই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আইনি জটিলতা ১০ বছর পরেও তাড়া করে বেড়াচ্ছে সরকারকে। বকেয়া টাকা নিয়ে আরটিআইয়ের জবাবে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রক জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন আদালতে অভিযোগকারীদের ৫০টির মতো মামলা ঝুলে রয়েছে। এই তথ্য চলতি বছরের ২৭ জুলাই পর্যন্ত। গত ৯ সেপ্টেম্বরের আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রক মামলার সর্বমোট আর্থিক হিসাবে প্রকাশ করেন। কিন্তু ৩১ জুলাইয়ে করা আরেকটি আরটিআইয়ের জবাবে মন্ত্রক জানিয়েছে, এবছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত মামলাকারীদের ৬.৯২ কোটি মিটিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। তবে আধিকারিকদের ভাষায়, প্রায় ৭০০ কোটি টাকার মতো চুক্তি ছিল।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জুলাই এবং আগস্ট মাসে বেশ কয়েকটি আরটিআই আবেদন করে ক্রীড়ামন্ত্রক ও স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার কাছে। গেমসের জন্য যা যা কেনা হয়েছিল এবং পেমেন্ট সংক্রান্ত পরিস্থিতি জানার জন্য। তার উত্তর মেলে জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে। কেলেঙ্কারির আরেক নিদর্শন, ৪০ কোটি টাকা মূল্যের এরোস্ট্যাট অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে দিল্লির জহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে। এই হিলিয়াম বেলুন গেমসের উদ্বোধনী ও সমাপ্তি অনুষ্ঠানে স্টেডিয়ামে প্রদর্শিত হয়। সাই জানিয়েছে, ওই জিনিসটি কমলওয়েলথ গেমসের উদ্যোক্তা কমিটির সম্পত্তি। যার মাথায় ছিলেন সুরেশ কলমাডি।
কমিটির সিইও জার্নেল সিং দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মাহিন্দা রাজাপক্ষে, যিনি সমাপ্তি অনুষ্ঠানের অন্যতম মুখ্য অতিথি ছিলেন, ওই এরোস্ট্যাটটি চেয়েছিলেন। এটিকে ডিআরডিওকে নেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা এটা নিতে চায়নি। তাই জন্য এরোস্ট্যাটটি একটি কন্টেনারে ভরে স্টেডিয়ামেই রেখে দেওয়া হয়েছে। যে সমস্ত ভেন্ডরদের মামলা এখনও আদালতে ঝুলে রয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে সুইস টাইমিং। তাদের সঙ্গে ১৩৫.২৭ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল। এবং নুসলি ইন্ডিয়ার সঙ্গে ১৪০ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিলে গেমস কমিটির। কেবিন, কন্টেনার, তাঁবু-সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ছটি গেমস ভেন্যুতে সরবরাহ করেছিল নুসলি ইন্ডিয়া। ইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে ৩৪৬ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল। ২০১১ সালে ক্যাগ রিপোর্টে চুক্তির টাকার কথা প্রকাশ্যে আসে।
আরটিআইয়ের জবাবে মন্ত্রক জানিয়েছে, কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে সংস্থাগুলিকে। বাকি টাকার জন্য মামলা আদালতে চলছে। মামলার নিষ্পত্তি হলেই বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে। ক্যাগ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৯.৮০ কোটি টাকা খরচে ৩,৩০২টি ডেস্কটপ, ল্যাপটপ কেনা হয়েছিল এবং ভাড়ায় নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে সেগুলি বিভিন্ন সরকারি দফতর, মন্ত্রকে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেগুলির পরিস্থিতি কী তা জানে না ক্রীড়ামন্ত্রক। হেঁশেলের সামগ্রী ভারতীয় সেনা অ্যাকাডেমিতে পাঠানো হয়েছিল। ক্যাগ রিপোর্ট অনুযায়ী, লন্ডন থেকে সেই সামগ্রীগুলি বিমান করে আনা হয়েছিল ৮.৫৯ কোটি টাকা খরচে।
উল্লেখজনক ভাবে ক্যাগ রিপোর্টে বলা হয়েছিল, গেমসের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ২০০৩ সালের মে মাসে ২৯৭ কোটি টাকা মঞ্জুর করে। কিন্তু ২০১০ সালের অক্টোবরে সেই খরচ গিয়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকায়। যদিও ক্রীড়ামন্ত্রক আরটিআইয়ে সেই সংক্রান্ত প্রশ্নের কোনও জবাব দেয়নি। এরোস্ট্যাটেরও কী করা হবে তাও জানায়নি মন্ত্রক।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন