বয়স কেবল মাত্র একটা সংখ্যা মাত্র। আর এই প্রবাদ বাক্যই প্রমাণ করেই ছাড়লেন চুঁচুড়া শিবতলার প্রবীণ নাগরিক অশোক পাইন। বয়স ৮০ ছাড়িয়েছে কবেই। বর্তমান বয়স ৮৩।
আশির কোটা পেরোলেও তাঁর খেলাধুলার প্রতি টান রয়েই গিয়েছে শৈশবের মতোই। যে বয়সে লোকে বার্ধক্যে জর্জরিত হয়ে গৃহবন্দি হয়ে যান, সেই বয়সে এই প্রবীণ ব্যক্তি জাতীয় স্তরে টেবিল টেনিস টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন করতে সম্প্রতি কাশ্মীর যাচ্ছেন।
পেশায় চ্যাটার্ড একাউন্টেন্ট অশোক পাইন একটা সময় চাকরি করতেন ফিলিপস ইন্ডিয়া লিমিটেডের বাল্ব ডিভিশনে । সেখানে একাউন্ট সেকশনে এসিস্টেন্ট এডমিনিষ্ট্রেটর অফিসার পদে। দীর্ঘ ৩৮ বছর চুটিয়ে কাজ করেছেন। অবসর নেওয়ার পর ফিরে এসেছেন যৌবনের সেই প্রিয় স্পোর্টস টেবিল টেনিসে।
আরও পড়ুন: বিদেশি কোচ প্রায় চূড়ান্ত ইস্টবেঙ্গলে! ভারতে কোচিং করিয়ে যাওয়া দুজনের মধ্যেই হবে চূড়ান্ত বাছাই
ঘর ভর্তি মেডেল আর কাপ। আসলে শুরুটা হয়েছিল সেই স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার পর অবসরকালীন ছুটিতে। চুঁচুড়া শিবতলার বাড়িতে বসে জানালেন নিজের সেই অতীতের কথা। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলছিলেন, "আমার বাবা করুণাময় পাইন ছিলেন চুঁচুড়ার বিখ্যাত ডিউক ক্লাবের সচিব। তখনকার দিনের ফার্স্ট ক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন বাবা। স্কুল ফাইনাল দেওয়ার পর তাঁরই অনুপ্রেরণায় আমি ডিউক ক্লাবে টেবিল টেনিসে ভর্তি হই। যতদিন না চাকরি পেয়েছি ততদিন চুটিয়ে টিটি খেলেছি। শুধু খেলেছি বললে ভুল হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে প্রচুর প্রাইজ নিয়ে এসেছি। পড়াশোনা শেষে কর্মক্ষেত্রে যখন জয়েন করেছিলাম তখন খেলাধুলা ছেড়ে দিই। কিন্তু অবসর নেওয়ার পর সময় কাটানোর জন্য ফিরে যাই সেই টেবিল টেনিসের জগতে।"
এখনও প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ম করে ঘন্টা দুয়েক ডিউক ক্লাবে টেবিল টেনিস খেলেন তিনি। বর্তমানে হুগলি জেলা টেবিল টেনিস এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট অশোক বাবুর কোন সন্তান নেই। বিরাট দোতলা পৈতৃক বাড়িতে স্ত্রী সুমিতা কে নিয়ে থাকেন। তিনি আরও জানালেন, "টেবিল টেনিস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া গত ২০০০ সাল থেকে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপের সূচনা করে। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই টুর্নামেন্ট হয়। আমি প্রথম থেকেই এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহন করি। শুধু করোনার জন্য একবছর বাদ গেছে। আমি প্রতিবারই ফার্স্ট নয় সেকেন্ড হই। একবার গোল্ড মেডেল ও পেয়েছিলাম। সিঙ্গলস, ডাবলস, মিক্স ডাবলস , টিম ইভেন্ট , বিভিন্ন পর্যায়ে এই টুর্নামেন্ট হয়। আর এবার এই টুর্নামেন্ট হচ্ছে আগস্ট মাসে শ্রীনগরে।"
আর সেই টুর্নামেন্ট খেলার জন্য এই বয়সেও কঠোর প্র্যাকটিস চালিয়ে যাচ্ছেন অশোক বাবু। আমি খেললে ফিট থাকি। শারীরিক এবং মানসিক ভাবে। এরজন্য অবশ্যই মানসিক ভাবে আমার স্ত্রী কে কাছে পাই। তাঁর উৎসাহেই আমি আরও উজ্জীবিত হই, জানান 'অশীতিপর তরুণ" অশোক পাইন।